মামুন আহম্মেদ, বাগেরহাট

  ২১ মে, ২০১৯

বেড়িবাঁধে বন্ধ স্লুইসগেট পানিশূন্য খাল-বিল

বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য করে দেওয়া হয়েছে অধিকাংশ স্লুইসগেট। পলে উপজেলাজুড়ে দেখা দিয়েছে তীব্র পানির সংকট। পানির অভাবে শূন্য হয়ে পড়েছে খাল-বিল। এ অবস্থায় চাষাবাদ ও কৃষি কাজের পাশাপাশি দৈনন্দিন গৃহস্থালীর কাজ করতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন উপজেলাবাসী। দীর্ঘদিন এ অবস্থা চলতে থাকলেও সমস্যা সমাধানে তেমন কোন উদ্যোগ গ্রহণ করছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বঙ্গোপসাগর ও সুন্দরবনের কোল ঘেঁষে অবস্থিত দেশের সর্বদক্ষিণের উপজেলা শরণখোলা। চারদিক থেকে বেষ্টিত ৩৫/১ পোল্ডারের বেড়িবাঁধ। এর বিভিন্ন স্থানে ১৯৮৪ সালে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ৩০টি সুইজগেট (জলকপাট) নির্মাণ করেন পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। ওই সব গেইটের মাধ্যমে পানি নিয়ন্ত্রণ করে এ অঞ্চলের জনসাধারণ কৃষিকাজের পাশাপাশি তাদের দৈনন্দিন কাজ কর্মে পানির চাহিদা মিটিয়ে আসছেন।

এদিকে সময়ের ব্যবধানে ধীরে ধীরে অধিকাংশ গেইট অকেজো হয়ে পড়ে আছে। পাশাপাশি উত্তাল ভোলা নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় সেখানে বসতি গড়ে তোলেন স্থানীয়রা। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন রেকর্ডকৃত খাল, বিল, নালা, ডোবা দখলদারদের কবলে চলে যাওয়ায় পানির অভাবে এ অঞ্চলের কৃষকদের কৃষিকাজ বন্ধের উপক্রম হয়ে উঠে।

সচল থাকা ২-৪টি স্লুইসগেট থেকে পানি নিষ্কাশন হলেও শুষ্ক মৌসুমে খালের মাথা পর্যন্ত তা পৌঁছায় না। এছাড়া পাউবোসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও কৃষি বিভাগের তদারকির অভাবে পানির সংকট দিন দিন বাড়তে থাকে। অপরদিকে ২০১৬ সালে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ৩৫/১ পোল্ডারে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করেন চায়নার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। যার ফলে পুরোনো গেটগুলো নতুন করে নির্মাণ শুরু করলে পানিশূন্যতা আরো বৃদ্ধি পায়।

পানি সংকটের বিষয়ে উপাজেলার রাজৈর এলাকার বাসিন্দা কৃষক হানিফ শেখ বলেন, বেড়িবাঁধের নির্মাণ কাজের জন্য দীর্ঘদিন ধরে গেটগুলো বন্ধ। তাই নদী হতে খালগুলোতে জোয়ারের পানি প্রবেশ করতে পারছে না। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকলেও গেটগুলো খুলে দেওয়ার বিষয়ে কোন ভূমিকা নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এছাড়া খাল-বিল, ডোবা, নালা ও জলাশয়গুলোতে পানি না থাকায় গত কয়েক বছর ধরে সামান্য কিছু সবজি চাষাবাদ করলেও তার আশানুরূপ ফলন পাওয়া যায়নি। এ অবস্থা দীর্ঘ দিন চলমান থাকলে উপজেলার কৃষিব্যবস্থা বিপর্যের মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

জানতে চাইলে বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের বাংলাদেশের পক্ষে তদারকির দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলী শ্যামল কুমার দত্ত জানান, পুরোনো স্লুইসগেটগুলো নতুন করে নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ। আশা করা হচ্ছে শিগগিরই ওই গেটগুলো উন্মুক্ত করে দেয়া সম্ভব হবে।

পাানি সংকটের কথা স্বীকার করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিংকন বিশ্বাস ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৌমিত্র সরকার জানান, টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য কিছু স্লুইসগেট বন্ধ করতে হয়েছে। তাই উপজেলাজুড়ে পানির অভাব রয়েছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে শিগগিরই এ সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেওয়া হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close