মাহমুদুর রহমান খান

  ১২ জুলাই, ২০২১

রোমান্টিক কবি পার্সি বিশি শেলি

১৭৯২ সালের ৪ আগস্ট ইংল্যান্ডের সাসেক্সে বাবা মিস্টার টিমথি শেলি ও মা এলিজাবেথ পিলফোর্ডের ঘর আলো করে জন্মেছিল একটি সুন্দর ও ফুটফুটে শিশু। তার আলোতে যেন চারশাপ আলোকিত হয়ে উঠল। বাল্যকাল থেকেই সে তার প্রতিভা ও বুদ্ধিদীপ্ততার পরিচয় দিতে থাকল। তার লেখা, নিজস্ব আদর্শ ও চিন্তাচেতনা দ্বারা খুব কম বয়সেই তিনি খ্যাতিমান হয়েছেন। লিখে গেছেন এডোনাইস, ওড টু দা ওয়েস্ট ওয়াইন্ড, ওড টু এ স্কাইলার্কের মতো বিখ্যাত সব কবিতা। তিনি হচ্ছেন ইংরেজি সাহিত্যের সবচেয়ে সফল রোমান্টিক কবি পার্সি বিশি শেলি। যার লেখায় রয়েছে বিপ্লব, বিদ্রোহ ও আদর্শের ছোঁয়া।

১৮১০ সালে শেলি ভর্তি হন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি কলেজে। তার মাথায় তখন সমাজের প্রচলিত ধ্যানণ্ডধারণা ও ধর্মচিন্তা সম্পর্কে বিরূপ চিন্তাভাবনা কাজ করে। তখনই বন্ধুত্ব হয়ে উঠে টমাস জেফারসন হগের সঙ্গে। দুজনের চিন্তাভাবনা প্রায় একই ধরনের ছিল। তাই কিছুদিন পর দুজন মিলে লিখে ফেলেন ‘দ্য নেসেসিটি অব এথেইজম’ বা ‘নাস্তিকতার প্রয়োজনীয়তা’ নামক একটি গ্রন্থ। তখনকার সময়ে ধর্ম বিরোধীদের প্রচুর শাস্তি দেওয়া হতো। তাই এই গ্রন্থ প্রকাশ করার কারণে ১৮১১ সালে শেলি ও হগ দুজনই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হলেন। শেলির কিশোরী প্রেমিকা হ্যারিয়েটের বাবা এসব জানার পর তাদের প্রেমেরও সমাপ্তি ঘটে। শেলির নিজ বাবাও তাকে ত্যাজ্যপুত্র ঘোষণা করেন। পরিবার থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে যান তিনি। ফলে জীবনের বাকি সময়গুলো খুব সংগ্রাম করে কাটাতে হয়।

শেলির চিন্তাণ্ডচেতনায় একাত্মতা পোষণ করার কারণে সবার বারণ সত্ত্বেও ১৮১১ সালের আগস্টে হ্যারিয়েট তাকে বিয়ে করেন। তাদের ঘরে চার্লস নামে একটি পুত্রসন্তান জন্ম লাভ করে। যদিও সে বিয়ে সুখের হয়নি। কেননা ইতোমধ্যেই তার গডউইন পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। গডউইনের মেয়ে মেরি গডউইনের প্রেমে পড়ে যান তিনি। ১৮১৪ সালে তারা দুজন প্রেমের ঘটনা প্রকাশ্যে স্বীকার করেন। তার মধ্যে শেলির প্রথম স্ত্রীও অন্য একজনের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান। ১৮১৬ সালে অজ্ঞাত কারণে হ্যারিয়েট আত্মহত্যা করেন। সেই বছরই শেলির বিয়ে হয় গডউইনের মেয়ে মেরির সঙ্গে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাদের স্বামীণ্ডস্ত্রীর সম্পর্ক অটুট ছিল।

রোমান্টিক যুগের কবিরা ছিলেন ক্ষণজন্মা। শেলিও তাই। কিন্তু যত দিন বেঁচে ছিলেন সাহিত্যচর্চা করে গেছেন। সে সময়ের অন্যতম রোমান্টিক কবি কীটসের মৃত্যু হলে তিনি ‘এডোনাইস’ নামে একটি বিশাল এলিজি বা শোকগাথা লেখেন। সেখানে তিনি কীটসের প্রশংসা করেছেন। প্রকৃতি যেন কীটসের মৃত্যুতে শোকাহত। সবাই শোকে কাতর হয়ে গিয়েছিল। দারুণ সব উপমার মধ্যে এঁকেছেন শোকাবহ দৃশ্য। অন্যতম সেরা রোমান্টিক কবি বায়রনকেও হাজির করেছিলেন কীটসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায়।

শেলি সারাজীবন অন্যায়, অত্যাচার, ধর্মের নামে শাসন, শোষণ, ভন্ডামি, নির্যাতন ইত্যাদির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে গেছেন। নিজের আদর্শকে জীবনে প্রতিষ্ঠিত করতে ত্যাগ করেছেন পরিবার ও পরিজন। প্রতিনিয়ত লড়ে গেছেন অভাব অনটনের সঙ্গে। আমাদের জন্য রেখে গেছেন তার জ্ঞানসমৃদ্ধ সাহিত্যভান্ডার। মাত্র ২৯ বছর বয়সে ১৮২২ সালের ৮ জুলাই ইতালির পিসায় কবি বায়রন ও হান্টের সঙ্গে দেখা করার পর নৌকা নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে ঝড়ের কবলে পড়ে এ মহান কবি ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন। পৃথিবীর অন্যায়, শোষণ ও অত্যাচারকে ঝড়ের মতো উড়িয়ে দিয়ে সেই ঝড়ের মধ্যেই যেন মিশে যান চিরতরে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close