লুৎফুল আলম সজল, নড়াইল

  ১৬ জুলাই, ২০২০

করোনার ভয়ে প্লাস্টিকের কাপ নড়াইলে বাড়াচ্ছে ডেঙ্গুর ঝুঁকি

করোনা প্রাদুর্ভাবে নড়াইলের চায়ের দোকানগুলোতে বেড়েছে প্লাস্টিকের ওয়ান টাইম কাপের ব্যবহার। জেলায় দৈনিক ১ লাখের মতো এই কাপ পরিত্যাক্ত হয়। যত্রতত্র পড়ে থাকায় এই কাপে বৃষ্টির পানি জমে ডেঙ্গু জ্বরের বাড়তি ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। তবে ডেঙ্গু প্রতিরোধে এখনও তেমন কোনো প্রস্তুতি গ্রহন করেনি সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

করোনা সংকটের মধ্যেই এবার নড়াইলে দেখা দিয়েছে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব। এ বছর জেলায় ডেঙ্গু জ্বরে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৭ জন। এর মধ্যে ১১ জুলাই লোহাগড়া উপজেলার পাচুড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা সহকারী পুলিশ সুপার (অব.) শরীফ মোস্তফা কামাল (৭৫) ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।

জানা গেছে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হবার পর থেকে সংক্রামণ এড়াতে নড়াইলে চায়ের দোকানগুলোতে কাঁচের কাপের প্রচলন প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এর পরিবর্তে জেলার সর্বত্র চায়ের দোকানগুলোতে ব্যবহার হচ্ছে প্লাস্টিকের ওয়ান টাইম কাপ। প্রতিদিন এর পরিমাণ প্রায় ১ লাখ পিচ। কিন্তু ওয়ান-টাইম হওয়ায় এই কাপ পরিত্যক্ত অবস্থায় দোকানের আশেপাশে ও রাস্তার পাশে পড়ে থাকছে। নিয়মিত অপসারণ না করায় এসব খালি কাপের মধ্যে বৃষ্টির পানি কয়েকদিন জমে থাকে। এতে ডেঙ্গু রোগের বাড়তি ঝুঁকি ও দূষণ বাড়াচ্ছে।

নড়াইল শহরের ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে প্রতিদিন পাইকারি দোকানগুলো থেকে কমপক্ষে ১ লাখ প্লাস্টিকের চায়ের কাপ বিক্রি হচ্ছে। কয়েকদিন পূর্বে প্রায় ২ লাখ কাপ বিক্রি হয়েছে।

সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা ফারজানা ইয়াসমিন। জানতে চাইলে প্রতিদিনের সংবাদকে তিনি জানান, এ বছর লোহাগড়া হাসপাতালে স্থানীয়ভাবে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ৭ জন রোগি চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে শরীফ মোস্তফা কামাল প্রথম ডেঙ্গু জ্বরে মারা গেছেন। গত বছর ঢাকা থেকে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হলেও, এবার স্থানীয়ভাবে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে পারে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কিত দুইটি চিঠি উপজেলা চেয়ারম্যান এবং জেলার ৩ পৌর মেয়রের কাছে কাছে পাঠানো হয়েছে।

গত বছরের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, ২০১৯ সালের ১৭ জুলাই থেকে নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে প্রায় সাড়ে ৪০০ ডেঙ্গু রোগি চিকিৎসা নেন। এসব রোগির মধ্যে প্রথমাবস্থায় অধিকাংশই ঢাকা থেকে আক্রান্ত হলেও পরবর্তীতে স্থানীয়ভাবেই বেশি আক্রান্ত হতে দেখা যায়। এ সময় সরকারি হিসেবে কেউ ডেঙ্গু জ্বরে কেউ মারা যায়নি, তবে এর উপসর্গ নিয়ে ২ জনের মৃত্যু হয়।

সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. আব্দুস সাকুর। ডেঙ্গু প্রতিরোধে গ্রহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনও পর্যন্ত কোনো ডেঙ্গু রোগী ভর্তি না হওয়ায় সদর হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ড প্রস্তুত করা হয়নি। রোগী আসলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া করোনা মোকাবেলায় ব্যস্ত থাকায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে সেইভাবে প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়নি। তবে ডেঙ্গু শনাক্তে কিটের ব্যবস্থা রয়েছে।

ডেঙ্গু প্রতিরোধের ব্যবস্থা সম্পর্কে জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা বলেন, বিভিন্ন উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়র, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বাড়ির আঙ্গিনা, রাস্তার পাশের ঝোপ-ঝাড়, জলাশয়, ড্রেন, হাট-বাজার প্রভৃতি স্থানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান সফল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি এ কাজে প্রত্যেক ব্যক্তি ও পরিবারকে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানান।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close