প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১৪ অক্টোবর, ২০১৯

শিক্ষার্থীর মনোযোগ বাড়াতে বর্ণিল স্কুল

চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলায় ৭০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে লাল-সবুজের রঙে সাজানো হয়েছে। এদিকে বগুড়া জেলার সোনাতলায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালকে দৃষ্টিনন্দন সাজে সাজোনো হয়েছে। বালক-বালিকাদের এই স্কুলকে এভাবে সাজানোর উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করা এবং পাঠগ্রহণে তাদের আরো মনোযোগী করা। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরÑ

লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, লোহাগাড়া উপজেলায় লাল-সবুজের রঙে সেজেছে ৭০টি বিদ্যালয় ভবন। দৃষ্টিনন্দন বিদ্যালয়গুলো এখন হয়ে উঠেছে একেকটি লাল-সবুজের বাংলাদেশ। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সর্বমোট ১০৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৭০টি বিদ্যালয় ভবনকে জাতীয় পতাকার রঙ আর রূপে সজ্জিত করা হয়েছে। বাকি বিদ্যালয়ের ভবন পরিত্যক্ত হওয়ায় নতুন ভবন নির্মাণ শেষে একইরূপে সজ্জিত করা হবে। শিশুদের বিদ্যালয়গামী করা, ঝরেপড়া রোধ, জাতীয় পতাকা ও সংগীতের প্রতি শ্রদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ সৃষ্টির লক্ষ্যে জাতীয় পতাকার লাল-সবুজ রঙ আর বৈচিত্র্য সেজেছে উপজেলার ৭০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন। পেশাদার শিল্পীদের দিয়ে ভবনগুলো অঙ্কন করায় একেকটি স্কুল দেখলেই মনে হয় যেন, একেকটি লাল-সবুজের বাংলাদেশ। একইভাবে বেশ কিছু বিদ্যালয়ের ভেতরের দেয়ালও মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন চিত্রে সাজানো হয়েছে।

শিক্ষা অফিস সূত্রে আরো জানা যায়, শিশুদের নজর কাড়তে দেয়ালে আঁকা হয়েছে নানা ধরনের ছবি। জাতীয় পতাকা, বর্ণমালা, স্মৃতিসৌধ, শহীদ মিনার, ছয় ঋতুসহ নানা ধরনের চিত্রে বিদ্যালয়ের প্রতিটি দেয়াল যেন শিক্ষার এক একটি রঙিন ক্যানভাস। বাদ পড়েনি বিদ্যালয়গুলোতে সদ্য নির্মিত সীমানা প্রাচীরও। সেখানেও লেখা হয়েছে মনীষীদের বাণী, আঁকা হয়েছে ফুল, ফল, পাখি, মিনা-রাজুর ছবিসহ শিক্ষামূলক সব অঙ্কন। এছাড়াও উপজেলার কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনের অমর একুশে ভবন, বিজয় একাত্তর ভবন ও ৭ মার্চ ভবন নামকরণ করা হয়েছে। শিক্ষকরা বলছেন, এ কার্যক্রমের ফলে ক্লাসে শিক্ষার্থীর উপস্থিতির হার বাড়ছে। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অভিভাবকদেরও মুগ্ধ করেছে রঙের ছোঁয়ায় রাঙানো বিদ্যালয়।

আমিরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহাব উদ্দিন জানান, এটি একটি মডেল। এখন আর কাউকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় খুঁজতে হবে না। লাল-সবুজ পতাকায় মোড়ানো ভবন মানেই এখন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এমনরূপে সাজানোর ফলে বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণিতে পড়া শিশু সহজে জাতীয় পতাকার রঙ জানতে পারবে। লাল-সবুজ রঙের বিশেষত্ব সম্পর্কে অবগত হয়ে শহীদদের ত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে শিশুরা। লোহাগাড়া উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ওমর ফারুক জানান, উপজেলার ১০৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ৫০ হাজার শিশু পড়ালেখা করে। মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ শেখানোর পাশাপাশি প্রত্যেকটি বিদ্যালয়কে শিশুদের জন্য সেকেন্ড হোমের ভাবনা থেকে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর সাফল্য হিসেবে এরই মধ্যে বিদ্যালয়গুলোতে লক্ষ্যণীয় হয়ে উঠেছে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি।

তিনি আরো বলেন, সরকারিভাবে যেসব বিদ্যালয়ে মেরামতের অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সেসব বিদ্যালয়ে জাতীয় পতাকার আদলে লাল-সবুজ পতাকায় সাজিয়ে তোলা হয়েছে। এটিই দেশের রোল মডেল। এ রূপে সাজানোর ফলে স্কুলের প্রথম শ্রেণিতে পড়া কোমলমতি শিশুও এখন সহজেই জাতীয় পতাকা ও এর রঙ সহজে জানতে পারছে। সেক্ষেত্রে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশ ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি উদ্বুদ্ধ করতেই লাল-সবুজের রঙে নতুন রূপে সাজিয়েছি প্রতিটি বিদ্যালয়। তাছাড়া পর্যায়ক্রমে সব বিদ্যালয়ই লাল-সবুজের রঙে রাঙিয়ে তোলা হবে।

বগুড়া প্রতিনিধি জানান, সোনাতলায় বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার বৃদ্ধি এবং কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয়মুখী করতে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে। এতে করে শুধু শিক্ষার্থী নয় পথচারীদেরও দৃষ্টি কেড়েছে। বগুড়ার সোনাতলা উপজেলা সদর থেকে মাত্র চার কিলোমিটার পশ্চিমে বালুয়া বন্দরে ১৯৫১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বালুয়াহাট প্রাথমিক বিদ্যালয়। পরবর্তী সময়ে ১৯৭০ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হয়। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি ও স্কুলশিক্ষকদের তদারকিতে প্রতি বছর পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষায় ঈর্ষান্বিত ফলাফল অর্জন করে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্র্র্থীরা। বিদ্যালয়ের ফলাফল ধরে রাখতে এবং বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার বৃদ্ধি, এছাড়াও এলাকার শিশুরা শিক্ষা থেকে ঝরেপড়া রোধে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিদ্যালয়টি বর্ণিল রঙে পুরো বিদ্যালয় ভবনটি বিভিন্ন রঙে রাঙিয়ে তুলেছে। বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষগুলো বিভিন্ন কবির নামানুসারে নামকরণ করেছে। এছাড়াও পুরো বিদ্যালয় ভবনে আকর্ষণীয় স্থিরচিত্র অংকন করেছে। এতে করে শুধু শিক্ষার্থী নয়, পথচারীদেরও দৃষ্টি কেড়েছে ওই বিদ্যালয়ের প্রতি।

প্রতিষ্ঠার প্রায় ৪৮ বছর ওই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার মান ও শিক্ষকদের আন্তরিকতায় শিক্ষার্থী বাড়তে থাকে। বর্তমানে ওই বিদ্যালয়ে প্রায় ৫৫০ শিক্ষার্থী। প্রতিনিয়ত ওই বিদ্যালয়ে ৫০০ থেকে ৫২০ জন পর্যন্ত শিক্ষার্থী উপস্থিতি থাকে।

এ বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র রোমান হোসেন, ইয়াছমিন আক্তার, চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী নওশিন তাবাসসুম নন্দীনি, কুমারী চৈতি রানী সাহা, মেহেদী হাসান জানায়, প্রতি মঙ্গলবার বিদ্যালয় মাঠে হাট বসে। তখন শ্রেণিকক্ষে পড়াশোনায় মন বসে না। এছাড়াও সামান্য বৃষ্টিতে খেলার মাঠে পানি জমে থাকে। খেলাধুলা করা যায় না।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শামীমা আকতার এ ব্যাপারে জানান, বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীর তুলনায় শ্রেণিকক্ষ কম। বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবনগুলো ব্যবহারে অনুপযোগী হয়েছে। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী উপস্থিতি বৃদ্ধি, শিক্ষার্থী ঝরেপড়া রোধে বিদ্যালয়টি বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close