নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১০ জুলাই, ২০২০

পণ্য পরিবহনে আয়ের পথ খুলছে রেলে

করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে রেলে মানুষের চলাচল কমে গেলেও উল্টো চিত্র পণ্য পরিবহনে, ক্রমশ চাহিদা বাড়তে থাকায় এই উদ্যোগ রেলের জন্য লাভজনক হয়ে উঠছে। শুধু দেশে নয়, এই সময়ে ভারত থেকেও রেলে পণ্য পরিবহন বেড়েছে। ভারত থেকে ফলমূল নিয়ে আসতে নতুন পার্সেল ভ্যান সেবা শুরু হচ্ছে।

রেল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, করোনাভাইরাস মহামারির প্রথম দিকে যাত্রী পরিবহন বন্ধ থাকায় সেই সময় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল পণ্য পরিবহনে। যাত্রী পরিবহনের ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয় পণ্য পরিবহনে, তাই আয়ের পথও খুলছে। যাত্রী পরিবহনে রেলের আর্থিক ক্ষতি থাকলেও পণ্য পরিবহনে রেল শুধু লাভের মুখই দেখেছে সব সময়। মহামারিকালে আয়ের পথ আরো খুলছে।

রেলের মহাপরিচালক মো. শামছুজ্জামান বলেন, পণ্য পরিবহনে রেলের চাহিদা বাড়ছে। চাহিদা বিবেচনা করে এ সেবা আরো বৃদ্ধি করা হবে।

গত মার্চে করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সরকারের ‘সাধারণ ছুটি’ ঘোষণার পর সারা দেশের কৃষকরা তাদের পণ্য নিয়ে বিপাকে পড়েন। পরে পণ্য বাজারাজাত করতে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়, যার অংশ হিসেবে পণ্য পরিবহনে কয়েকটি ট্রেন চালু করা হয়। রেল কর্মকর্তারা জানান, ওই সময় থেকেই রেলে পণ্য পরিবহন বাড়তে শুরু করে।

এরপর গত ৬ জুন থেকে রাজশাহী-ঢাকা রুটে যাত্রা শুরু করে ‘ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন’। এ উদ্যোগে রাজশাহী থেকে প্রতি কেজি আম ১ টাকা ১৮ পয়সায় ঢাকায় আসছে।

রেলের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) মো. মিয়া জাহান জানান, গত এক মাসে এক হাজার টনের বেশি আম ট্রেনে এসেছে। প্রতিটি ট্রেনে ২০০ টন করে আম নিয়ে আসার ধারণক্ষমতা রয়েছে। ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন ব্যাপক সাড়া ফেলেছে এবং আগামীতে এ ধরনের মৌসুমি ফল সরবরাহে আরো উদ্যোগ নেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

বর্তমানে কতটি পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল করছে জানতে চাইলে মিয়া জাহান বলেন, চাহিদার ওপর নির্ভর করে রেল পণ্য পরিবহন করে থাকে। গত বুধবার পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলে ২৫টি পণ্যবাহী ট্রেন চলেছে।

রেল কর্মকর্তাদের ভাষ্য মতে, লকডাউনের পর সবচেয়ে বেশি খাদ্যপণ্য রেলের মাধ্যমে পরিবহন করা হয়েছে। এপ্রিল থেকে মে মাসে এ পরিবহন ছিল সবচেয়ে বেশি এবং আয়ও হয়েছে। তবে জুন থেকে চলাচল স্বাভাবিক হওয়ায় খাদ্যপণ্য পরিবহন কিছুটা কমেছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম থেকে জামালপুর, ঢাকা-ভৈরব-চট্টগ্রাম এবং খুলনা থেকে নীলফামারী, চাঁপাইনবাগঞ্জ ও ঢাকা রুটে চারটি পার্সেল ট্রেন চলাচল করছে।

আগামীর পরিকল্পনা জানিয়ে মিয়া জাহান বলেন, আমের মৌসুম প্রায় শেষ, এসব পার্সেল ভ্যানে কোরবানির গরু নিয়ে আসার পরিকল্পনা চলছে। এর ফলে ব্যবসায়ীদের যেমন লাভ হবে তেমন রেলেরও আয় বাড়বে।

উত্তরাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চল থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামে ট্রেনে করে কোরবানির পশু পরিবহনের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ঈদের তিন থেকে চার দিন আগে থেকে এ পরিবহন শুরু করা হবে। গাইবান্ধা বা পাবনা অথবা কুষ্টিয়া থেকে চট্টগ্রামে প্রতিটি গরুর ভাড়া সর্বোচ্চ ২ হাজার ৫০০ টাকা এবং ঢাকায় ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা হতে পারে।

২০০৮ সালে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ ঘাট থেকে সাতটি কোরবানির পশুবাহী ট্রেন পরিচালনার কথা জানিয়ে মিয়া জাহান বলেন, এসব ট্রেনে ছাগল ও মহিষ পরিবহন করা যাবে। ছাগলের জন্য আলাদা লাগেজ ভ্যান হবে এবং সে অনুযায়ী ভাড়া নির্ধারণ করা হবে। প্রতিটি পশুবাহী ট্রেন স্টেশনে আসার পর তা পুরোপুরি পরিষ্কার করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান মিয়া জাহান।

প্রতিটি পণ্যবাহী ট্রেনে কী পরিমাণ আয় হয় জানতে চাইলে মিয়া জাহান বলেন, একেক পণ্যে একেক ভাড়া নির্ধারণ করা আছে। যেমন জ্বালানি তেল পরিবহনে প্রতিটি ট্রেনে ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা আয় হয়। কয়েকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে নিয়মিত তেল বা ফার্নেস অয়েল সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এছাড়া খাদ্যপণ্য, সার, নির্মাণসামগ্রী, সিমেন্ট, ভুট্টাসহ নানা পণ্য রেলের মাধ্যমে পরিবহন করা হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close