মামুন আহম্মেদ, বাগেরহাট

  ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

শরণখোলায় সামাজিক বনায়ন ধ্বংস করে মাটি লুট

বলেশ্বর নদী ও বাঁধের পাশের মাটি কেটে নতুন বাঁধ!

বাগেরহাটের শরণখোলায় বাঁধ নির্মাণ করতে গিয়ে সামাজিক বনায়নের কয়েক হাজার গাছ ধ্বংসের মুখে ফেলেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বাঁধের পাশে মাটি কেটে ও বলেশ্বর নদী থেকে মাটি উত্তোলনের ফলে এই অবস্থা তৈরি হয়েছে। অপরদিকে উপকুলীয় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবন রক্ষায় নির্মাণাধিন বেড়িবাঁধটির কাজের মান নিয়ে উঠেছে গুরুতর প্রশ্ন। অভিযোগ আছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে দীর্ঘদিন ধরে উপজেলা জুড়ে মাটি বাণিজ্যের নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা।

উপকূলবাসীকে ঝড়, জলোচ্ছ্বাসসহ বিভিন্ন প্রাকৃতি দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষার্থে বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় ৩ বছর পূর্বে বাঁধ নির্মাণে কাজ শুরু করে এইচ. সি. ডাব্লিউই নামে চীনের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ৩৫/১ পোল্ডারের ৬৩ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ নির্মাণের ব্যয় ধরা হয়েছে ৬০০ কোটি টাকা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাঁধের জন্য প্রয়োজনীয় মাটি সংগ্রহ করা হচ্ছে বাঁধের পাশ থেকে ও বলেশ্বর নদী থেকে। স্থানীয় কিছু অসাধু রাজনৈতিক নেতাদের সহায়তায় উপজেলা জুড়ে মাটি লুটের মহোৎসব শুরু করেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

মাটি সংগ্রহ করতে গিয়ে গত সোমবার সকালে উপজেলার খোন্তাকাটা ইউনিয়নের মধ্য ও পূর্ব খোন্তাকাটার মধ্যবর্তী এলাকা থেকে উপকুলীয় সামাজিক বনায়নের রোপনকৃত নানা প্রজাতির কয়েক হাজার গাছ কাটার তৎপরতা শুরু করেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে মাটি সংগ্রহকারী এক স্থানীয় ঠিকাদারি। এ সময় স্থানীয় বাসিন্দা আ. রহিম গাজী, আনসার হাওলাদার, নজরুল ইসলাম হাওলাদার, বাদল হাওলাদার, আলম তালুকদার, মোতালেব তালুকাদর, সুলতান তালুকদার, জলির তালুকদার, সোবাহান তালুকদার, বাচ্চু হাওলাদারসহ অর্ধশত গ্রামবাসী বনায়নের গাছসহ মাটি না কাটার জন্য বাঁধা দেয়। কিন্তু তাদের বাঁধা উপেক্ষা করে পাউবো ৩৫/১ পোল্ডারের এলাকা ঘেঁষে প্রায় ১৫-২০ একর জমির বনায়নের শত শত গাছ মুহুতেই কেটে ফেলে। পরবর্তীতে স্থানীয়রা বিষয়টি খোন্তাকাটা ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন খান মহিউদ্দিন ও সামাজিক বন বিভাগ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করলে বনায়নটির রক্ষা মেলে।

জানতে চাইলে স্থানীয় যুবলীগ নেতা মহিউদ্দিন মধু বলেন, বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হওয়ার থেকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কিছু লোভী রাজনৈতিক নেতা সরকারি জমিসহ অন্যের মালিকানা জমির মাটি জোর পূর্বক লুট করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এছাড়া বাঁধের কোল থেকে মাটি কেটে চায়না কোম্পানী দায়সারা ভাবে বাঁধের কাজ করছে। এতে বাঁধের স্থায়িত্বসহ সরকারের কোটি কোটি টাকার প্রকল্প পানিতে ভেঁসে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশের পক্ষে বাঁধের নির্মাণ কাজ দেখাশুনার দায়িত্বরত কর্মকর্তা প্রকৌশলী শ্যামল কুমার বলেন, বিষয়টি তিনি শুনেছেন। তবে মাটি সংগ্রহের কাজ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নয়। বাঁধের মাটি সরবারহের জন্য আলাদা ঠিকাদারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে মাটি সংগ্রহের ব্যাপারে এলাকাবাসীর কোন অভিযোগ থাকলে উক্ত মাটি গ্রহন করা হবে না। এছাড়া পরিবেশের ক্ষতি করে বাঁধ নির্মাণ করা প্রতিষ্ঠানটির উদ্দেশ্য নয়।

সামাজিক বনায়নের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা শেখ মো. মিজানুর রহমান বলেন, একাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে তিনি ওই এলাকায় গিয়ে বিষয়টির খোঁজ-খবর নিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান ও নির্বাহী কর্মকর্তার সহযোগীতায় বনের গাছ রক্ষাসহ মাটি খননের কাজ বন্ধ করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করা হবে।

জানতে চাইলে শরনখোলা ইউএনও লিংকন বিশ্বাস জানান, সামাজিক বনায়ন ধ্বংস করে মাটি খননের খবর তিনি এলাবাসীর মাধ্যমে অবগত আছেন। ইতোমধ্যে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান ও সামাজিক বন বিভাগ কতৃপক্ষের সাথে কথা বলে বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close