প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১০ জানুয়ারি, ২০২৪

নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা

জনপ্রতিনিধিসহ আহত ৬২

নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় মেহেরপুর, ফরিদপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানসহ ৬২ জন আহত হয়েছেন। এ সময় ৮টি বাড়িঘর ও ৫টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের ওপর এ হামলা চালানো হয়। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

মেহেরপুর : জেলার মুজিবনগরে আনন্দবাস গ্রামে গত সোমবার রাত ১০টায় পরাজিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল মান্নানের সমর্থকদের সঙ্গে নৌকা প্রতীকে নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য ফরহাদ হোসেনের কর্মী-সমর্থকদের সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ৪৫ জন আহত হয়েছেন। নৌকার পক্ষের আহতরা হলেন- বাগোয়ান ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার ফেরদৌস হোসেন (৬০), আনন্দবাস গ্রামের আলমাজুল ইসলামের ছেলে আশিক (২৪), মৃত উসমান আলীর ছেলে আয়াত আলী (৫৫), আলতাব হোসেনের ছেলে অন্তর (১৮), জিহুত মোল্লার ছেলে আশরাফুল ইসলাম (৪০), বাগোয়ান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আয়ুব হোসেনের ছেলে নাহিদ হোসেন (৩৪), ওয়াজ করণীর ছেলে পিয়াস হোসেন (২৫), সিরাজুল ইসলামের ছেলে হাসিবুল ইসলাম (১৪), ইসমাইল হোসেনের ছেলে রাশিদুল ইসলাম (১৮), খোদা বিশ্বাসের ছেলে টুকু বিশ্বাস (৫০), ফজলু মোল্লার ছেলে আবদুল হালিম (৩২), পটল মোল্লার ছেলে মাসুম হোসেন (২৯) প্রমুখ।

স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল মান্নানের পক্ষের আহতরা হলেন- হাবিবুর রহমানের ছেলে আশিক (২৪), ময়না বিশ্বাসের ছেলে রানা হামিদ (২১), শহিদুল ইসলাম (৩৭), মৃত কামরেজ মিয়ার ছেলে শফিকুল মিয়া (৪৫) ও আলাউদ্দিনের ছেলে আজিজুল ইসলাম (৩২)। ফেরদৌস হোসেন, আবদুল হালিম, হাসিবুল ইসলাম ও আশিকুর রহমানকে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে মোল্লা মেম্বারের অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। মুজিবনগর থানার ওসি উজ্জ্বল দত্ত বলেন, শটগানের ৮ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। এ ঘটনায় কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ফরিদপুর : ফরিদপুর-২ আসনের বিভিন্ন এলাকায় বিজয়ী নৌকা প্রতীকের শাহদাবের সমর্থকদের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ জামাল মিয়ার কর্মী-সমর্থকদের মারধর, বাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাট ও মোটরসাইকেল পোড়ানোর অভিযোগ উঠেছে। গত সোমবার সকাল ১০টায় নগরকান্দার ডাঙ্গী ইউনিয়নের ডাঙ্গী, ভবুকদিয়া গ্রামে দুই পক্ষের সংঘর্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়। এরপর রাত সাড়ে ৮টায় সালথার বল্লভদীর কাজীর বল্লভদী গ্রামেও ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। নগরকান্দায় সংঘর্ষের সময় পুলিশ ১৫ রাউন্ড রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হয়ে নগরকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তবে তাদের মধ্যে বেশিরভাগই স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী।

জানা গেছে, সোমবার সকাল ১০টায় স্থানীয় ইউপি সদস্য হাসান মিয়ার নেতৃত্বে নৌকার সমর্থক ডাঙ্গী ইউনিয়নের যদুরদিয়া গ্রামের মিজান, নান্নু মাতুব্বরসহ শতাধিক লোক গাড়িতে করে উল্লাস করে যাওয়ার পথে ডাঙ্গী বাজারে পৌঁছালে তা বাধা দেন ডাঙ্গী ইউনিয়নের ডাঙ্গীনগরকান্দা গ্রামের কামাল মাতুব্বরের নেতৃত্বে স্বতন্ত্র প্রার্থী জামালের সমর্থকরা। পরে তারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনার পর ডাঙ্গী ইউনিয়নের ডাঙ্গী বাজারে স্বতন্ত্র প্রার্থী জামালের সমর্থকদের পাঁচটি দোকান ও চারটি বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করে নৌকার সমর্থকরা। এছাড়া একই ইউনিয়নের ভবুকদিয়া গ্রামে জামালের দুই সমর্থকের দুটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে পোড়ানো হয়। ফরিদপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (নগরকান্দা সার্কেল) আসাদুজ্জামান শাকিল বলেন, এসব ঘটনায় কোনো পক্ষেই থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ : সোমবার রাত ৯টায় শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ চারটি বাড়িতে হামলা হামলা-ভাঙচুর ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় আহত একজনকে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। শিবগঞ্জ থানার ওসি সাজ্জাদ হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে। এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনে নির্বাচন-পরবর্তী ১২টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে শিবগঞ্জ ডাক বাংলা চত্বরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ নজরুল ইসলামের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব আতিকুল ইসলাম টুটুল খান। এদিকে নৌকা প্রতীকে বিজয়ী ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন।

গাইবান্ধা : সোমবার বিকেলে সাঘাটা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবিরকে অস্ত্র ও লোহার রড দিয়ে কুপিয়ে ও পিটিয়ে জখম করেছে দুর্বৃত্তরা। উপজেলার হাট ভরতখালী মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। জাহাঙ্গীর কবিরকে গুরুতর অবস্থায় প্রথমে গাইবান্ধা সদর হাসপাতাল ও পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (পঙ্গু হাসপাতাল) পাঠানো হয়। সাঘাটা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির গাইবান্ধা জেলা যুবলীগের সহসভাপতি ও প্রয়াত ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়ার ভাগনে। গাইবান্ধা-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ফারজানা রাব্বী বুবলীর নির্বাচনী এজেন্ট ছিলেন তিনি। জেলা সহকারী পুলিশ সুপার (বি-সার্কেল) আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, নির্বাচনী জেরেই এ হামলার ঘটনা ঘটেছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close