আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি

  ২৪ আগস্ট, ২০১৯

আমতলীতে বদ্ধ নদী যেন মশার কারখানা

* আতঙ্কিত উপজেলার ২৫ গ্রামের মানুষ * বাঁধ অপসারণে বিক্ষোভের সম্ভাবনা

বরগুনার আমতলী পৌরশহরের কোলঘেঁষা চাওড়া নদীর মুখে বাঁধ দেওয়ায় তৈরি হয়েছে জলাবদ্ধতা। কচুরি পানায় ছেয়ে গেছে নদী, পঁজে গেছে পানি। বদ্ধ নদী পরিণত হয়েছে মশার কারখানায়। মশার উপদ্রপে অতিষ্ঠ উপজেলার নদী তীরবর্তী চাওড়া, কুকুয়া, হলদিয়া ও সদর ইউনিয়ন মানুষ।

আমতলী পৌরসভা কোল ঘেঁষা চাওড়া নদীতে ২ যুগ আগে বাঁধ দেওয়া হয়। বর্তমানে নদীটি ভরাট হয়ে গেছে। উপজেলার চাওড়া, কুকুয়া, হলদিয়া, সদর ইউনিয়নের ২৫টি গ্রামের ওপর দিয়ে ত্রিভুজ আকৃতির প্রভাবিত এ নদীর দৈর্ঘ্য ৩০ কিলোমিটার।

হলদিয়া গ্রামের শামীম তাং বলেন, ‘সকাল-বিকাল মশার কামরে আমরা অতিষ্ঠ।’ চাওড়া ইউনিয়নের আব্দুল মতিন খান জানান, ‘কচুরিপানার কারণে খালের পানি নষ্ট হয়ে গেছে। এখন আবার মশার জ্বালা, ঘরে থাকতে পারছি না।’ কুকুয়া ইউনিয়নের রামজির কবির হোসেন বলেন, ‘মোগো দিগে কেউ চায় না, একদিকে পচাঁ ওডা, আরদিকে মশার কামড়। আল্লাহ আয় এহন যা করে।’ একই কথা বলেন ঘুঘুমারীর জসিম সিকদার।

বরগুনার রামনা বাঁধ, টিয়াখালী ও পায়রা-এ তিনটি নদীর মুখের সংযোগ রয়েছে। রামনা বাঁধ নদীর মুখে সুবন্ধী পয়েন্ট, টিয়াখালী নদীর সঙ্গে জুলেখা পয়েন্ট, পায়রা নদীর সঙ্গে খুড়িয়াখেয়াঘাট ও নতুন বাজার বাঁধঘাট পয়েন্টে। এ পয়েন্টগুলোতে স্লুইসগেট ও কালভার্ট রয়েছে। এগুলোতে সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণ না করায় পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। ফলে নদীটি ছেয়ে গেছে কচুরিপানায়। বর্ষায় দুই কূল প্লাবিত হয়। শুকনো মৌসুমে ভালোভাবে পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় এবং কচুরিপানায় ভরে থাকায় পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। উপজেলার চন্দ্রা, পাতাকাটা, চালিতাবুনিয়া, কাউনিয়া, মহিষডাঙ্গা, নাচনাপাড়া, উত্তর তক্তাবুনিয়া, রাওঘা, হলদিয়া, পশ্চিমচিলা, ভায়লাবুনিয়া, ঘুঘুমারি, রামজি, চলাভাঙ্গা, লোন্দা, কৃষ্ণনগর গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, নদীর ২ তীরের মানুষ পানি ব্যবহার করতে পারছে না। এক সময় নৌ-চলাচলের কারণে সংযুক্ত হাটবাজারে কৃষি পণ্য বিক্রি করার সুযোগ ছিল। বর্তমানে কচুরিপানার কারণে তা বন্ধ হয়ে গেছে। উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আশির দশকে সুবন্ধী পয়েন্টে বাঁধ কাটা থাকায় রামনা বাঁধ নদীর সঙ্গে সংযোগ সুবিধা ছিল। এ কারণে চাওড়া ইউনিয়নের মোক্তার হোসেন তালুকদার হাট জমে ওঠে। নব্বইয়ের দশকে পরিবেশগত কারণ ও লবণ পানি থেকে বাঁচানোর জন্য বাঁধটি পুনরায় দেওয়া হয়। ২-১ বছর পর স্থানীয় জনগণ আবার বাঁধটি কেটে দেয়। এভাবে ১৮ বছর খোলা থাকার পর বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বাঁধটি আবার দেওয়া হয়েছে।

চালিতাবুনিয়া গ্রামের গনি ঘরামী জানান, ‘মোরা বাঁধ কাটা বা না কাটা বুঝি না, চাই পানি সরানোর স্থায়ী ব্যবস্থা।’ নাচনাপাড়া গ্রামের সিদ্দিক মিয়া জানান, ‘আগের নাহান পানি সরতে পারে তার ব্যবস্থা চাই।’

আমতলী প্রেসক্লাব সম্পাদক এম এ সাইদ খোকন জানান, একটি বাঁধের কারণে লক্ষাধিক মানুষ পথে বসেছেন, মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন তারা। এছাড়া আমতলীর ঐতিহ্যবাহী তালুকদার বাজারটি আজ ধ্বংসের মুখে। এখন বাঁধটি অপসারণ করা না হলে সাধারণ মানুষ বড় ধরনের আন্দোলনে যেতে পারেন। আমতলী উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব গোলাম সরোয়ার ফোরকান মুঠোফোনে জানান, এ সমস্যা সমাধানের জন্য বরগুনা জেলা প্রশাসন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে। মশার বংশ বিস্তার ঠেকাতে উপজেলা পরিষদের উদ্যোগে ফগার মেশিন দিয়ে মশার বংশ বিস্তার বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

জানতে চাইলে বরগুনা জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ মুঠোফোনে প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, ‘এ সমস্যা সমাধানের জন্য বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবটি পর্যালোচনা হচ্ছে। আপাত মশার বংশ বিস্তার বন্ধ করতে ফগার মেশিন দিয়ে ওষুধ দেওয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে নিদের্শনা দেওয়া হবে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close