বদরুল আলম মজুমদার

  ০৬ এপ্রিল, ২০২৪

কাজে আসছে না কেন্দ্রের বর্জন

উপজেলা নির্বাচনে দাঁড়াচ্ছেন জামায়াতের প্রার্থীরা

বিএনপিসহ সরকারবিরোধী দলগুলো উপজেলা নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তবে জামায়াতের স্থানীয় প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। দলটির দায়িত্বশীল নেতারা এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার কথা বললেও মাঠ পর্যায়ের নেতারা পুরোধমে নির্বাচনী মাঠে নেমে পড়েছেন। রমজানের ইফতার ও দোয়া মাহফিলের আড়ালে স্থানীয় জামায়াতকে নির্বাচনী কাজ গুছিয়ে নিতে দেখা গেছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। এর আগে জামায়াত স্বতন্ত্রভাবে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। সেই নির্বাচনগুলোতে বিএনপি অংশ না নিলে অধিকাংশ এলাকায় জামায়াতের প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। আগের নির্বাচনী ফলে দলগতভাবে জামায়াত খুশি ছিল। এবার ভিন্ন পরিবেশে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন জামায়াতের নেতারা। এই দলটির পদধারী অনেক নেতাই এখন নির্বাচনের মাঠে সক্রিয়।

বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী দলের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীও এই সরকারের অধীন সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না এই ঘোষণা দিয়ে বিগত ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছে। এর চার মাসের মাথায় আগামী ৮ মে স্থানীয় সরকারের উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপের নির্বাচন হতে যাচ্ছে। সে নির্বাচনেও দলীয়ভাবে জামায়াতের কোনো প্রার্থী অংশগ্রহণ করবে না। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে এরই মধ্যে তারা মাঠপর্যায়ে নির্দেশনা পাঠিয়েছে। এমন নির্দেশনার মধ্যেও সারা দেশে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য প্রার্থিতা ঘোষণা করছেন স্থানীয় জামায়াত নেতারা।

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না, এটা প্রমাণিত। তাই এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে জামায়াত অংশগ্রহণ করবে না।

এদিকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে বিভিন্ন এলাকার স্থানীয় অনেক নেতা আগ্রহ প্রকাশ করছেন। জামায়াতের নেতারা বলছেন, নির্বাচন কমিশন তাদের দলের নিবন্ধন বাতিল করেছে। সংসদে তাদের প্রতিনিধিত্ব নেই, স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়েও প্রতিনিধিত্ব নেই বললেই চলে। এ অবস্থায় দলের অবস্থান শক্ত করতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ দরকার। এ ছাড়া এ নির্বাচনে যেহেতু দলীয় প্রতীক থাকবে না, তাই সরকারেরও খুব একটা হস্তক্ষেপ থাকবে না। নির্বাচন নিরপেক্ষ হলে ভালো ফল আনতে পারবে জামায়াত। তবে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা তা মনে করছেন না। তাদের মত, এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু হবে না। এ ছাড়া গত ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য তারা জনগণকে যে আহ্বান জানিয়ে ছিলেন, এখন এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে জনগণের সঙ্গে আবার প্রতারণা করা হবে বলে জামায়াত নেতারা মনে করেন।

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়বে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, এই সরকারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র উদ্ধারের আন্দোলনে জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। এখন যদি আমরা কেউ এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি তাহলে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করা হবে। তাই জামায়াতে ইসলামী দলীয়ভাবে নির্বাচনে যাচ্ছে না।

এদিকে আসন্ন উপজেলায় নির্বাচনে স্থানীয় নেতারা নির্বাচনের প্রার্থিতা ঘোষণা করছেন। জানা গেছে, প্রথম ধাপের প্রার্থিতা ঘোষণা করেছে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলা জামায়াতে ইসলামী। চেয়ারম্যান পদে মাওলানা হুমায়ুন কবির ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে ডা. নূর উদ্দিন মাহমুদের নাম ঘোষণা করা হয়। গত বুধবার সন্ধ্যায় হাজিরহাট নবাব রেস্টুরেন্টে সাংবাদিক সম্মেলন ও ইফতার অনুষ্ঠানে উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক কমলনগর উপজেলা আমির মাওলানা হুমায়ুন কবির ও ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে কমলনগর উপজেলা নাইবে আমির ডা. নূর উদ্দিন মাহমুদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের লক্ষ্মীপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক এ আর হাফিজ উল্যা। একইভাবে কুমিল্লা, নেয়াখালী লক্ষ্মীপুর ফেনী, সিরাজগঞ্জসহ দেশের ভিন্ন এলাকায় দলীয় প্রার্থিতা ঘোষণা করছে জামায়াত।

উল্লেখ, প্রথম ধাপে কমলনগর উপজেলার নির্বাচনসহ দেশের ১৫২টি উপজেলা পরিষদের মধ্যে আগামী ৮ মে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ঘোষিত তাফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমার শেষ সময় ১৫ এপ্রিল, বাছাই ১৭ এপ্রিল, প্রত্যাহারের শেষ সময় ২২ এপ্রিল। প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে ২৩ এপ্রিল এবং ভোটগ্রহণ হবে ৮ মে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে যারা আগ্রহী, তাদের প্রার্থী করা হবে। কাউকে নির্বাচনে যাওয়ার জন্য দল থেকে চাপ দেওয়া হবে না। দলের নেতারা জানান, কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষা না করে দলীয় প্রার্থীদের অনেকে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা বলেন, দলের কেউ যদি উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে চান তাদের প্রার্থী করার ব্যাপারে দলের স্থানীয় দায়িত্বশীলদের বলা হয়েছে। দলটির জেলা কমিটি নির্বাচনের সার্বিক বিষয় সমন্বয় করছে।

দলীয় সূত্র বলছে, আগে যারা উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন কিংবা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন, তাদের অনেকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। সামাজিকভাবে যারা প্রতিষ্ঠিত এবং যাদের দল ও দলের বাইরে গ্রহণযোগ্যতা আছে, এমন নেতাদের প্রার্থী হতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। যেহেতু উচ্চ আদালত জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করেছে, তাই দলের নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন।

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সিরাজগরঞ্জ আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে মাঠ পর্যায়ের জামায়াত প্রার্থীরা। এরই মধ্যেই পাঁচ উপজেলায় প্রার্থী চূড়ান্তও করেছে দলটি। রায়গঞ্জ উপজেলার প্রার্থীও শিগগিরই চূড়ান্ত করা হবে। জেলার তাড়াশ, কাজিপুর ও চৌহালি এই তিন উপজেলায় প্রার্থী দেওয়ার ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি দলটি। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সিরাজগঞ্জের সদর, শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া, বেলকুচি, কামারখন্দ ও রায়গঞ্জ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন জামায়াতের প্রার্থীরা। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির কোনো সিদ্ধান্ত না থাকলেও স্থানীয়ভাবে নেতাকর্মীরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সেই ধারাবাহিকতায় প্রার্থী চূড়ান্তও করা হয়েছে। চূড়ান্ত প্রার্থীরা হলেন সদর উপজেলায় জেলা জামায়াতের প্রচার ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম, শাহজাদপুর উপজেলায় উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক মিজানুর রহমান, কামারখন্দে উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যক্ষ আতাউর রহমান, বেলকুচিতে উপজেলা জামায়াতের আমির আরিফুল ইসলাম সাহেল ও উল্লাপাড়ায় উপজেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক শাহজাহান আলী।

সিরাজগঞ্জ জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক জাহিদুল ইসলাম বলেন, কেন্দ্রীয়ভাবে সিদ্ধান্ত না হলেও আমরা স্থানীয়ভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এরই মধ্যে পাঁচজন প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। শিগগিরই রায়গঞ্জে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। আমাদের প্রার্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেবেন। আমাদের প্রচার জনসমর্থন রয়েছে। নির্বাচনের ব্যাপারে ভোটার ও সমর্থকদের ব্যাপক সাড়াও পাওয়া যাচ্ছে। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হলে আমাদের প্রার্থীরা বিজয়ী হবেন।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
উপজেলা নির্বাচন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close