খন্দকার রবিউল ইসলাম, রাজবাড়ী

  ১৭ জানুয়ারি, ২০১৯

আর্সেনিক আতঙ্কে ২৮ গ্রামের মানুষ

আর্সেনিক আতঙ্কে রয়েছে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার ২৮টি গ্রামের মানুষ। এরই মধ্যে উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের ২৮টি গ্রামের টিউবওয়েলের পানিতে আর্সেনিক শনাক্ত করেছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর। সংশ্লিষ্ট অফিসে এসে বিনামূল্যে আর্সেনিক পরীক্ষার তাগিদ দিয়েছেন উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী।

বালিয়াকান্দি উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের তথ্য মতে, উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের আওতায় রয়েছে প্রায় ১৫০টি গ্রাম। গ্রামগুলোয় অধিদফতরের দেওয়া টিউবওয়েলের সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার ২০০। এছাড়া ব্যক্তিগত টিউবওয়েল রয়েছে প্রায় ২৫ হাজার।

জরিপ অনুযায়ি উপজেলা ইসলামপুর ইউনিয়নের ঠাকুর নওপাড়া, শামুকখোলা, শেকাড়া, নওপাড়া, তেনাই শিবপুর; বহরপুর ইউনিয়নের বাবুলতলা, রায়পুর, ইলিশকোল, কুবদি, চরগুয়াদাহ, মধুপুর; নবাবপুর ইউনিয়নের কুড়িপাড়া পদমদী, সোনাপুর, কুরশী, সদাশিপুর, দিলালপুর, বড় হিজলী, মেসুয়াঘাটা, পদমদী, সোনাইকুড়ি, হোগলাডাঙ্গী; বালিয়াকান্দি ইউনিয়নের পাইককান্দি, শালমারা, নারুয়া ইউনিয়নের নারুয়া, এলাঙ্গীডাঙ্গী এবং জঙ্গল ইউনিয়নের শশাপুর, নতুন ঘুরঘুরিয়া, বন্যাতৈলসহ ২৮টি গ্রামের কিছু টিউবওয়েলের পানিতে আর্সেনিক রয়েছে। সর্বাধিক মাত্রায় আর্সেনিক পাওয়া ১০টি টিউবওয়েল বন্ধ করা হয়েছে বলে জানান তিনি। তবে বালিয়াকান্দি উপজেলার আরো শতাধিক গ্রামের টিউবওয়েলগুলোর ব্যাপারে জনস্বাস্থ্যের কাছে কোনো তথ্য নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি উপজেলার বহরপুর ইউনিয়নের বাবুলতলা গ্রামে কিছু মানুষ আর্সেনিকে আক্রান্ত হয়েছেন। বাবুলতলা গ্রামের ওসমান মোল্লার পরিবারের সবার হাতে-পায়ে ও শরীরের বিভিন্ন অংশে ঘা দেখা দিয়েছে। সারা শরীরে ব্যাথা আর প্রচ- চুলকানি অনুভব করছেন বলে জানান তারা।

একই গ্রামের রোকেয়া বেগম টিউবওয়েলের পানিতে আর্সেনিক দেখা দেওয়ায় পাশের বাড়ি থেকে খাওয়ার পানি সংগ্রহ করছেন। তবে থালা-বাসন ধোয়ার কাজে বাড়ির টিউবওয়েলের পানি ব্যবহার করেন তিনি। তার হাতের আঙুলের ফাঁকে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে।

রাজবাড়ী জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী ইব্রাহিম মো. তৈমুর জানান, রাজবাড়ী জেলার ৪২টি ইউনিয়নে নিরাপদ পানির উৎস দেওয়ার চেষ্টা করে আসছি। রাজবাড়ী সদর উপজেলাসহ ১৮-১৯টি ইউনিয়নে আর্সেনিকের মাত্রা অনেক বেশি আছে। বাকিগুলোতে মাত্রা হয়তো কম। তবে এসব ইউনিয়নে গভীর-অগভীর, তারা, রিং ওয়েলসহ বিভিন্ন মাধ্যমে নিরাপদ পানি দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে জেলা জনস্বাস্থ্য অধিদফতর। এ জন্য সাধারণ মানুষের বাড়িতে থাকা সরকারি বা বেসরকারি টিউবওয়েলের পানি পরীক্ষার জন্য উপজেলা পর্যায়ের অফিসে উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও মেকানিকগণের দ্বারস্থ হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ১০ জন মানুষের জন্য একটি নিরাপদ পানির উৎস নিশ্চিত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন বলেও জানান এ কর্মকর্তা।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদফতরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাসুদ রেজা জানান, সর্বশেষ ২০০৩ সালে সাতটি ইউনিয়নে খুব সীমিত আকারে আর্সেনিক জরিপ করা হয়। ওই বছরই প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর কার্যালয়ে কেউ পানি নিয়ে এলে আর্সেনিক পরীক্ষা করা হয়। তাছাড়া জরিপকৃত ২৮টি গ্রামের সবগুলো টিউবওয়েলের একটি ছোট নমুনা মাত্র পরীক্ষা করা হয়েছে। ফলে এখনো বিপুলসংখ্যক মানুষ আর্সেনিক ঝুঁকির মধ্যে আছেন বলেও মনে করেন তিনি। সংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ২০০৩ সালের পরে আর কোন ঢালাও জরিপ করা হয়নি।

বালিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এএসএম আব্দুল্লাহ আল মুরাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত মোট ১৫ জন আর্সেনিকে আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে চারজন রোগী সনাক্ত করে চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এখন মানুষ সচেতন, যার কারণে দিন দিন আর্সেনিকে আক্রান্তের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। আমার দফতর থেকে আর্সেনিক আক্রান্ত রোগী সার্চিং প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে’। যারা টিউবওয়েলের পানি পরীক্ষা করেননি তাদেরকে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তর থেকে টিউবওয়েলের পানি পরীক্ষার অনুরোধ করেন তিনি। তাছাড়া আর্সেনিকে আক্রান্ত রোগীকে হাসপাতালে এসে চিকিৎসা গ্রহণের পরামর্শ দেন তিনি।

ইউএনও মাসুম রেজা জানান, উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দফতর থেকে তালিকা নেওয়া হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী গ্রামগুলোতে আর্সেনিকযুক্ত টিউবওয়েলগুলো বন্ধসহ বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক মো. শওকত আলী বলেন, বালিয়াকান্দিতে কয়েকজন আর্সেনিকে আক্রান্ত হয়েছেন বলে আমি জানতে পেরেছি। বিষয়টি নিয়ে আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর সাথে কথা বলেছি। তাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দিয়েছি।

রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন মো. রহিম বক্স বলেন, ‘বালিয়াকান্দিতে কয়েকজন আর্সেনিক আক্রান্ত হয়েছেন। এ বিষয়ে আমি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর সাথে কথা বলেছি। আসলে নিরাপদ পানির ব্যবস্থাকরণের দায়িত্ব তো তাদের। বালিয়াকান্দি স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকেও আর্সেনিক আক্রান্তদের বিষয়টি জানিয়েছি। তারা মাঠপর্যায়ে ব্যবস্থা নিবেন।’ আর্সেনিক আক্রান্তদের আর্সেনিকমুক্ত পানি ব্যবহার করাসহ প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close