বগুড়া প্রতিনিধি

  ২২ অক্টোবর, ২০১৯

বাঙ্গালী নদীতে বালু উত্তোলন ভাঙনঝুঁকিতে গুচ্ছগ্রাম

বগুড়ার ধুনট উপজেলার এলাঙ্গী ইউনিয়নের রাঙ্গামাটি পশ্চিমপাড়া এলাকার আদর্শ গুচ্ছগ্রামের পাশে বাঙ্গালী নদীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে নদীর তীরবর্তী শতাধিক বিঘা ফসলি জমি ও নবনির্মিত সরকারি গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প ভাঙন ঝুঁকিতে পড়েছে। এলাকাবাসী বালু উত্তোলন বন্ধ করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

বাঙালি নদীর ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের গাইবান্ধা, বগুড়া এবং সিরাজগঞ্জ জেলার একটি নদী বাঙ্গালী। ১৮৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ১৪৩ মিটার গড় প্রস্থের নদী থেকে একাধিক শাখা নদী তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে বেলাল, মানস, মধুখালি, ইছামতি, ভলকা নদীই প্রধান। তবে এই শাখাগুলো শীতের মৌসুমে শুকিয়ে যায়। এমনিতে নদীটি বহুলালোচিত না হলেও ২০০৭ সালে যমুনার সঙ্গে মিশে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে নদীটি বিশেষভাবে আলোচনায় আসে। গত বন্যায় ড্রেজার মেশিনে বালু তোলায় বাঙ্গালী সেতুসহ হিন্দুকান্দিপাড়া ও চরগোসাঁইবাড়ি গ্রামে ভাঙন দেখা দেয়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৭ সালের ধুনট উপজেলার এলাঙ্গী ইউনিয়নের বিলচাপড়ি গ্রামের কাছে বাঙ্গালী নদীতে পাঁচটি ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে আট কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বাঙ্গালী সেতু ঝুঁকিতে পড়ে। এই নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর অভিযান পরিচালনা করে ড্রেজার উচ্ছেদ করে প্রশাসন। গত বছরের শেষের দিকে একই ইউনিয়নের ঝাঝড় ঘাট এলাকার একাধিক ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে তীরবর্তী ৫০-৬০টি পরিবারের বসতবাড়ি ভাঙ্গনের মুখে পড়ে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার এলাঙ্গী ইউনিয়নের রাঙ্গামাটি গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে বাঙ্গালী নদী। নদীর তীরে ত্রান ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে ওই ইউনিয়নের ১০১টি ভূমিহীন পরিবারের জন্য টিনের তৈরী ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। যার নাম দেওয়া হয়েছে আদর্শ গুচ্ছগ্রাম। এদিকে নবনির্মিত ওই গুচ্ছগ্রামটির উদ্বোধন না হলেও তার পাশেই বাঙ্গালী নদীতে প্রভাবশালীরা ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছে। নদীর গভীর তলদেশ থেকে বোরিং করে বালু উত্তোলনের কারনে নদীর পাড় ও ফসলী জমিতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এছাড়া অব্যাহত বালু উত্তোলনে সরকারি গুচ্ছগ্রামটিও ভাঙন ঝুঁকিতে পড়েছে।

এ বিষয়ে রাঙ্গামাটি গ্রামের কৃষক আবু সাইদ, আফসার আলী ও মন্টু মিয়া জানান, বাঙ্গালী নদী থেকে বালু উত্তোলন করায় নদীর তীরবর্তী ফসলি জমিতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকলে শতাধিক বিঘা ফসলি জমি ও সরকারি গুচ্ছগ্রামটিও নদীতে বিলীন হয়ে যাবে বলে আশংকা করছেন স্থানীয়রা। তাই তারা বালু উত্তোলন বন্ধ করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

অভিযুক্ত বালু ব্যবসায়ী বলেন, নদী থেকে বালু উত্তোলন করতে চেয়ারম্যানের অনুমতি নিয়েছি। তবে গুচ্ছগ্রামের পাশে থেকে বালু তোলা হচ্ছে না বলে তিনি দাবি করেন।

ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিয়া সুলতানা বলেন, নদী থেকে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হলে ফসলি জমি ও সরকারি গুচ্ছগ্রাম ভাঙনের কবলে পড়বে। তাই দ্রুত অভিযান চালিয়ে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close