শাকিল আহম্মেদ, রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী)

  ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

রাঙ্গাবালীতে দড়ি টেনে খাল পার হয় শতাধিক শিক্ষার্থী!

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে ‘মাদারবুনিয়া’ নামক একটি খাল। এর পশ্চিম পাড়ে রসুলবাড়িয়া আর পূর্বপারে মাদারবুনিয়া গ্রাম। পূর্বপারে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় সেখানকার ছেলে মেয়েরা পশ্চিম পাড়ে গিয়ে শিক্ষা গ্রহণ করে। কিন্তু তাদের পারাপার হতে হয় ডিঙি নৌকায়। রশি টেনে পারাপার হতে গিয়ে প্রতিদিনই তাদের কোন না কোন দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়। কখনো রশি পেঁচিয়ে বই-পুস্তক নিয়ে খালে পড়ছে, কখনো আবার শিক্ষার্থীসহ নৌকাই ডুবে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ওই খালের ওপর একটি সেতু নির্মাণের দীর্ঘদিনের দাবি শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর। একটি সেতুই পারে ওই এলাকার মানুষের জীবনমান বদলে দিতে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতিদিন মাদারবুনিয়া গ্রামের প্রায় দেড় শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী নৌকার ওপর নির্ভর করে স্কুলে আসা-যাওয়া করে। এরমধ্যে শিশু শিক্ষার্থীদের সংখ্যাই বেশি। তারা রসুলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্জনের জন্য যায়। কিন্তু নৌকায় রশি টেনে পারাপারে ঝুঁকি থাকায় অনেক শিক্ষার্থী বিদ্যালয় আসা-যাওয়া কমিয়ে দিয়েছে। অভিভাবকরা আতঙ্কের কারণে ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। রসুলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী মানছুরা আক্তার বলেন, ‘রশি টানতে যাইয়া খালে পইর‌্যা যাই। বই-পুস্তক ভিজ্যা (ভিজে) যায়। রশিতে প্যাচাইয়া (পেঁচিয়ে) পড়ি। সরকার আমাগোরে একটা পোল (সেতু) দিলে ভাল ওয় (হয়)। হেলে আমাগো আর কষ্ট ওইবে (হবে) না।’ স্থানীয় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানায়, বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় দুই পাড়ের মানুষ নৌকায় পারাপার হয়। এলাকাবাসীর উদ্যোগে মাদারবুনিয়া খাল পারাপারের জন্য একটি নৌকার ব্যবস্থা করা হয়। তবে নৌকা চালানোর জন্য নির্ধারিত কোন মাঝি নেই। দুই পাড়ে নৌকার সঙ্গে বাঁধা রশি টেনে আসা-যাওয়া করে স্কুল শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে খালের পূর্বাংশের মাদারবুনিয়া এলাকায় কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি অনেক বেশি। শুধু শিক্ষার্থী নয়, এ দুর্ভোগ পুরো এলাকাবাসীর। স্থানীয়রা বলেছেন, নির্বাচন এলেই প্রার্থী ও নেতারা এই খালে সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু নির্বাচনের পর আর তাদের মনে থাকে না।

রসুলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবু জাফর বলেন, ‘মাদারবুনিয়ার প্রায় দেড়শ ছাত্র-ছাত্রী আমাদের স্কুলে ভর্তি আছে। নৌকায় পারাপারে ঝুঁকি থাকায় অনেকে নিয়মিত স্কুলে আসে না। কিন্তু খালটিতে একটি সেতু থাকলে শিক্ষার্থী উপস্থিতি শতভাগ থাকতো বলে আশা করি।’ উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জেসমিন সুলাতানা বলেন, ‘ওই খালে ডুবে তিন শিশু মারা গেছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে খালটিতে একটি সেতু নির্মাণ করা প্রয়োজন।’

এ ব্যাপারে এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী মো. আতিকুর রহমান তালুকদার বলেন, ‘এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি অনুযায়ী মাদারবুনিয়া খালের ওপর একটি সেতুর নির্মাণের জন্য এমপি মহোদয় আমাদেরকে বলেছেন। ইতোমধ্যে দুই পাড়ে সংযোগ সড়কের জন্য একটি প্রজেক্টে প্রস্তাব করা হয়েছে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close