ক্রীড়া প্রতিবেদক

  ০৮ মার্চ, ২০২৪

ক্রীড়াঙ্গনে নারীদের বাধা পেরোনোর গল্প

আজ আন্তর্জাতিকে নারী দিবস। পুরুষদের পাশাপাশি নারীর ভূমিকা সমাজ-সভ্যতার অগ্রযাত্রার ইতিহাসে সমান্তরাল। সমাজের বিভিন্ন স্তরে সাফল্য পাওয়া নারীদের সংখ্যা দিন দিন আমাদের দেশে বাড়ছে। একজন নারী পিছিয়ে থাকা অন্য নারীকে পথ দেখিয়ে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সমাজের অন্য সব ক্ষেত্রের মতো ক্রীড়াঙ্গনের নারীরাও নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করছেন।

নারী দিবস প্রসঙ্গে দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশের মহিলা ক্রিকেটের পেস বোলার জাহানারা আলম, হ্যান্ডবলের হাবিবা রূপা, সাবিনা খাতুন। পরিবারের মানসিকতা ও পারিপার্শ্বিকতার পরিবর্তন ঘটিয়ে ক্রীড়া ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানো সম্ভব বলে মনে করছেন ক্রীড়া অঙ্গনের নারী তারকারা।

জাহানারা আলম (জাতীয় ক্রিকেট দল)

ক্রীড়াঙ্গনে নারীরা নিশ্চিত পেশা হিসেবে ক্রিকেটকে নিশ্চিন্তে বেছে নিতে পারে উল্লেখ করলেন সাবেক অধিনায়ক, ‘আমি মনে করি ক্রিকেট পেশা হিসেবে এখন অনেক নিরাপদ। দিন দিন আমাদের সুযোগ সুবিধা বাড়ছে। যেকোনো মেয়ে চাইলেই এই পেশায় আসতে পারে। খুলনা থেকে ওঠে আসা জাহানারা পরিবারের কাছ থেকে কোনো বাধা না পেলেও প্রতিবেশীরা নানা কথা বলত। প্রতিষ্ঠিত হয়ে তাদের মুখও বন্ধ করেছেন জাহানারা, ‘পরিবার থেকে আমার কোনো সমস্যা ছিল না। এক্ষেত্রে আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান বলতে পারি। এলাকার কিছু লোকের পাশাপাশি দূরের কিছু আত্মীয়স্বজন প্রশ্ন তুলেছিল, মেয়ে হয়ে কেন ক্রিকেট খেলতে হবে? তবে জাতীয় দলে খেলার পর তাদের প্রতিক্রিয়া পাল্টে যায়। তারা এখন বলে খুলনার সুনাম বাড়িয়েছে জাহানারা।’

জাহানারা মনে করেন মেয়েদের আত্মবিশ্বাস সবচেয়ে বেশি জরুরি, ‘আত্মবিশ্বাসী নারীরা এগিয়ে যাবেই। একটি দিনই নারীদের নয়। আমি মনে করি প্রতিটি দিনই নারীদের হোক। তারপরও আন্তর্জাতিকভাবে একটি দিনকে নারীদের করা হয়েছে, আমি এই দিবসে সকল নারীদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।

রূপা হাবিবা (হ্যান্ডবল খেলোয়াড়)

বাধা পেরোনের গল্প শুনিয়েছেন হ্যান্ডবল জাতীয় দলের খেলোয়াড় রূপা হাবিবা। খেলোয়াড় হয়ে ওঠার পেছনে পরিবারের অসহযোগিতার কথা ওঠে আসে তার কথাতে, ‘শুরুতে তো অনেক সমস্যা হতো। পরিবার কোনোভাবেই মেনে নেবে না আমি হ্যান্ডবল খেলব। তারপরও নিজে সংগ্রাম করে হ্যান্ডবল খেলোয়াড় হয়েছি। তবে ধীরে ধীরে সাফল্য পাচ্ছিলাম, তখন পরিবার ও আত্মীয়-স্বজন সাপোর্ট করা শুরু করে।’

নারীদের উদ্দেশে হাবিবা রূপা বলেছেন, ‘বাধাকে বাধা মনে করে থেমে গেলে নিজেদের জায়গা নারীরা করে নিতে পারবে না। যেকোনো কাজে বাধা আসবেই। সেই বাধা নিজের দক্ষতা দিয়ে দূর করতে হবে।’

মেয়েদের স্বাবলম্বী হওয়ার উপায় হিসেবে ক্রীড়া একটি ভালো উপায় হতে পারে বলে মনে করেন তিনি, ‘মেয়েদের স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য খেলাধুলা ভালো একটি উপায় হতে পারে। আমি মনে করি পরিবারের সমর্থন ও নিজের ইচ্ছার মাধ্যমে ভালো খেলোয়াড় হওয়া সম্ভব। স্বাবলম্বী হওয়ার মাধ্যমে একজন নারী নিজের পরিচয় সমাজের কাছে তুলে ধরতে পারে।’

সাবিনা খাতুন (জাতীয় ফুটবলার)

পরিবেশ ও মানুষের সংকীর্ণ মানসিকতার কারণে দেশের নারীরা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে বলে মনে করেন সাবিনা খাতুন। প্রথম বাংলাদেশি মহিলা ফুটবলার হিসেবে দেশের বাইরে লিগ খেলেছেন তিনি। ২০০৯ সালে জাতীয় দলের ক্যাম্পে সুযোগ পাওয়ার আগে জেলা পর্যায়ে খেলেছেন সাতক্ষীরা থেকে ওঠে আসা এই ফুটবলার। নিজের কঠিন পরিস্থিতি বলতে গিয়ে সাবিনা বলেছেন, ‘কঠিন পরিস্থিতিটা আমি জয় করে এসেছি। সমর্থন শুরুতে তেমন না পেলেও আমার মধ্যে আত্মবিশ্বাস ছিল আমি ফুটবলার হতে পারব। এখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলতে পারছি। এটা ভেবে খুব ভালো লাগে।’

সমাজের কে কী বলল সেটায় গুরুত্ব না দিয়ে পরিবারের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা জানালেন সাবিনা, ‘আমাদের সবার পরিবারকে তাদের মেয়ে সন্তানদের সমর্থন দিতে হবে। বাইরের লোক কে কী বলল, তাতে মাথা না ঘামিয়ে পরিবারের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। সেক্ষেত্রে পরিবারকে অবশ্যই বুঝতে হবে মেয়ে কী চাইছে। পরিবার পাশে দাঁড়ালে মেয়েদের আত্মবিশ্বাস বাড়বে।’

স্বপ্নকে প্রতিষ্ঠিত করতে নারীদের পরিশ্রম করার আহ্বান সাবিনা, ‘মেয়েদের উচিত আত্মনির্ভরশীল হওয়া। স্বপ্নপূরণ করার জন্য একজন মেয়ের যা যা করা উচিত, তা করা। কোনো নারীর মনে সংশয় থাকলে সে পিছিয়ে যাবেই।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close