টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

  ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

গরিবের হোটেল ‘রবিনহুড’

‘আমার পূর্ব পুরুষরা এক সময় অসহায়, দুস্থ ও দরিদ্র মানুষের সেবা করতেন। ছোটবেলা থেকেই তাদের আর্তমানবতার নানামুখী কর্মকান্ড দেখে এসেছি। তারই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চাচ্ছি। অনাহারির মুখে একবেলা খাবার তুলে দেওয়ায় তাদের মুখে যে আনন্দের ঝিলিক ফুটে উঠে তা আমাকে আপ্লুত করে। তারা যখন পেট ভরে খেয়ে তৃপ্তি পায় সেটা দেখে আমার খুব ভালো লাগে।’ এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন টাঙ্গাইলে দরিদ্র, দুস্থ ও ভিক্ষুকদের বিনামূল্যে খাওয়ার হোটেল ‘গরিবের হোটেল রবিনহুড’ এর প্রতিষ্ঠাতা মির্জা মাসুদ রুবল।

টাঙ্গাইল শহরের প্রাণকেন্দ্র নিরালা মোড় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে গত শুক্রবার গিয়ে দেখা যায়, শতাধিক দরিদ্র, অসহায় দরিদ্র মানুষ তৃপ্তির সঙ্গে খেয়ে চলেছেন। যেন কারো দিকে খেয়াল করার সময় নেই। স্বেচ্ছাসেবীরা প্রয়োজনমতো সবার হাতে খাবার তুলে দিচ্ছেন। কোনো হইচই নেই, হুড়োহুড়ি বা কাড়াকাড়ি নেই। কারণ সবাই জানেন, এখানে কাউকে না খেয়ে ফিরে যেতে হয় না। তাই অন্য জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে ‘গরিবের হোটেল রবিনহুডের’ নাম-যশ।

দিনমজুর সোবাহান বলেন, ‘দৈনিক খেটে-খুটে যা আয় হয় শহরের হোটেলে খেতে গেলে তার অনেকটা চলে যায়। তাই এখানে এসে বিনামূল্যে খাবার পাওয়ায় সেই টাকাটা সাশ্রয় হয়। এতে পরিবারের মুখে বাড়তি কিছু তুলে দিতে পারি।’

ভিক্ষুক সমিতির সভাপতি আক্কাস আলী বলেন, ‘রুবল ভাই গরিবের দুঃখ বুঝেন। তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এবং মৃত স্বজনদের আত্মার শান্তির জন্য বিভিন্নভাবে দান-দক্ষিণা করে থাকেন।’

হোটেলের প্রতিষ্ঠাতা মির্জা মাসুদ রুবল জানান, প্রায় আড়াই বছর ধরে তিনি এই বিনামূল্যের খাবার হোটেলটি চালিয়ে যাচ্ছেন। শহরে ‘নিরালা হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট’ নামে তার একটি ব্যবসায়িক হোটেল রয়েছে। সেখান থেকে যা আয় হয় তার কিছু অংশ খরচ করেন এই বিনামূল্যের খাবার হোটেলে।

তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন এই বিনামূল্যের হোটেলে দুস্থরা প্রতিদিন দুপুরে এসে খেয়ে যেত। কিন্তু আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে এখন সপ্তাহে একদিন (শুক্রবার) দুপুরে তাদের খাওয়াতে পারছি। তবে সঙ্গতি হলে ফের প্রতিদিনই এক বেলা খাওয়ানো যাবে।’ তিনি হোটেলটি চালানোর জন্য কারো কাছে কখনো সাহায্য চাননি বলেও জানান। দেশ-বিদেশ থেকে অনেকেই আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ এগিয়ে আসেননি।’

হুগড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন তোফা বলেন, ‘মির্জা মাসুদ রুবল যেটা করছেন নিঃসন্দেহে তা প্রশংসার দাবি রাখে। সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদেরও এগিয়ে এসে তাকে সহযোগিতা করা উচিত।’

টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের সমাজসেবা কর্মকর্তা আবদুল মালেক বলেন, ‘মির্জা মাসুদ রুবল এককভাবে যেটা করছেন তা অনেকের জন্য অনুকরণীয় হতে পারে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close