আশরাফুল আলম, সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ)

  ০৭ আগস্ট, ২০১৮

সামনে ঈদুল আজহা

সোনারগাঁয়ে ব্যস্ত সময় কাটছে কামার শিল্পীদের

আসন্ন ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কামার শিল্পীরা। দম ফেলবারও যেন ফুসরত পাচ্ছেন না তারা। দিনরাত টুং টাং শব্দে মুখরিত সোনারগাঁয়ের বিভিন্ন হাটবাজারগুলো।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, স্থানীয় পেশাদারি কামার শিল্পিরা মোগরাপাড়া চৌরাস্তা, কাইকারটেক, লাঙ্গলবন্দ বাজার, কাঁচপুর, নয়াপুর, দড়িকান্দি, মেঘনা, মঙ্গলেরগাঁও, বারদী, আনন্দবাজারসহ উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে দা, বটি, চাকু, ছোরা, কুড়াল, চাপাতিসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম তৈরি করছে কামাররা। এসব ব্যবহৃত জিনিস স্থানীয় চাহিদা মিটানোর পাশাপাশি দেশের বিভিন্নস্থান থেকে আসা পাইকারি ব্যবসায়ীরা নিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় বাজার থেকে লোহা কিনে সেগুলো আগুনে পুড়িয়ে দা, বটি, চাকু, ছোরা, কুড়াল, চাপাতিসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করছে কামার শিল্পীরা।

স্থানীয় কামার শিল্পীরা জানান, বর্তমানে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহারের ফলে কৃষি কাজে ব্যবহৃত দেশীয় তৈরি সব পুরনো উপকরণ আর তেমন ব্যবহৃত হচ্ছে না। প্রযুক্তি নির্ভর কৃষিতে লোহার তৈরি পুরনো সব উপকরণের যোগ্যতা এখন আর নেই বললেই চলে। কৃষি উপকরণসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ তৈরিতে জড়িত কামার শিল্পীদের প্রায় সারা বছর মন্দাভাব নিয়ে সংসারের গ্লানি টানতে হয়। কিন্তু প্রতি বছর কোরবানির ঈদের পূর্বে এক/দেড় মাস মহাব্যস্ত সময় পার করেন কামার শিল্পীরা। স্থানীয় মঙ্গলেরগাঁও বটতলা বাজারের কামার শিল্পী বাসু কর্মকার জানান, এক সময় লোহা আগুনে পুড়িয়ে দা, বটি, কোদাল, খন্তা, সাবল, টেটা, কাচি, চাকু, ছোরা, কুড়াল, চাপাতিসহ কৃষি উপকরণের বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরিতে কামারদের যথেষ্ট চাহিদা ও কদর ছিল। কিন্তু বর্তমানে সে কদর আর চাহিদা কোনোটাই নেই বললেই চলে। মেশিনের সাহায্যে বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রপাতি তৈরি হচ্ছে। ফলে কামারদের তৈরি যন্ত্রপাতির প্রতি মানুষ দিনদিন আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।

তিনি আরো বলেন, হয়তো বা এক সময় এই পেশা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তবে কোরবানির ঈদের সময় আমরা একটু আশাবাদী হই। সারা বছরের তুলনায় কোরবানির ঈদের সময় রোজি-রোজগার অনেক বেশি হয়।

বাসু কর্মকার আরো বলেন, বাপ-দাদার কালের এই পেশা আমি তাদের কাছেই শিখেছি। লেখাপড়া না জানার কারণে অন্য কোনো কাজে যেতে পারি না। সারা বছরই সংসার অভাবে চলে। অন্য কোনো কাজ জানাও নেই। সারা বছর তেমন কোনো কাজ না থাকলেও কোরবানির সময় আমাদের কাজের চাহিদা অনেকগুণ বেড়ে যায়। এ সময় আমার স্ত্রী রানীবালা আমাকে এ কাজে সাহায্য করেন। দুজন মিলে কাজ করলে কোরবানির ঈদের সময়টুকুতে সংসার নিয়ে একটু ভালো থাকি।

এ ব্যাপারে বিভিন্ন হাটের কামার শিল্পীরা জানান, এই পেশায় যারা আছেন তারা খুবই অবহেলিত। বর্তমান বাজার মূল্যের যে উর্ধগতি সে অনুযায়ী তারা কাজের ন্যায্য মূল্য পান না। এই পেশায় থেকে সংসার চালাতে খুবই কষ্ট হয়। কামার শিল্পীরা মনে করেন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও কোনো আর্থিক সহযোগিতা না পেলে এ শিল্প হয়তো অচিরেই হারিয়ে যাবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close