শিপ্ত বড়ুয়া, রামু (কক্সবাজার)

  ১৬ জানুয়ারি, ২০২৪

পাঠাগার

রাজারকুলে ‘জ্ঞানান্বেষণ’

কক্সবাজারের রামু

ইতিহাস পাঠে জানা যায়, আরাকান রাজা মিন সো মোনের মৃত্যুর পর মিনখারি (১৪৩৩-১৪৫৯) রামু দখল করেন। সময়টা ১৪৩৪ সালে কিংবা এর এক বছর পর। সে সময় রামুতে গৌড়ের সুলতানের পক্ষে সামন্ত রাজা হিসেবে চাকমারা রাজত্ব করত। মিন খারির আক্রমণে চাকমা রাজা কোণঠাসা হয়ে পড়েন। গৌড় থেকে কোনো সাহায্য না আসায় চাকমারা মিন খারির সঙ্গে সন্ধি করে এবং বাঁকখালী নদীর দক্ষিণ পাড় পর্যন্ত ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। মনে করা হয়, বর্তমানে রাজারকুল গ্রামটি সেই ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী।

সেই রাজাদের গ্রাম রাজারকুলে শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিকাশে বই পড়া, খেলাধুলা, গান, আবৃত্তিসহ নানা সাংস্কৃতিক কার্যক্রম চলছে জ্ঞানান্বেষণ পাঠাগারে। কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলার পূর্ব সীমান্তে বাঁকখালী নদীর পাড় ঘেঁষে পূর্ব রাজারকুল গ্রামের অবস্থান। বর্ষায় এখনো নৌকায় পার হয়ে এবং শুষ্ক মৌসুমে বাঁশের সাঁকো পার হয়ে যাওয়া যায় গ্রামটিতে। ১০ হাজারের বেশি মানুষের বসবাস এখানে। ২০১৭ সালে গড়ে তোলা হয় জ্ঞানান্বেষণ পাঠাগার। শুধু বই পড়া নয়, আছে আরো অনেক কার্যক্রম। এগুলোর মধ্যে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য বিকাশে খেলাধুলা, গ্রামের সাধারণ মানুষের বিনোদনের জন্য বড় পর্দায় সাপ্তাহিক সিনেমা দেখানো ইত্যাদি। পাঁচটি বুকশেলফে আট হাজারের বেশি দেশি-বিদেশি বই আছে জ্ঞানান্বেষণ পাঠাগারে। তবে বর্তমানে প্রাপ্তবয়স্ক পাঠকের চেয়ে শিশু ও কিশোর পাঠকদের আনাগোনা বেশি এখানে। এমনটি জানালেন পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক অজয় বড়ুয়া। সে জন্যই শিশুদের জন্য এই পাঠাগারে হরেক রকমের আয়োজন করা হয়েছে। পাঠাগারটির সহসভাপতি অসীম বড়ুয়া জানান, ১০ শতাংশ জমির ওপর দোতলা ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ২০২০ সালে, কিন্তু অর্থাভাবে থেমে আছে কাজ। তারপরও দমে যাননি সংগঠকরা। কাঠ দিয়ে দোতলা ভবন বানিয়ে সাময়িকভাবে পাঠাগারের কার্যক্রম চালিয়ে নিচ্ছেন তারা। এর অন্যতম সংগঠক হৃদয় বড়ুয়া জানান, দোতলা ভবনের কাজ শেষ হলে পাঠাগারের কাজ পুরোদমে শুরু হবে। নিচতলায় পাঠকক্ষ এবং দোতলায় প্রায় ৫০টি কম্পিউটার নিয়ে হাইটেক পার্ক করার স্বপ্ন আছে।

উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ বইমেলার আয়োজন করেন জ্ঞানান্বেষণ পাঠাগারের স্বেচ্ছাসেবকরা। প্রতিদিন ৩০ জনের বেশি শিশু ও কিশোর পাঠক আসে এখানে। এদের কেউ বই পড়ে তো কেউ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। আবার শিশুদের বেশির ভাগ সময় কাটে ব্লক দিয়ে নানা কিছু তৈরির মাধ্যমে। পায়েল বড়ুয়া এখানকার শিশুপাঠক। মনোযোগের সঙ্গে ব¬ক দিয়ে পদ্মা সেতুর কাঠামো বানিয়েছে সে। প্রতিদিন পাঠাগারে খেলতে আসে পায়েল এবং ঘরে ফেরার সময় নিয়ে যায় বই। পরদিন আবার ফেরত দিয়ে নিয়ে যায় অন্য বই। পাঠাগারে আসা কিশোরদের নিত্যদিনের অভ্যাস এটি।

২০১৮ সালে সরকারি নিবন্ধন পাওয়া পাঠাগারটি প্রতি বছর সরকারি প্রণোদনার বই এবং সামান্য অর্থ বরাদ্দ পায়। কক্সবাজার জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারের গ্রন্থাগারিক ঋষিকেশ পাল জানান, জ্ঞানান্বেষণ পাঠাগারকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন একদল তরুণ। তাদের দেওয়া সময় ও পরিশ্রম পুরো কক্সবাজারে পাঠাগারটির ভালো অবস্থান তৈরি করেছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close