মারুফ আহমেদ, কুমিল্লা

  ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২২

কুমিল্লায় এক বাড়ির ছাদে ৩০০ বনসাই

একটি বাড়ির ছাদ, সেই ছাদেই সারি সারি করে রাখা বটগাছ, কৃষ্ণচূড়া, বাঁশগাছ, শিমুল। নানা জাতের তিন শতাধিক গাছ নিয়ে সাজানো এক ভিন্নধর্মী ছাদ বাগান। এক ছাদে এত গাছ শুনতে অবাক মনে হলেও কুমিল্লা নগরীর শুভপুর এলাকায় এমনই এক বাগানের সন্ধান মিলেছে। এ যেন নানা জাতের গাছ দিয়ে সাজানো বনসাইয়ের জাদুঘর।

কুমিল্লা নগরীর শুভপুর এলাকায় বাংলাদেশ টেলিভিশনের সাবেক পরিচালক হাসান ফিরোজের বাড়ি যেন এক বনসাইয়ের জাদুঘর। সহোদরা নামক এই বাড়িতে রয়েছে অন্তত ২৫০ থেকে ৩০০ বনসাই। বাহির থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে, এই একটি বাড়ির ছাদেই রয়েছে অমূল্য বৃক্ষ সম্পদ।

এই বনসাই বাগান গড়ে তুলেছেন ওই বাড়িরই বাসিন্দা বৃক্ষপ্রেমী হাসান ফিরোজ। তিনি বলেন, ১৯৭৫-৭৬ সালের দিকে এক বাসায় বেড়াতে গিয়ে চীন থেকে আনা বনসাইয়ের ফসিল দেখে বনসাই করার চিন্তা মাথায় আসে। এরপর ১৯৮৬ সালে বিটিভিতে যোগ দেন তিনি, থাকতেন চট্টগ্রামে। সে সময় তিনি বনসাই বাগানের সূচনা করেন। এ নিয়ে ব্যাপক খোঁজ খবর করা, পড়া ও গবেষণা করেন তিনি। এক পর্যায়ে সফল হন। গড়ে তোলেন বনসাইয়ের এক অনন্য সংগ্রহশালা। ২০১৭ সালে বিটিভি থেকে অবসর নেওয়ার পর কুমিল্লার শুভপুরে নিজের বাড়িতে বনসাইয়ের এই বাগান স্থানান্তর করেন।

বাগানি ফিরোজের ছাদবাগানে বনসাইয়ের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে আরবি ক্যালিগ্রাফি, শামুক, ঘোড়া, আমব্রেলা, বীরাঙ্গনার স্মৃতিসৌধ, হার্টি ট্রি, বন ময়ূর, মল্লযুদ্ধ, তিন আঙুলের চুম্বন, মৃত লেডি, মরুভূমির ক্লান্ত উট, ন্যুড লেডি, ধ্যানমগ্ন বুদ্ধ, সাপসহ নানা ধরনের প্রতিকৃতি। প্রতিটি গাছকেই তিনি ভিন্ন ভিন্ন রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।

হাসান ফিরোজের বনসাইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো শ্বেত চন্দন, পাকুড়, কৃষ্ণ চন্দন, অশ্বত্থ, করমচা, অ্যাডিনিয়াম, পাইন, কাঁঠালী বট, বাঁশ, তেঁতুল, নিম, শিমুল, কামিনী, ঝাউ, খেজুর ইত্যাদি।

হাসান ফিরোজ আরো জানান, এই বাগানে বনসাইয়ের পরিচর্যা করেই অবসর সময় কাটছে তার। এসব বনসাইকে নিয়মিত পরিচর্যা করতে হয়, দিতে হয় খাবার। খাবার তালিকায় আছে গোবর, ঝিনুক চূর্ণ, ধানের চিটা, পচা পাতা, ডিমের খোসা, পাথর কুচি ও ইটের সুড়কি।

তিনি আরো বলেন, অবসরে যাওয়ার পরে আমি এই বাগানটিতেই পুরো সময় দিচ্ছি। বর্তমানে আমার ২৫০-৩০০ বনসাই রয়েছে। আমার এখানে ২৭ বছরের পুরোনো গাছও রয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে বনসাইয়ের বাণিজ্যিক গুরুত্ব থাকলেও আমাদের দেশে এখনো সেভাবে তৈরি হয়ে ওঠেনি। তবে সবার আন্তরিকতা থাকলে আমাদের দেশেও বনসাইয়ের একটি ভালো বাণিজ্যিক ক্ষেত্র সৃষ্টি হতে পারে।

পরিবেশবিদরা বলছেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এ ধরনের বনসাই বাগানের রয়েছে ব্যাপক ভূমিকা। বর্তমানে নগরে গাছের যে ঘাটতি তা পূরণে বিকল্প হিসেবে বনসাইয়ের এমন আরো বাগান তৈরি করা যেতে পারে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), কুমিল্লা জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাজাদা এমরান বলেন, আমাদের দেশের আয়তন অনুযায়ী যে পরিমাণ বৃক্ষ থাকার কথা সে পরিমাণ নেই। বনসাইয়ের মাধ্যমে সে ঘাটতি পূরণ করা যেতে পারে। এজন্য পরিবেশের ভারসাম্য রাখায় বেশি করে বনসাই গাছ করা উচিত।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close