বুয়েটছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে মারার অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে উঠেছে, ছাত্রলীগের সেই নেতাকর্মীরা তখন ‘মাতাল’ ছিলেন বলে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির তদন্তে ওঠে এসেছে। বুয়েটের শেরেবাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে আবরারের ওপর নির্যাতন কয়েক ঘণ্টা ধরে চললেও তখন হল প্রশাসন ‘নির্লিপ্ত’ ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে সরকার সমর্থক ছাত্র সংগঠনটি।

হলের শিক্ষার্থীদের ভাষ্য অনুযায়ী, সদ্য স্বাক্ষরিত ভারত-বাংলাদেশ চুক্তির সমালোচনা করে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার পর গত রোববার রাত ৮টার দিকে হলের ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে ডেকে নেওয়া হয় তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (সপ্তদশ ব্যাচ) শিক্ষার্থী আবরারকে। তার কয়েক ঘণ্টা আগেই তিনি কুষ্টিয়ার গ্রামের বাড়ি থেকে হলে ফিরেছিলেন। এরপর রাত ২টার দিকে হলের সিঁড়িতে আবরারের লাশ পাওয়া যায়। এ হত্যাকান্ডে জড়িত অভিযোগে গত সোমবারই বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেলসহ সংগঠনটির ১৩ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, ওই ঘটনার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা হয়েছে। গণমাধ্যমে আসা একটি ফুটেজে দেখা যায়, মধ্যরাতে একটি ছেলেকে হাতের ওপর করে বারান্দা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন কয়েকজন, তাদের পেছনে পেছনে এগিয়ে আসেন আরো কয়েকজন।

ছাত্রলীগের তদন্তে নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ইয়াজ আল রিয়াদ বলছেন, দোষীদের শনাক্ত করার ক্ষেত্রে তারাও ওই ভিডিও ফুটেজ বিবেচনায় নিয়েছেন। এর পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, সাধারণ শিক্ষার্থী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দাদের সঙ্গে কথা বলেছেন তারা। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতেই সোমবার এ ঘটনায় বুয়েটের ১১ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করে ছাত্রলীগ।

ইয়াজ আল রিয়াদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সেদিন রাতে (রোববার) যারা এই কান্ডটি ঘটিয়েছেন তারা পূজায় গিয়েছিলেন। সেখানে তারা মদ পান করেছিলেন। তারা সবাই মারাত্মক রকমের ড্রাঙ্ক ছিলেন। তাদের মধ্যে মানবিকতা বলে কিছুই ছিল না। সেখান থেকে এসে তারা একটি স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে আবরারকে তার ১০১১ নম্বর রুম থেকে ২০১১ নম্বর রুমে নিয়ে গিয়ে তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে।

যার পরিপ্রেক্ষিতে আবরারের মৃত্যুর মতো ঘটনা ঘটে।’ ইয়াজ আল রিয়াদের ভাষ্যমতে, আবরারকে নির্যাতনের ওই কক্ষে তিন-চারজন শিক্ষার্থী থাকেন। অন্যান্য রুমের কিছু লোক এই নির্যাতনে অংশ নিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, তদন্তে আরো পেয়েছি, ওই রাতে বার্সালোনার খেলা ছিল। পূজা থেকে এসে আবরারকে শারীরিক নির্যাতনের পর তারা বার্সেলোনার খেলা দেখতে চলে গিয়েছিলেন। আবরার এই ফাঁকে তার এক বন্ধুকে ফোন করে তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু তার বন্ধু তাকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসেননি। সে আসলে এমন একটি অপমৃত্যুর মতো ঘটনা নাও ঘটতে পারত।

‘দায় প্রশাসনের’ : হলের মধ্যে অন্য ছাত্রদের হাতে নির্যাতিত হয়ে আবরারের মৃত্যুর জন্য প্রশাসনের ‘দায়িত্বহীনতা ও নির্লিপ্ততাকেও’ দায়ী করেছেন ছাত্রলীগ নেতা রিয়াদ। তিনি বলেন, হলের মধ্যে রাতভর কয়েক ঘণ্টা ধরে একটা ছাত্রকে নির্যাতন করা হলেও প্রশাসন কেন বিষয়টি জানতে পারল না? হলের প্রভোস্ট, আবাসিক শিক্ষকরা তাহলে কী দায়িত্ব পালন করলেন? এ ঘটনায় প্রশাসন দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। তারা কোনোভাবেই এর দায়ভার এড়াতে পারে না। তাছাড়া ফেসবুক বা অন্য কোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কারো মত প্রকাশে ছাত্রলীগ বাধা হতে পারে না বলেও মত দেন তিনি।

"