গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি

  ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

গোয়ালন্দ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

ছয় মাস ধরে বিকল এক্সরে-জেনারেটর

ছয় মাস ধরে বিকল রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একমাত্র এক্সরে মেশিনটি। একই সঙ্গে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে হাসপাতালের জেনেরেটর মেশিন। আর এ সুযোগে ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো শুরু করেছে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে এক্সরে বাণিজ্য। নিরুপায় রোগীরা হয় বেশি টাকায় এই পরীক্ষা করাচ্ছে, নয়তো প্রায় ২০ থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে রাজবাড়ী সদর বা ফরিদপুর সদরে গিয়ে এক্সরে করতে বাধ্য হচ্ছে। এতে বাড়তি অর্থ অপচয়সহ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে এ উপজেলাসহ আশপাশ এলাকার মানুষ।

হাসপাতালে ভর্তীকৃত ৮-১০ জন ছাড়াও প্রতিদিন গড়ে ২০-২৫ জনের এক্সরে করতে হতো বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়। কর্তৃপক্ষ বলছে, এক্সরে মেশিন রুমে বিদ্যুৎ সংস্কারের কাজ করতে গিয়ে বিকল হওয়ার পর আর ঠিকই করা হয়নি। স্থানীয়ভাবে ছাড়াও ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোয়ালন্দ বাজারের পাশে অবস্থিত হওয়ায় ৫০ শয্যার গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গুরুত্ব অনেক। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম প্রবেশদ্বার হওয়ায় প্রতিদিন গোয়ালন্দ উপজেলাসহ মহাসড়কের ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটে। এসব দুর্ঘটনার শিকার রোগীসহ পাশের রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানখানাপুর এলাকার অনেক রোগী এখানে চিকিৎসা নিতে আসে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দেয়ালে টাইলস বসানোর কাজ করতে এক্সরে মেশিন কক্ষে বৈদ্যুতিক লাইনের কিছু কাজ করতে যায় ইলেকট্রিশিয়ানরা। পর দিন ১৪ ফেব্রুয়ারি জনৈক রোগীর এক্সরে করা অবস্থায় মেশিনটি বিকল হয়ে যায়। এরপর থেকে মেশিনটি দিয়ে কোনো এক্সরে করা যাচ্ছে না।

সরকারি হাসপাতালে এক্সরে মেশিন বিকল থাকার সুযোগে স্থানীয় ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো দুই থেকে তিন গুণ টাকা নিয়ে এক্সরে সম্পন্ন করছে। হাসপাতালসংলগ্ন এক ফার্মেসির মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, এমনিতে যে এক্সরে করতে ১২০ টাকা লাগার কথা, তা এখন আড়াই শ থেকে ৩০০ টাকা নিচ্ছে। অনেকের কাছ থেকে আরো বেশি নিচ্ছে। অসহায় হয়ে পড়া রোগীরা তাদের চাহিদামতো টাকা দিতে বাধ্য হচ্ছে।

গোয়ালন্দ পৌর এলাকার টিটন সরদার জানান, তার এক আত্মীয় কোমরে ব্যথা নিয়ে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যান। সেখান থেকে এক্সরে করতে বলা হয়। এক্সরে করার জন্য ন্যাশনাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গেলে ৩০০ টাকা রাখে। পাশাপাশি হাসপাতাল থেকে রোগী টেনে নেওয়ার হয়রানির শিকার হতে হয়।

হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিকেল টেকনোলজিস্ট রেডিওলোজি মো. কামরুল হাসান জানান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইলেকট্রিশিয়ান এসে এক্সরে মেশিনের কিছু তার সরানোর কাজ করেন। পরদিন এক রোগী এক্সরে করা অবস্থায় হঠাৎ শব্দ হয়ে মেশিনটি বন্ধ হয়ে যায়। অথচ প্রতিদিন অন্তত ভর্তীকৃত ৮-১০ জন ছাড়াও গড়ে ২০-২৫ জনের এক্সরে করতে হতো। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একাধিক চিকিৎসক জানান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাশে স্থাপিত হওয়ায় প্রতিদিন উপজেলাসহ নানা অঞ্চলের অনেক দুর্ঘটনার রোগী এখানে আসে। চিকিৎসক সংকট ছাড়াও এক্সরে বন্ধ রয়েছে। এ ধরনের রোগীকে বাধ্য হয়ে বাইরে থেকে এক্সরে করতে হচ্ছে।

গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আসিফ মাহমুদ প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, এক্সরে মেশিনটি বিকল থাকার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করলে ঢাকা থেকে টেকনিশিয়ান এসে এটি মেরামতযোগ্য কিনাÑতা পরীক্ষা করে গেছেন। মেশিনটি দীর্ঘদিন পুরোনো হওয়ায় মেরামত করা অনেকটা অসম্ভব বলে জানিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে একটি নতুন এক্সরে মেশিনের আবেদন করা হয়েছে। এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আরো বলেন, বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এক্সরে বাবদ রোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করার বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে কেউ নিয়ে থাকলে এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close