আল-আমিন মিয়া, পলাশ (নরসিংদী)

  ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

আন্তর্জাতিক নদী দিবস আজ

শীতলক্ষ্যা দূষণ ও দখলমুক্তের দাবি

নগরীর ময়লা-আবর্জনা, শিল্পকারখানার দূষিত কেমিক্যাল ও গৃহস্থালির বর্জ্যসহ প্রায় সব ধরনের বর্জ্য ফেলে প্রতিনিয়ত দূষিত করা হচ্ছে শীতলক্ষ্যা নদী। এ অবস্থায় আজ রোববার পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক বিশ্ব নদী দিবস। দিবসটিকে সামনে রেখে শীতলক্ষ্যা দখল-দূষণমুক্ত করার দাবি জানিয়েছে পরিবেশবাদী, নদী রক্ষা কর্মীসহ স্থানীরা।

বিভিন্ন নথি থেকে দেখা যায়, ব্রহ্মপুত্রের উপনদী হিসেবে উৎপত্তি শীতলক্ষ্যা কালাগাছিয়ার কাছে ধলেশ্বরীর সঙ্গে মিশেছে। ১০৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদীর গড় প্রস্থ ২২৮ মিটার। কিন্তু বাস্তবে এর হিসাব মেলান কঠিন। প্রতিনিয়ত নদী ভরাট করে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে পানির প্রবাহ। বৃষ্টি হলে নসিংদীর পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও নতুনবাজার এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।

এদিকে প্রতিনিয়ত নদীতে কলকারখানার সৃষ্টি দূষণের ফলে পানির ঘনত্ব এত বেড়েছে যে, এর রং এমন বীভৎস কালো ও সবুজ রূপ ধারণ করেছে। এই পানি দিয়ে কৃষিতে সেচ কাজে ব্যবহার, গোসল করা, দৈনন্দিন গৃহস্থালি কাজকর্ম করা একেবারেই অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। শীতলক্ষ্যার পানির এই দশার কারণে পলাশ উপজেলা ও গাজীপুরে বসবাসকৃত মানুষকে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট অনুভব করতে হচ্ছে।

নদী তীরবর্তী ঘোড়াশাল পৌর এলাকার বাসিন্দাদের দৈনন্দিন কাজ ও গোসল-ধোয়ার কাজ চলতো শীতলক্ষ্যায়। এখন তা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এক সময় যারা শীতলক্ষ্যার গোলস করতেন তারা বলেন, ‘খুবই দুঃখ হয়। শীতলক্ষ্যা নৌভ্রমণের সময় কারো যদি সাধ জাগেÑএক আজলা পানি হাতে নেবে বা পানিতে পা ডোবাবে বা গাঁ ভেজাবে, সেই আশাও দুষ্কর। কেননা এই পানি হাতে বা শরীরে লাগলে ভয়াবহ চর্মরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনায়ই বেশি।’

গতকাল শনিবার দুপুরে শীতলক্ষ্যায় গিয়ে দেখা যায়, নদীর তীরে গড়ে ওঠা বিভিন্ন শিল্পকারখানার দখলে অনেকটাই চলে গেছে এ নদী। নদী তীরে গড়ে ওঠা বিভিন্ন শিল্পকারখানার মালিকরা যেন নদী দখলের মহোৎসবে মেতে উঠেছেন। শুধু তাই নয়, শীতলক্ষ্যার আশপাশে অবৈধভাবে ভূমি দখল করে গড়ে ওঠা বিভিন্ন শিল্পকারখানা নদীর দুই পার্শ্বে অবস্থিত বহু কেমিক্যাল ফ্যাক্টরি, শিল্পকারখানা এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ফেলা রাসানিক বর্জ্য ও দূষিত আবর্জনা প্রতিনিয়ত নদীকে গ্রাস করছে। নিয়মানুযায়ী, কারখানার বর্জ্য শোধনে ইটিপি ব্যবহার করার কথা। কিন্তু মালিকরা তা না করে সরাসরি রাসানিক বর্জ্য নদীতে ফেলা হচ্ছে। এমনই এক রাসানিক বর্জ্য ফেলানোর দৃশ্য চোখে পড়ে এই প্রতিবেদকের।

দুপুর আড়াইটার দিকে ঘোড়াশাল পৌর এলাকায় অবস্থিত প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের রাসায়নিক বর্জ্য ইটিপি ব্যবহার না করেই সরাসরি শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলা হচ্ছে এবং সঙ্গে সঙ্গে নদীর পানি কালো ও সবুজ রূপ ধারণ করছে।

ঘোড়াশাল পৌর এলাকার ভূঁইয়ার ঘাটে ১০ বছর ধরে পারাপার করেন মাঝি আমিনুল মিয়া। প্রতিদিনের সংবাদকে তিনি বলেন, ‘নদীতে শিল্পকারখানার বর্জ্য ফেলার দৃশ্য নতুন নয়। প্রায় সময়ই প্রাণ গ্রুপের রাসানিক বর্জ্য এই নদীতে ফেলতে দেখি। অনেক সময় নদীর মাছগুলোও মরে ভেসে ওঠে।’ একই সুরে কথা বলেন পলাশ বাজার ঘাটের নৌকার মাঝি কালাম মিয়া। তিনি বলেন, দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে এই ঘাটে নৌকা চলাই। কিন্তু আগে শীতলক্ষ্যার পানি এত দূষিত ছিল না। পানির এখন যেই অবস্থা তাতে নৌকা চালাতেও ভয় করে। পরিবেশবাদী ও নদী রক্ষায় কর্মীরা বলছেন, একটা সময় আসবে যখন দেশজুড়ে জনপদ-নগরগুলোর বিপুল পানির চাহিদা পূরণ করতে হবে নদীগুলো থেকে। কারণ ভূগর্ভস্থ পানির স্তর বিপজ্জনক মাত্রায় অনেক নিচে নেমে গেছে।

বাঁচাও শীতলক্ষ্যা নদী আন্দোলনের সমন্বয়ক মাহবুব সৈয়দ প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, শিল্পায়নের নামে শীতলক্ষ্যার তীরে গড়ে উঠেছে কারখানা। তাদের দূষিত বর্জ্যে ও দখলে নদীর পরিবেশ ধ্বংস করা হচ্ছে। এসব ঘটনা বিন্দু বিন্দু করে সঞ্চিত হয়ে দেশের নদ-নদীর জন্য ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠছে। ৫০ বছর পরের চাহিদা ও বাস্তবতাকে বিবেচনায় রেখে নদ-নদীর পানি রক্ষা করতে হবে। তিনি বলেন, শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, বিনিয়োগকারীসহ সর্বস্তরের নাগরিকদের মধ্যে নদী রক্ষার প্রয়োজনীয়তা উপলদ্ধি-চেতনা ও দায়বদ্ধতায় পারে দেশের নদীগুলোকে বাঁচাতে। তাই আজ আন্তর্জাতিক পানি দিবসে নদী রক্ষার জোর দাবি জানাচ্ছি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close