জিন্নাতুল ইসলাম জিন্না, লালমনিরহাট

  ২০ এপ্রিল, ২০১৮

দুই বছরেও শেষ হয়নি এক কিলোমিটার রাস্তার কাজ

দুই বছর ধরে দফায় দফায় সময় বৃদ্ধির পরও শেষ করতে পারেনি এক কিলোমিটার রাস্তার নির্মাণ কাজ। প্রতিনিয়ত ঘটেছে দুর্ঘটনা। চরম ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারন জনগণ। পায়ের আঘাতেই মিশে যাচ্ছে রাস্তায় ডাব্লুবিএমে ব্যবহৃত লাগানো ইট। কাজের গতি ও মান নিয়ে বিস্তার অভিযোগ এলাকাবাসীর। পর পর ৫টি চিঠি দিয়েও কাজের মান বা গতি বাড়াতে পারেনি বাস্তবায়নকারী লালমনিরহাট সদর উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ।

সদর উপজেলা প্রকৌশল দফতর জানায়, সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহি সিন্দুরমতি পুন্যস্নানে আগতসহ এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য ইউনিয়নের বাবুর কালীরপাঠ থেকে সিন্দুরমতি বাজার পর্যন্ত এক কিলোমিটার রাস্তা পাকাকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এজন্য গ্রামীন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ৫৬ লাখ ৫৭ হাজার ১৮০ টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়।

কাজটি বাস্তবায়নে দরপত্র আহ্বান করা হলে সর্বচ্চ কমিশনে ৫২ লাখ এক হাজার ৫০৮ টাকায় কাজ করতে চুক্তিবদ্ধ হন কুড়িগ্রামের মোস্তফা ট্রেডার্স নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। শুরুতে নিম্নমানের কাজের অভিযোগে সতর্ক করে দিয়ে নিম্নমানের ইট বালু সড়িয়ে দেয় প্রকৌশল বিভাগ। পুনরায় নিম্নমানের কাজের অভিযোগে উচ্চতর তদন্ত টিম নামে কাজটি পরিদর্শনে। এভাবে শেষ হয় চুক্তিকালীন এক বছর মেয়াদ। দীর্ঘ দিন কাজ বন্ধ রেখে এক বছর মেয়াদ বাড়িয়ে নেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি। মেয়াদ অনুযায়ী চলতি বছরের জুনের মধ্যে কাজ সমাপ্ত করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত ৫০ শতাংশ কাজ শেষ করতে পারেননি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি। জনদুর্ভোগ লাঘবে কাজের গতি ও গুণগত মান বাড়াতে দুই বছরে ৫টি চিঠি দেয়া হলেও কোন কাজে আসেনি বলে উপজেলা প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমানের দাবি।

স্থানীয়রা জানান, রাস্তা কেটে কয়েক মাস ফেলে রাখে। এরপর নিম্নমানের বড় বড় খোয়া ও বালুর পরিবর্তে কাদামাটি ফেলে রোলার না দিয়ে কয়েক মাস ফেলে রাখা হয়। ফলে পথচারীরা এ রাস্তায় চলাচল করতে গিয়ে প্রতিদিনই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। রাস্তায় ব্যবহৃত খোয়া পা দিয়ে চেপে ধরলে মাটির সাথে মিশে যাচ্ছে। এমন ইটের তৈরি এ রাস্তার স্থায়িত্ব নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। উচ্চতর তদন্ত করে রাস্তাটি উপযুক্তভাবে নির্মাণের জন্য এলজিইডি লালমনিরহাটের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবরে স্থানীয়রা লিখিত আবেদন করেছেন।

সিন্দুরমতি এলাকার বাসিন্দা দলিল লেখক নুরুন্নবী জানান, কাজে গতি নেই বললেই চলে। খোয়ার ডাম্পিং ৬ ইঞ্চির কথা দেয়া থাকলেও দেয়া হয়েছে আড়াই থেকে তিন ইঞ্চি। রাস্তাটি ১০ফিট প্রস্থের স্থলে করা হচ্ছে ৯ফিট।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সদর উপজেলা প্রকৌশল দফতরের এক কর্মকর্তা জানান, কাজটির ব্যবহৃত সরঞ্জমের ৭০ ভাগই নিম্নমানের। কিন্তু ঠিকাদার বাইরের জেলার হওয়ায় তেমন কোন পদক্ষেপ নিতে পারছেন না প্রকৌশলীরা।

পঞ্চগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান দেলওয়ার হোসেন মাস্টার জানান, পুরো উত্তরাঞ্চলের হিন্দুরা পুন্যস্নানে সিন্দুরমতি আসেন। এমন একটি জন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে নির্মাণ কাজে শুধু ধীরগতিই নয়। কাজের মান একে বারেই নিম্নমানে। এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশল দফতর ও উপজেলা সমন্বয় কমিটিতে আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু কোন কাজ হয়নি। আমি বারংবার বিষয়টি প্রকৌশল দফতরে জানানোর পরও কোন ফল পাওয়া যাচ্ছেন না। প্রায় একই কথা বলেন ইউনিয়নের মহিলা সদস্য আকলিমা বেগম জানান, যেহেতু রাস্তাটি ইউনিয়নের আমার ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের উপর দিয়ে নির্মাণ হচ্ছে তাই এলাকার লোকজন আমাকে বার বার বলছে। স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক ডা. সুভাষ চন্দ্র জানান সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসা দেওয়ার কথা।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটির প্রোপাইটার গোলাম মোস্তফা জানান, সংশ্লিষ্ট দফতর তদন্ত করে যতটুক কাজ পাবে, ততটুকুই বিল নেওয়া হবে। বর্ধিত মেয়াদের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ এবং কাজের মান সঠিক রয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন।

লালমনিরহাট সদর উপজেলা প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান জানান, জনদুর্ভোগ লাঘবে কাজের মান ও গতি বাড়াতে ঠিকাদারকে পর পর ৫টি চিঠি দেয়া হয়েছে। সর্বোচ্চ কমিশনে কাজ নেয়ায় ঠিকাদার লোকসান না করতে এমন গড়িমসি করছেন বলে তিনি জানান। এখন পর্যন্ত অর্ধেক বিল পাওনা রয়েছে। তবে কাজ বুঝে না নিয়ে আর বিল দেয়া হচ্ছে বালেও দাবি করেন তিনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist