আবদুল বাছিত বাচ্চু, মৌলভীবাজার

  ২২ মার্চ, ২০২৪

মৌলভীবাজারে মনু নদী

পাহাড়ি ঢলে ফসল ক্ষতির শঙ্কা

* পাড় রক্ষা কাজে ধীরগতি * ৯৯৬ কোটি ২৮ লাখ টাকার প্রকল্প * বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৪ প্যাকেজের কাজ চলমান

মৌসুমি বৃষ্টি-বাদলের দিন এগিয়ে আসছে। মৌলভীবাজার জেলার মনু নদীর দুই তীরজুড়ে বাসিন্দাদের মাঝে বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। জেলার প্লাবন ভূমিতে প্রায়ই আগাম বন্যা হয়। এখানে এপ্রিল ও মে মাসে বন্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সদর, রাজনগর ও কুলাউড়া উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ বন্যার আতঙ্কে ভুগছেন। তাদের ভয়, উজানে পাহাড়ে প্রবল বর্ষণের কারণে এই বুঝি ধেয়ে আসছে ঢলের বিলাশ জলরাশি। এদিকে মনু নদীর বন্যা প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের হাজার কোটি টাকার প্রতিরক্ষা বাঁধের কাজ চলছে ধীরগতিতে। এতে ক্ষুব্ধ মনুপাড়ের মানুষ। এ নিয়ে বাড়ছে ক্ষোভণ্ডবিক্ষোভ। বড় বিক্ষোভ করার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।

পাউবো সূত্রে জানা যায়, মৌলভীবাজার জেলার সদর, রাজনগর ও কুলাউড়া উপজেলাকে বন্যা ও নদীভাঙন মুক্ত রাখতে ২০২০ সালের ২১ জুন ৯৯৬ কোটি ২৮ লাখ টাকার এই বৃহৎ প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন হয়। এরপর বিভিন্ন সময়ে দরপত্র আহ্বান করা হয় কাজের। এ প্রকল্পে কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর, হাজীপুর, পৃথিমপাশা ও টিলাগাঁও ইউনিয়নে ২৮টি প্যাকেজের কাজ রয়েছে। যার মোট চুক্তি মূল্য ৩০৭ কোটি টাকা। ২৮টি প্যাকেজের মধ্যে স্থায়ী তীর-প্রতিরক্ষা কাজের ২০টি, চর অপসারণ কাজের ৪টি এবং বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ পুনরাকৃতীকরণ কাজের ৪টি প্যাকেজের কাজ রয়েছে।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, মনু নদীর কুলাউড়া অংশের পৃথিমপাশা ইউনিয়নের ধলিয়ার বেলেরতল, কলিরকোনা, রাজাপুর এলাকায় ২০২০-২১ অর্থবছরে শুরু হওয়া বেড়িবাঁধে মাটি ও ব্লকের কাজ পায় মেসার্স আরাধনা এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স জামান কনস্ট্রাকশন (জেভি)। ২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর কার্যাদেশ দিয়ে ২৮ তারিখে কাজ শুরু করে ২০২২ সালের ৩০ অক্টোবর কাজ শেষ করার কথা থাকলেও গত বৃহস্পতিবার এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ১০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। কাজের শুরু থেকেই কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতি করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রকল্পের তিন বছর অতিবাহিত হলেও কাজ চলছে কচ্ছপ গতিতে। সরকারের এই বৃহৎ প্রকল্পে উপজেলার অন্যান্য স্থানে কাজ ৬০-৭০ শতাংশ হলেও পৃথিমপাশার এই তিনটি স্থানে কাজ স্থগিত রয়েছে। কাজের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বার বার তাগিদ দিলেও কোনো কর্ণপাত করেনি। একের পর এক অজুহাত দিয়ে কাজের দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হওয়ায় মানুষের দুর্ভোগ বাড়বে।

গত বুধবার কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের মনু নদীর বেড়িবাঁধের কাজে অনিয়ম-দুর্নীতি, ধীরগতির প্রতিবাদ ও কাজ দ্রুত শেষ করার দাবিতে মানববন্ধন করেছে স্থানীয় এলাকাবাসী। দ্রুত কাজ শুরু না করলে তারা বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেবেন বলে জানিয়েছে। তাই অনিতিবিলম্বে কাজ শেষ না করলে তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাওসহ নানা কর্মসূচি পালন করবেন বলে ঘোষণা দেন। বুধবার দুপুরে উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের মনু নদীর তীরবর্তী রাজাপুর গ্রামে এ মানববন্ধনের আয়োজন করেন স্থানীয় এলাকাবাসী।

পৃথিমপাশা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কবির উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং সাবেক ইউপি সদস্য আব্বাছ আলীর পরিচালনায় বক্তব্য দেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা সিপিবির সভাপতি আবদুল লতিফ, উপজেলা ক্ষেত-মজুর সমিতির নেতা প্রভাষক সৈয়দ মোশারফ আলী, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আকদ্দস আলী, উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক ফুয়াদ আলম চৌধুরী, প্রভাষক তোফায়েল তালুকদার, পৃথিমপাশা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সদস্য সচিব আবদুল মুনিম সোহেল, ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম, সমাজসেবক হাবিবুর রহমান, মাসুক আহমদ, সুমন হোসেন সাব্বির, হবিব মিয়া, রিন্টু দে প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, ২০১৮ সালে মনু নদীর ভয়াবহ বন্যায় কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর, হাজীপুর, পৃথিমপাশা ও টিলাগাঁও ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক গ্রামের প্রায় দুই সহস্রাধিক মানুষের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং হাজার হাজার একর ফসলি জমি নদীর পানিতে তলিয়ে যায়। বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি বাড়লে প্রতিরক্ষা বাঁধ, নদী আর গ্রাম বন্যার জলে একাকার হয়ে যায়, ক্ষতি হয় জমির ফসল ও গাছ-গাছালি। তাই আকাশে ঘনকালো মেঘ দেখলে এ এলাকার লোকজনের দিন কাটে আতঙ্কে। যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মনু নদীর পাড় মেরামতের কাজ বাস্তবায়ন না করা যায় তাহলে নদীভাঙনের হুমকিতে রয়েছে ৪ ইউনিয়নের দেড় লক্ষাধিক মানুষ।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আরাধনা এন্টারপ্রাইজের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সাত্তার বলেন, পৃথিমপাশার আলীনগর এলাকায় জিওব্যাগ তৈরির কাজ শেষ করেছি। পর্যাপ্ত বরাদ্দ না পেলে কীভাবে ব্লক তৈরির কাজ করব। বিল না পাওয়ায় কাজে ধীরগতি হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাবেদ ইকবাল বলেন, সরকারের এই বৃহৎ প্রকল্পের ৭২টি প্যাকেজের মধ্যে অনেক স্থানে কাজ শেষ পর্যায়ে। পৃথিমপাশা ইউনিয়নের তিনটি স্থানে কাজ দ্রুত শেষ করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত ২৫% কাজ সমাপ্ত হয়েছে। একটি প্রতিষ্ঠানের কাজ পুরোপুরি বন্ধ আছে। রমজানের পরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করতে রাজি হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close