নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৩ মে, ২০১৯

আউটসোর্সিংয়ের আড়ালে অ্যাডাল্টসাইট

২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন পলাশ!

আউটসোর্সিংয়ের আড়ালে রমরমা অ্যাডাল্টসাইট চালাতেন আবদুস সালাম পলাশ। আউটসোর্সিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, এসইও, ওয়েব ডিজাইন, ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য ২০১৭ সালে কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে রেক্স আইটি ইনস্টিটিউট নামে একটি প্রতিষ্ঠানও খোলেন তিনি। কিন্তু এর আড়ালে চালাতেন ‘বিং পেইড মার্কেটিং’-এর প্রচারণা। বেকার প্রশিক্ষণার্থীদের পলাশ অফার দিতেন, ‘বিনিয়োগ করলেই ৫০ থেকে শতভাগ রিটার্ন’।

পলাশের এমন আশ্বাসে প্রতিষ্ঠানটির পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী বিভিন্ন অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। প্রথমদিকে বিনিয়োগকারীদের বেশি বেশি লাভ দেখিয়ে তাদের পেমেন্ট করা হতো। পরে বেশি লাভের আশায় মোটা অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করতেন প্রথম দিকের বিনিয়োগকারীরা। আর এটিকেই ফাঁদ হিসেবে নেন পলাশ। বিনিয়োগকারী শিক্ষার্থীরা টাকা চাইলেই পলাশ বলতেন, টাকা রি-ইনভেস্ট করা হয়েছে। রিটার্নের ফাঁদে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী বিনিয়োগকারীকে নিঃস্ব করে গত আড়াই বছরে অন্তত ২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন পলাশ।

গত বৃহস্পতিবার এক ভুক্তভোগী বিনিয়োগকারীর অভিযোগের ভিত্তিতে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে আবদুস সালাম পলাশকে গ্রেফতার করে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি)। এ সময় তার কাছ থেকে একটি টয়োটা সেলুন কার, পাঁচটি ল্যাপটপ, তিনটি হার্ডডিস্ক ও ছয় লাখ টাকাসহ বিদেশি মুদ্রা এবং নন-ব্যাংকিং কাগজপত্র জব্দ করা হয়।

গতকাল রোববার রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্লা নজরুল ইসলাম বলেন, সিপিসি ইউনিট জানতে পারে, রেক্স আইটির স্বত্বাধিকারী পলাশ দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছে। তদন্তে প্রতারণার শিকার কয়েকজন ভুক্তভোগীর অভিযোগের সত্যতা পেয়ে পলাশকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে পলাশ সিআইডিকে জানান, ভিকটিমদের বিনিয়োগকৃত টাকা ফেরত দেওয়ার চাপের কারণে প্রায় দেড় মাস আগেই গা ঢাকা দেন তিনি। গ্রেফতার এড়াতে ঠিকানা গোপন, মোবাইল ফোন নম্বর পরিবর্তন করেন। তবে প্রতারণা অব্যাহত রাখতে ফেসবুকে লাইভে এসে নতুন নতুন প্রজেক্ট ও সব বিনিয়োগকারীর জন্য আকর্ষণীয় অফার ও দেশের বাইরে বেড়াতে যাওয়ার প্রচারণা ঠিকই চালাতেন।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পলাশ জানান, প্রথমে ফ্রি মার্কেটিং ক্যাম্পেইনে আগ্রহীদের নিয়োগ করা হতো, পরে তাদের পেইড মার্কেটিংয়ে ঢুকিয়ে দেওয়া হতো। তাদের বলা হতো পেইড মার্কেটিং করার জন্য তাদের পেপাল অথবা ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়েসহ কার্ড থাকতে হবে। আর বাংলাদেশে যেহেতু পেপালের কার্যক্রম নেই, তাই তারা এখনই সরাসরি মার্কেটিং করতে পারবে না। তিনি বলতেন, দীর্ঘদিন এ পেশায় জড়িত থাকায় তার আমেরিকান অ্যাকাউন্ট রয়েছে, তার মাধ্যমেই ক্যাম্পেইন চলবে। তাদের সন্দেহ দূর করার জন্য অ্যাডভারটেন গোল্ড নামে একটি সাইট তৈরি করে, যা দেখতে অরিজিনাল অ্যাডভারটেনের মতো।

ভিকটিমদের বলা হয়, অ্যাডভারটেন পলাশের কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য এ সাইট তৈরি করে দিয়েছে, যেখানে সব ভিকটিমকে আলাদা সাব-অ্যাকাউন্ট তৈরি করে দেওয়া হয়। সেখানে তিনি সবাইকে মনগড়া একটি হিসাব দেখাতেন। প্রথম দিকের বিনিয়োগকারীদের বেশি বেশি লাভ দেখানো হতো ও ক্যাশে তাদের পেমেন্ট দিয়ে দেওয়া হতো, ফলে তারা আরো বেশি টাকা নিয়ে এসে এখানে বিনিয়োগ করত। পরে টাকার পরিমাণ বেশি হয়ে গেলে তাদের আংশিক পেমেন্ট দেওয়া হতো আর বলা হতো বাকি টাকা রি-ইনভেস্ট করা হয়েছে।

এসপি মোল্লা নজরুল ইসলাম বলেন, আসলে প্রতারক পলাশ কোনো মার্কেটিং না করে এমএলএম ব্যবসার মতো কেবল মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তা দিয়ে অন্যদের লাভ প্রদান করত। অনেকে তার এ প্রতারণার ব্যাপারটি বুঝতে পারলে সে গা ঢাকা দেয়। তিনি বলেন, ২০১০ সালে পলাশ আউটসোর্সিং শুরু করে। ২০১৬ সালে আইটি ভিশন এ ট্রেনার হিসেবে ৯ মাস কাজ করে। পরে ২০১৭ সালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে সে রেক্স আইটি ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করে। শুরুতে শিক্ষার্থীদের ট্রেনিং করালেও পরে প্রতারণায় জড়িয়ে পড়ে। পলাশের বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ও মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করছে সিআইডি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close