নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৩ নভেম্বর, ২০১৯

দেশে প্রথম নির্মাণ হচ্ছে পেঁয়াজের গুদাম

চলতি বছরের মাঝামাঝি থেকে অস্থির পেঁয়াজের বাজার। পাইকারি ও খুচরা বাজারে সমানতালে বেড়েছে দাম। গত দুই সপ্তাহে দাম কিছুটা কমলেও ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আঘাত হানার পর ফের ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। যদিও মূল্য নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি বিপণন অধিদফতরসহ মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা হিমশিম খাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। দেশি পেঁয়াজ সংরক্ষণের ব্যর্থতা ও ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হওয়াতেই মূলত দাম চড়া। দেশে তেল, ডাল, গম ও আলুর জন্য গুদাম থাকলেও পেঁয়াজ সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে, আপদকালীন সময়ে পেঁয়াজ নিয়ে বিপাকে পড়ে সরকার। ভারতসহ অন্য দেশ থেকে আমদানি নির্ভরতা কমাতে সারা দেশের কয়েকটি স্থানে প্রথমবারের মতো আধুনিক পেঁয়াজ গুদাম নির্মাণ করতে যাচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। টিসিবি সূত্র জানায়, দেশে পেঁয়াজের গড় চাহিদা ২৪ থেকে ২৫ লাখ টন, উৎপাদন হয় প্রায় ২৪ লাখ ৩০ হাজার টন। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন ঘাটতি থাকে বলে আমদানির মাধ্যমে তা পূরণ করা হয়। চলতি বছর পেঁয়াজ সংরক্ষণ ব্যাহত হয়েছে। শুরুতে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে বেশ কম দামে। অনেক পেঁয়াজ নষ্টও হয়েছে। ফলে, সব মিলিয়ে প্রায় ১০ লাখ টন ঘাটতি দেখা দেয়। সাধারণত ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে এই ঘাটতি পূরণ করা হয়। এবার, আমদানি নির্ভরতা কমাতে দেশে নির্মিত হচ্ছে পেঁয়াজ গুদাম। জানা যায়, দেশে প্রয়োজন অনুযায়ী একাধিক গুদাম নির্মিত হবে। পাবনা, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, ঝিনাইদহ, মাগুরা, মেহেরপুর, মাদারীপুর, শরিয়তপুর, গোপালগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, দিনাজপুর ও রংপুরে অধিক পরিমাণে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। এর পাইকারি বড় মোকাম বসে রাজবাড়ী, ফরিদপুর, দিনাজপুর ও পাবনায়। প্রয়োজন অনুযায়ী এসব স্থানে পেঁয়াজ গুদাম নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির প্রধান দুই রুট যশোরের বেনাপোল ও দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরেও আধুনিক গুদাম নির্মিত হবে। কোনো কারণে দাম বেড়ে গেলে এসব গুদাম থেকে ন্যায্যমূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি করবে টিসিবি। কৃষকরা সাধারণত পেঁয়াজ বাছাই ও গ্রেডিংয়ের পর বাঁশের মাচা, ঘরের সিলিং, প্লাস্টিক বা বাঁশের র‌্যাক অথবা ঘরের পাকা মেঝেতে শুষ্ক ও বায়ু চলাচলযুক্ত স্থানে সংরক্ষণ করেন। সারা দেশে কয়েকটি আধুনিক শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) গুদাম নির্মাণের ফলে এভাবে আর পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে হবে না। এসব গুদামে তাপমাত্রা হবে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস। পেঁয়াজ গুদাম নির্মাণে আলাদা প্রকল্প তৈরি শুরু করেছে টিসিবি। এ ধরনের প্রকল্প বাংলাদেশে এটাই প্রথম। তাই বিভিন্ন দেশ থেকে ধারণা নেওয়া হচ্ছে। তবে, এখনো গুদামের সংখ্যা, নির্মাণের স্থান ও প্রকল্প ব্যয় চূড়ান্ত হয়নি। সব কাজ শুরু হয়েছে মূলত পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার পর থেকে। টিসিবি মনে করে, এসি গুদাম নির্মিত হলে পেঁয়াজ নিয়ে আর বিপাকে পড়বে না সরকার।

এ প্রসঙ্গে টিসিবি সচিব এনামুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, সারা দেশে আলু সংরক্ষণে গুদাম রয়েছে, অথচ পেঁয়াজের জন্য নেই। চলতি বছরে পেঁয়াজের দাম আকাশচুম্বী। ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হওয়ায় এমন অবস্থা হয়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে দেশে প্রথমবারের মতো এসি পেঁয়াজ গুদাম নির্মাণ করা হবে। গুদাম কোথায় কোথায় নির্মাণ করা যায় সে বিষয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। এখন প্রকল্প প্রস্তুতের কাজ চলছে।

পাকিস্তান থেকে ৩০০ টন পেঁয়াজ আমদানি!

ভারত বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেওয়ার বেশ কিছুদিন থেকে পেঁয়াজের বাজারে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। এ অবস্থায় দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর পর পাকিস্তান থেকে ৩০০ টনের বেশি পেঁয়াজ আমদানি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের করাচির রোশান এন্টারপ্রাইজের সঙ্গে বাংলাদেশের তাশো এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের এ সংক্রান্ত একটি চুক্তি হয়েছে। পাকিস্তানের ইংরেজি দৈনিক ‘দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল’-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত শুক্রবার পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে ৩০০ টন পেঁয়াজ রফতানির আদেশ পেয়েছে বলে পাকিস্তানের বাণিজ্য উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (টিডিএপি) এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। ওই কর্মকর্তা বলেন, অন্তত ১২টি কন্টেইনারে করে পেঁয়াজ বাংলাদেশে পাঠানো হবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাকিস্তান থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে কখনোই নিষেধাজ্ঞা ছিল না। বরং দাম বেশি ও পাকিস্তানি পেঁয়াজ বাংলাদেশে কম চলে তাই ব্যবসায়ীরা পাকিস্তান থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে আগ্রহী নয়। বাণিজ্য সচিব দেশের বাইরে থাকায় এ বিষয়ে দায়িত্বরত সচিব মো. ওবায়দুল আজম সাংবাদিকদের বলেন, পেঁয়াজ আমদানি যে কেউ যেকোনো দেশ থেকে করতে পারে। আমরা সুনির্দিষ্ট কোনো দেশের কথা বলে দেইনি। পেঁয়াজ আমদানির ক্ষেত্রে আমরা কোনো দেশের নাম সুনির্দিষ্ট করে দেইনি।

তাহলে যদি ব্যবসায়ীরা পাকিস্তান থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে চায় সেটা কি তারা পারবে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটাতে কোনো বাধা নেই। আমদানি নীতি অনুযায়ী যে দেশ থেকে আনতে চায় আনবে। এ বিষয়ে শ্যামাবাজার আড়তদার সমিতির সভাপতি হাজি মোহাম্মদ শাহেদ বলেন, অনেক দিন আগে একবার পাকিস্তান থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছিল। তারপর আর আমদানি করা হয় না। কারণ দামও বেশি এবং পাকিস্তানি পেঁয়াজটা বাংলাদেশে ভালো চলে না।

উল্লেখ্য, গত ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ভারত কর্তৃপক্ষ পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ ঘোষণা করে। বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশ মিয়ানমার থেকে এলসি এবং বর্ডার ট্রেডের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পেঁয়াজ আমদানি শুরু করে। পাশাপাশি মিসর ও তুরস্ক থেকেও এলসির মাধ্যমে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়। সম্প্রতি মিয়ানমারও পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি করেছে। ফলে বাংলাদেশের বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close