নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২২ মার্চ, ২০২৪

পোশাকপ্রতি দাম বেড়েছে ৫০০-৭০০ টাকা

পোশাকের দামে আগুন

পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে নগরীর বিভিন্ন শপিং মল ও ফ্যাশন হাউস প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। এসব শপিং মল ও ফ্যাশন হাউস ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে নানা ধরনের পোশাক সাজিয়ে রেখেছে। সন্ধ্যার আলোয় এসব পোশাক আরো জাঁকজমক হয়ে ওঠে। ঈদ বাজারে মেয়েদের গুজরাতি, আলিয়া কাট, নায়রা কাট, আফগান ড্রেস বিক্রিতে বেশ সাড়া ফেলছে। তবে গত বছরের চেয়ে এবার পোশাকপ্রতি দাম বেড়েছে ৫০০-৭০০ টাকা। ক্রেতারা বলছেন, নিত্যপণ্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এবার ঈদের পোশাকেও আগুন লেগেছে।

রোজার শুরুতে মার্কেটগুলোয় ক্রেতার আনাগোনা কম ছিল। তবে ১০ রোজার পর থেকে জমতে শুরু করেছে বাজার। ইফতারের পর থেকে ক্রেতাদের আনাগোনা বাড়তে থাকে। এর মধ্যে অনেকে আসছেন পছন্দের পণ্যটি কেনার জন্য। তবে এখনো ঈদের অনেক সময় বাকি থাকায় অনেক ক্রেতা মার্কেট ঘুরে পছন্দের পোশাক খুঁজে বেড়াচ্ছেন বলে জানান।

সরেজমিনে গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর নিউমার্কেট, গুলিস্তান, মৌচাক ও রাজধানী সুপার মার্কেট ঘুরে ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত দুই বছরের তুলনায় এবার পোশাকপ্রতি ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা বেড়েছে। বিশেষ করে পাঞ্জাবি, জিনস প্যান্ট ও থ্রি-পিসের দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে।

বর্তমানে মার্কেটগুলোয় মোটামুটি মানের একেকটি পাঞ্জাবি বিক্রি হচ্ছে সর্বনিম্ন ৭০০-৮০০ টাকা। আর কিছুটা ভালো মানের পাঞ্জাবি কিনতে ক্রেতাদের গুনতে হচ্ছে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত। বিশেষ করে মেয়েদের কাছে পছন্দের ড্রেসের মধ্যে সুতি ও জর্জেট থ্রি-পিস বিশেষ জায়গা দখল করেছে। এ ছাড়া গুজরাতি, আলিয়া কাট, নায়রা কাট, আফগান ড্রেস বিক্রিতে বেশ সাড়া ফেলছে। সুতির থ্রি-পিস ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে শুরু। জর্জেট থ্রি-পিস সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লেহেঙ্গার মধ্যে তিন হাজার টাকা থেকে শুরু করে পাঁচণ্ডছয় হাজার টাকা দামি লেহেঙ্গাও পাওয়া যাচ্ছে। তবে ইন্ডিয়ান লেহেঙ্গার দাম সবচেয়ে বেশি।

ব্যবসায়ীরা পোশাকের দাম বেশ বেড়েছে স্বীকার করে বলেন, এখনো পুরোপুরি ঈদের বাজার জমে ওঠেনি। শেষ সময়ের ঝামেলা এড়াতে ক্রেতা এখনই ঈদের কেনাকাটা করলেও মার্কেটে তেমন চাপ নেই। কিন্তু আগামী সপ্তাহের দিকে পুরোপুরি ঈদের বাজার জমে উঠবে বলে অধিকাংশ ক্রেতা দাবি করেন। মৌচাক মার্কেটের শান ফ্যাশন হাউসের স্বত্বাধিকারী আবু সফিয়ানা বলেন, গতবারের চেয়ে এবার সব ধরনের পোশাকের দাম অনেক বেশি। দেশি পোশাকের ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা বাড়লেও সবচেয়ে বেশি আমদানি করা পোশাকের দাম বেড়েছে।

এদিকে শাড়ির মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, রাজধানী মার্কেটে বিভিন্ন দামের নানা ক্যাটাগরির শাড়ি রয়েছে। এর মধ্যে টাঙ্গাইলের সর্বনিম্ন ৫০০ টাকায় তাঁত প্রিন্ট শাড়ি রয়েছে। এ ছাড়া টাঙ্গাইলের কাতান, বেনারসি ও জামদানির শাড়ি বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার থেকে শুরু ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত।

নিউমার্কেটের চন্দ্রিমা মার্কেটের টাঙ্গাইল শাড়ি ঘরের বিক্রয়কর্মী মো. রায়হান বলেন, ‘ঈদের বাজার হিসেবে এবার এখনো তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে গত কয়েক বছরের তুলনায় বেশ ভালো বেচাকেনা হয়েছে। দামের দিক থেকে আমাদের কাছে সর্ব নিম্ন ৫০০ থেকে ১০ হাজার টাকার টাঙ্গাইলের শাড়ি পাওয়া যায়। বিশেষ কর মধ্যবয়সি নারীরা আমাদের এসব শাড়ির ক্রেতা।’

এ ছাড়া রাজধানীর নিউমার্কেটের পাঞ্জাবির বাজার ঘুরে দেখা যায়, মার্কেটে ৫০০ থেকে শুরু করে বিভিন্ন দামের পাঞ্জাবি বিক্রি হচ্ছে। সাদা সুতির পাঞ্জাবি, স্যামসন কটন, প্রিন্টের পাঞ্জাবি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। আর ১ হাজার ৫০০ টাকার বেশি দামের বিক্রি হচ্ছে সিকোয়েন্স ও কাতান পাঞ্জাবি। তবে অধিকাংশ ক্রেতা হাজারের মধ্যে পাঞ্জাবি কিনছেন বলে বিক্রেতারা জানান।

তবে মার্কেটে আসার অধিকাংশ ক্রেতার অভিযোগ, প্রকৃত অর্থে পোশাকের দাম যতটা বেড়েছে, তার থেকে বেশি দামে ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছেন। যার ফলে এবার একেবারে মানহীন পাঞ্জাবির দামও ১ থেকে দেড় হাজার টাকা হাঁকাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

রাজধানীর মহাখালী থেকে নিউমার্কেট পাঞ্জাবি কিনতে আসা জামিরুল ইসলাম বলেন, ‘গতবার যে পাঞ্জাবি কিনেছি ৬০০ টাকায়, এবার সেই মানের পাঞ্জাবি দাম হাঁকানো হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা। আমাদের মতো নিম্নআয়ের মানুষের পক্ষে এত দাম দিয়ে পাঞ্জাবি কেনা কোনোভাবেই সম্ভব না।’

টিকাটুলী থেকে আসা মহসীনা খানম বলেন, গত বছর সুতি কাপড়ের যে থ্রি-পিস কিনেছি ১ হাজার টাকার মধ্যে। এবার সেটি কিনতে খরচ করতে হচ্ছে ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা। মহসীনার মা খাদিজা বেগম বলেন, শাড়ির দামও একইভাবে বাড়ানো হয়েছে। তিনি আরো বলেন, এবার গরিব মানুষের পক্ষে নতুন পোশাক কিনে ঈদ করা কঠিন হয়ে পড়বে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close