ভূরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি

  ০৮ মার্চ, ২০২৪

দু’পায়ে শিকল নিয়ে পরীক্ষার হলে আলম

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী

দুই পায়ে শিকল বাঁধা অবস্থায় এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার আলম মিয়া। পরীক্ষা শুরুর এক সপ্তাহ আগে তার মাথায় সমস?্যা দেখা দিলে এ ব্যবস্থা গ্রহণ করে তার পরিবার। দু’পায়ে শিকল বেঁধে তালা লাগিয়ে পরীক্ষা হলে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় তাকে। পরীক্ষা শেষে আবার দুই পা বেঁধে তালা লাগিয়ে বাড়িতে নেওয়া হয়। এভাবে বন্দি জীবন নিয়ে ভূরুঙ্গামারীর নেহাল উদ্দিন পাইলট উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে আলম মিয়া।

সে তিলাই উচ্চবিদ্যালয় থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। অথচ কিছু দিনই আগেও সে ছিল একজন উচ্ছল স্বাভাবিক কিশোর। নিয়মিত স্কুলে যেত অবসরে বাবার আটোরিকশা চালিয়ে বাবাকে সহযোগিতা করত এবং নিজের পকেট খরচের টাকা জোগাতো। আলম মিয়া উপজলার তিলাই ইউনিয়নের পশ্চিমছাট গোপালপুর গ্রামের আবদুল আলিমের ছেলে।

তার দাদু জসীম উদ্দিন জানান, এসএসসি পরীক্ষার সপ্তাহ খানেক আগে তার পিতা অটোচালক আবদুল আলিম অটো চালিয়ে দুপুরে খাবারের জন্য বাড়িতে এলে তার ছেলে আলম মিয়া ধামেরহাট বাজার থেকে অটোতে যাত্রী নিয়ে ভূরুঙ্গামারী বাসস্ট্যান্ডে যায়। সেখানে যাত্রী নামিয়ে অন্য যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করার সময় অপরিচিত ৪ ব্যক্তি এসে সোনাহাট স্থলবন্দর যাওয়ার জন্য ৪০০ টাকায় ভাড়া চুক্তি করে।

এ সময় ওই ৪ ব্যক্তি কৌশলে অটোচালক আলম মিয়াকে একটি সমুচা খেতে দেয়। সমুচা খাবার একটু পরই সে অসংলগ্ন আচরণ করতে থাকে। এ অবস্থা দেখে অন্যান্য আটোচালকরা সাহায্যে জন্য এগিয়ে এলে চক্রটি কৌশলে কেটে পরে। পরে একজন অটোচালক অটোসহ আলমকে বাড়িতে পৌঁছে দেয়। ওই অটোচালকের কাছে তিনি ঘটনা শুনেছেন বলে জানান। ধারণা করা হচ্ছে, অটো চোর চক্রের সদস্যরা অটোটি চুরি করার জন্য সমুচার মধ্যে অজ্ঞান করার কোনো ক্যামিকেল মিশিয়ে খাওয়ানো হয়েছিল। কিন্তু ক্যামিকেলের পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তিলাই উচ্চবিদ?্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমজাদ হোসেন বলেন, ছেলেটি ভদ্র এবং মেধাবী। মাঝে মাঝে সে তার বাবার অটো চালিয়ে লেখাপড়ার খরচ চালাত। পরীক্ষার আগে হঠাৎ সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরীক্ষা কেন্দ্রের সচিব হারুন উর রশীদ জানান, ছেলেটি অসুস্থ হওয়ার কারণে তাকে একটি আলাদা কক্ষে পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। খাতায় লিখলেও মাঝে মাঝে চিল্লাচিল্লি করে, অশান্ত হয়ে যায় এবং লিখতে চায় না। এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু সাজ্জাদ মোহাম্মদ সায়েম জানান, ছেলেটির সঙ্গে কথা বলেছি, আমার মনে হয়ে সে মানসিক সমস্যায় ভুগছে। দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসায় সে ভালো হতে পারে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close