শফিউল সোহাগ, গলাচিপা (পটুয়াখালী)
জাল সেলাইয়ের কারিগর ওরা
পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার উপকূলে সাগরে মাছ ধরা শেষে ফিরে আসা ট্রলারের ছিঁড়ে যাওয়া জাল সেলাই করে জীবিকা নির্বাহ করছে সহস্রাধিক জেলে পরিবার। তারা জাল সেলাইয়ের কারিগর। জাল বুননের থুড়িয়া ও একটি ধারালো চাকুই তাদের সম্বল। সাগরে জলদস্যুদের তান্ডব, লুটপাট, ঝড়ের কবলে পড়ে ট্রলারডুবিতে ভীতসন্ত্রস্ত সমুদ্র উপকূলীয় এলাকার হাজার হাজার জেলে এখন বিকল্প পেশায় ঝুঁকে পড়ছে। অনেক জেলে এখন ছেঁড়া জাল সেলাই ও নতুন জালের দড়ি লাগানোকে জীবিকা নির্বাহের প্রধান পথ হিসেবে বেছে নিয়েছেন। উপজেলার কাটাখালী ফিশারি ঘাট, নিজকাটা, পানপট্টি, চরকাজল, রূপারচর, চরকলাগাছিয়া, বোয়ালিয়া, হরিদেবপুর, চরকারফার্মা, চরগঙ্গা, চরবাংলা, খলিফারচর, চরআন্ডা এসব এলাকায় ছেঁড়া জাল সেলাই কিংবা নতুন জালের দড়ি লাগিয়ে সহস্রাধিক পরিবারের জীবিকা চলছে। পানপট্টি এলাকায় অনেক জেলে পরিবারের নারীারাও এ কাজটি করেন।
জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গলাচিপা উপজেলায় ছেঁড়া জাল সেলাই ও নতুন জালের দড়ি লাগানোর কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে অন্তত এক হাজার পরিবার। সাগরে কিংবা সাগর মোহনা সংলগ্ন এলাকায় যখন জেলেদের জালে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ে তখন তাদের মজুরি বাড়ে। আবার যখন সাগরে মাছ শিকার বন্ধ থাকে তখন মজুরি কমে যায়। এমনকি তখন ৩০০ টাকা থেকে মজুরি কমে ১২০ থেকে ১৫০ টাকায় আসে। পানপট্টি ফিশারি ঘাটে বসে জাল সেলাই করেছেন আবু তালেব গাজী, সোবাহান মৃধা, খালেক মাঝি, সোহেব আলী ও রফিক মিয়া। তারা জানান, দিনভর দড়ি লাগিয়ে একেকজনের মজুরি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। নতুন জালে লাইলনের দড়ি লাগানো এবং ছেঁড়া জাল সেলাই করেই তাদের জীবিকা চলে।
গলাচিপার পক্ষিয়া গ্রামের তালেব গাজী জানান, তিনি আট-দশ বছর ধরে পুরনো ছেঁড়া জাল সেলাই করছেন। তিন-চার বছর আগে মাত্র ১০০ টাকা মজুরি ছিল তাদের। মাছের জো থাকলে মজুরি বাড়ে। আবার জো কেটে গেলে মজুরি কমে যায়। সাগর ও নদীর পাড়ে বসেই তাদের এই কাজ করতে হয়।
চরকাজল ফিশারি ঘাটে জাল সেলাইয়ের কাজে ব্যস্ত জেলে রফিক মাঝি জানান, মৎস্য আহরণের সকল সরঞ্জামাদির মূল্য অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া এবং সাগরে জলদস্যুদের তান্ডব, ঝড়ের কবলে পড়ে ট্রলার ডুবিসহ নানা প্রতিকূলতার ভয়ে তারা এখন জীবিকায় পরিবর্তন এনেছেন।
"