বোয়ালমারী (ফরিদপুর) প্রতিনিধি

  ১৮ জুন, ২০১৯

বোয়ালমারীতে ভাতার টাকা আত্মসাৎ

অভিযোগের তীর জনপ্রতিনিধি ও ব্যাংক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে

ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ঘোষপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য ও সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশে প্রতিবন্ধীদের ভাতার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। ভাতাভোগীদের না জানিয়ে অন্তত ১৪ প্রতিবন্ধির টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে তারা।

সমাজসেবা অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ঘোষপুর ইউনিয়নে ৩০ জন প্রতিবন্ধীকে সরকার প্রদত্ত প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর আওতায় আনা হয়। গত ২৯ মে সমাজসেবা অফিসার সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে সবকটি বই হস্তান্তর করেন। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে চেয়ারম্যান এসএম ফারুক হোসেন সংশ্লিষ্ট সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সদস্য অপু সরকার, সদস্য মো. কামরুল ইসলাম ও সোনালী ব্যাংক বোয়ালমারী শাখার দুই কর্মকর্তা মাহাবুবুল আলম ও নজরুল ইসলামের যোগসাজশে ভাতাভোগীদের না জানিয়ে ভূয়া লোক দেখিয়ে গত ৯ জুন ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেয়।

ওই ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের ঘোষপুর গ্রামের বাকপ্রতিবন্ধী মো. মিরাজ হোসেনের স্ত্রী ফরিদা বেগম জানান, কামরুল মেম্বার প্রতিবন্ধী ভাতার বই করে দেয়ার কথা বলে দুই বছর আগে ২ হাজার টাকা নেয়। এখন পর্যন্ত ভাতার বই বা টাকা কোনটাই দেয়নি।

এ ব্যাপারে ইউপি সদস্য কামরুল ইসলাম বলেন, প্রতিবন্ধীদের তালিকা জমা দেয়া দিয়েছিলাম; ভাতার বই চেয়ারম্যানের নিকট সমাজসেবা অফিস হস্তান্তর করেছে। ভাতার বই করে দেয়ার কথা বলে টাকা নেয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।

৯নং ওয়ার্ডের প্রতিবন্ধী দীপক গোলদারের (২০) মা উন্নতি গোলদার জানান, গত ৯ জুন ইউপি সদস্য অপু সরকার আমার ছেলে দীপককে সঙ্গে নিয়ে বোয়ালমারী সোনালী ব্যাংকে যান। এসময় ব্যাংকের কাগজে দীপকের টিপসই নিয়ে তিনি ভাতার ৪ হাজার ২০০ টাকা উত্তোলন করে আমার ছেলের হাতে মাত্র ১ টাকা দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়।

এ বিষয়ে ইউপি সদস্য অপু সরকার বলেন, ভাতার বই করার জন্য কারও কাছ থেকে কোন টাকা নেইনি। ভাতাভোগী দীপককে ৬০০ টাকা দেয়া হয়েছে। বাকি ৩ হাজার ৫০০ টাকা অফিস খরচ বাবদ ইউপি চেয়ারম্যান এসএম ফারুক হোসেন নিয়েছেন।

একই আভিযোগ করেন অন্য ভাতাভোগী প্রতিবন্ধীরা।

এ ব্যাপারে ৭নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মো. ইউনুস মিয়া বলেন, আমার ওয়ার্ডের সাতটি প্রতিবন্ধী ভাতার বই চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন আটকিয়ে রেখেছে। আমি ইউনিয়ন পরিষদের অফিসে আনতে গেলেও আমাকে বইগুলো দেয়া হয়নি।

বোয়ালমারী সোনালী ব্যাংক শাখা ব্যবস্থাপক মো. খায়রুল হাসান বলেন, প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা বিতরণের জন্য দুই কর্মকর্তা মো. মাহাবুবুল আলম ও মো. নজরুল ইসলামকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। তাদেরকে বারবার দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যাতে কোন অনিয়ম না হয়। কোন অনিয়ম করে থাকলে তদন্তপূর্বক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভাতা বিতরণকারী ব্যাংক কর্মকর্তা মো. মাহাবুবুল আলমকে টাকা বিতরণে অনিয়মের বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি সাক্ষাতে কথা বলা ও চা খাওয়ার দাওয়াত দেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা সমাজসেবা অফিসার প্রকাশ কুমার বিশ্বাস বলেন, প্রতিবন্ধী ভাতার সুবিধাভোগীরা যাতে ঈদুল ফিতরের আগে তাদের ভাতা উত্তোলন করতে পারে সে জন্য ঘোষপুর ইউপি চেয়ারম্যান এসএম ফারুক হোসেনের নিকট গত ২৯ মে ৩০ ভাতাভোগীর বই হস্তান্তর করি। ভাতাভোগীরা বই বা টাকা না পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close