নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১১ জানুয়ারি, ২০২৪

শিশু আয়ানের মৃত্যু

চিকিৎসকের গ্রেপ্তার দাবিতে দুদিনের আলটিমেটাম

সুন্নতে খাতনার সময় অতিরিক্ত চেতনানাশক প্রয়োগসহ নানা ভুল চিকিৎসায় প্রাণ হারায় শিশু আয়ান। এমন অভিযোগ তুলে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালের দুই চিকিৎসককে গ্রেপ্তারে দুদিনের আলটিমেটাম দিয়েছে আয়ানের স্বজন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা আন্দোলন নামের একটি সংগঠন। গ্রেপ্তার না করা হলে হাসপাতালটি ঘেরাওয়ের ঘোষণা এসেছে তাদের পক্ষ থেকে। গতকাল বুধবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ঢাকার বাড্ডার ইউনাইটেড মেডিকেল হাসপাতালের ভুল চিকিৎসায় শিশু আয়ানের মৃত্যুর প্রতিবাদে ও বিচারের দাবিতে আয়োজিত এক মানববন্ধনে এমন ঘোষণা দেন সংগঠনটির প্রধান সমন্বয়ক নাজমুল হাসান।

নাজমুল হাসান বলেন, ভুল চিকিৎসার কারণে যে শিশুর মৃত্যু হয়েছে, তার পরিবারকে যথাযথ আর্থিক ক্ষতিপূরণসহ চিকিৎসায় জড়িত চিকিৎসকদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় আজকের এই মানববন্ধন থেকে আমরা বলতে চাই- আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ডাক্তার সাব্বির, ডাক্তার তাসনুভা মেহজাবিনকে গ্রেপ্তার করতে হবে। না হলে ইউনাইটেড মেডিকেল হাসপাতাল ঘেরাও করা হবে।

নাজমুল আরো বলেন, শিশু আয়ানের সুন্নতে খাতনায় যেন কষ্ট না হয়, সেজন্য দেশের নামকরা একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তারপর সুন্নতে খাতনা করানোর আগে তার বেশ কিছু শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো হয়েছিল। তখন তার কোনো ধরনের সমস্যা ছিল না। ডাক্তার তার রিপোর্ট দেখে বলেছিলেন, আয়ানের শারীরিক অবস্থা স্বাভাবিক। শিশু আয়ান তখন হেঁটে হাস্যোজ্জ্বল অবস্থায় অপারেশন থিয়েটারে ঢোকে। সমন্বয়ক নাজমুল হাসান বলেন, আয়ানকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়ার পর চিকিৎসক সাব্বির তাকে অতিমাত্রায় এনেস্থিসিয়া দেন। ডাক্তার সাব্বির ১৯ বছরের অভিজ্ঞ এনেস্থিসিয়ান। এরপর সার্জারি ডাক্তার তাসনুভা মেহজাবিনসহ বেশ কয়েকজন ইন্টার্ন ডাক্তারকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ক্লাস করানো হয়। যার ফলে শিশু আয়ানের মৃত্যু হয়। এই ডাক্তারদের মানুষের প্রতি বিন্দুমাত্র মায়া নেই। মৃত্যুর খবর ধামাচাপা দেওয়ার জন্যই ৭ জানুয়ারি রাত ১২টায় শিশু আয়ানের মৃত্যুর ঘোষণা করা হয় এমন অভিযোগ করে নাজমুল হাসান বলেন, এরপর ডাক্তাররা শিশু আয়ানকে তড়িঘড়ি করে ইউনাইটেড হাসপাতালে পাঠান। তারা চেয়েছিলেন অন্য সব ঘটনার মতো এই ঘটনাও যেন ধামাচাপা পড়ে যায়। এ জন্যই ৭ জানুয়ারি ভোটের দিন শিশু আয়ানের মৃত্যুর খবর তারা ঘোষণা করেন। আয়ানের মৃত্যুশোকে তারা বাবা-মা এখন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এ কারণে তারা মানববন্ধনে আসতে পারেননি জানিয়ে নিহত শিশু আয়ানের চাচা মো. মানিক বলেন, ‘আমার ভাইস্তার মৃত্যুর কারণ হিসেবে আমরা ডাক্তারদের অবহেলাকে দায়ী মনে করছি। প্রথমত তাকে অতিরিক্ত এনেস্থিসিয়া (চেতনানাশক) প্রদান করা হয়। তারপর আয়ানের যখন জ্ঞান ফিরছিল না, তখন ডাক্তার তাকে রক্ত দিতে বলেন। কিন্তু অন্য সবাইকে যেভাবে রক্ত দেওয়া হয় এক-ফোঁটা এক-ফোঁটা করে, তাকে সেভাবে দেওয়া হয়নি। ডাক্তাররা তড়িঘড়ি করে তাকে ইনজেকশনের সিরিঞ্জ দিয়ে শরীরে রক্ত দিয়েছে। আমরা অনেক ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলেছি- এভাবে কখনো কাউকে রক্ত দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে আমরা জিজ্ঞেস করলে, তারা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে বলে- আপনারা বেশি বোঝেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ৫ লাখ ৭৭ হাজার টাকার একটা বিল তৈরি করে আমাদের ছেড়ে দেন। তখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলে, এই টাকা নিয়ে আপাতত আপনাদের টেনশন করতে হবে না, যখন সময় হবে আস্তে-ধীরে বিল পরিশোধ করে দিয়েন। এরপর আয়ানকে সেখান থেকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে নিয়ে গোসল করানো হয়। পরে আয়ানকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে দাফন করা হয়।

মানববন্ধনে আরো উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সদস্য মো. রাকিব হোসেন, ইঞ্জিনিয়ার সম্রাট ও নেওয়াজ খান বাপ্পী।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close