মুরাদনগর (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
মুরাদনগর মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয় নিরন্তর ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা
কথায় বলে, ‘ধ্যানের চর্চা হয় গুহায়, ধর্মের চর্চা হয় মসজিদ-মন্দিরে। আর পরিবারে নীতি এবং বিদ্যার চর্চা হয় বিদ্যালয়ে।’ কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলা সদরে ৭৫ বছর ধরে যে প্রাথমিক বিদ্যালয়টি শিক্ষার আলো ও মনুষ্যত্বের বীজ রোপন করে আসছে সেটি হলো মুরাদনগর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। অবকাঠামো ও পরিবেশের দিক থেকে ভাল অবস্থা থাকলেও শ্রেণিকক্ষ, শিক্ষক, স্যানিটেশন ও বিশুদ্ধ পানির সংকটসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত এ স্কুলটি। এতে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা মানববন্ধন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে স্মারকলিপি প্রদান করে স্কুলটির কোনো সমম্যার সমাধান হয়নি। প্রতিটি কক্ষে গাঁদাগাদি করে দেওয়া হচ্ছে শিক্ষার্থীর পাঠদান। এতে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ে প্রশাসনিক কার্যক্রমসহ শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
সরেজমিন জানা যায়, স্থানীয় এক শিক্ষানুরাগী পরিবারের উদ্যোগে ১৯৪০ সালে ৩৫ শতাংশ জমির উপর বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়। পরে ২০০৩ সালে স্কুলটির ৩ শতক জমিতে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ভবন নির্মাণ করায় বিদ্যালয়টির জায়গা আরো ছোট হয়ে পড়ে। ১৯৭৩ সালে স্কুলটি সরকারিকরণ করা হয়। বর্তমানে দু’তলা একটি, একতলা দুটি ভবন রয়েছে। একটি অফিস রুমসহ শ্রেণিকক্ষ গুলোতে গাঁদাগাদিভাবে চলছে বিদ্যালয়ের শিক্ষার কার্যক্রম। যে কারণে গরমকালে অনেক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ছে। গত প্রায় এক যুগ থেকে উপজেলার মডেল সরকারি প্রথমিক স্কুলটি নানান সমস্যার মধ্যে আছে। স্কুলটিতে শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে প্রায় ৮ বছর মুরাদনগর ডিআর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ছাত্রাবাসের ফাঁটল ভবন ও নোংরা পরিবেশে পাঁচটি রুম ব্যবহার করে পাঠদান চলছে। বিদ্যালয়টিতে শ্রেণিসংখ্যা পাঁচটি, শাখা ১৪টি, এক হাজার শিক্ষার্থীদের জন্য এক শিক্ষক, শ্রেণিকক্ষ, খেলার মাঠ, টয়লেট ও আর্সেনিকমুক্ত পানির সংকটের মধ্যে চালানো হচ্ছে পাঠদান। স্কুলটিতে প্রতি বৎসর ১০০% শিক্ষার্থী বিভিন্ন পরীক্ষায় পাশসহ প্রতি বৎসর পঞ্চম শ্রেণিতে ১০/১২ শিক্ষার্থী বৃত্তি পেয়ে যাচ্ছে।
আরও জানা যায়, বিদ্যালয়টি উপজেলার সর্বপ্রথম মডেল বিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি পেলেও আজো মডেল হিসেবে গড়ে উঠতে পারেনি। উপজেলা বিভিন্ন বিদ্যালয়ে ডিজিটালের ছোঁয়া লাগলেও বিদ্যালয়টিতে এখনো কোনো ডিজিটালের ছোঁয়া লাগেনি। বিদ্যালয়ের পাশে ময়লা-আবর্জনা ফেলায় কারণে দুর্গন্ধে ক্লাশরুমে বসা কঠিন হয়ে পড়েছে। এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, স্কুলে জমির পরিমাণ কম হওয়ায় এখানে কোনো ভবন নির্মাণ করা যাচ্ছেনা। জমি স্বল্পতার মধ্যেও বিদ্যালয়টির স্থানে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য তৈরি করা হয় রির্সোস সেন্টার এতে করে স্কুলটির জায়গা স্বল্পতা আরো চরম আকার ধারন করেছে। স্কুল সূত্রে আরও জানা যায়, মডেল স্কুলে ২২ জন শিক্ষকের স্থলে রয়েছে ১৭ জন, প্রতি শ্রেণিতে শাখা রয়েছে পাঁচটি করে, প্রতি শ্রেণিতে ছাত্র সংখা ৩০ জন থাকার স্থল রয়েছে ৪৫ জন।
এ বিষয়ে মুরাদনগর মডেল সরকারি প্রথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. গিয়াস উদ্দিন সরকার জানান, উল্লেখিত বিষয়গুলো নিয়ে বেশ কয়েকবার কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা ছাড়া সমস্যা সমাধানের সম্ভব নয়। উপজেলা শিক্ষা অফিসার এএনএম মাহাবুব আলম জানান, জায়গার স্বল্পতার কারণে উক্ত বিদ্যালয়ে বিল্ডিং করা যাচ্ছে না। তারপরও পুরাতন একটি ভবন ভেঙে পিডিবি-৩ এর আওতায় পুরাতন দুই তলা ভবনটি ভেঙে ঐ স্থানে চারতলা করার পরিকল্পনা রয়েছে। নতুন যে ভবনটি তৈরি করা হয়েছে তাকে দোতলা করার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
"