আহমদ আবদুল্লাহ
বিপদে বন্ধুর পরিচয়
বনে মন খারাপ করে একা বসে আছে হাতি। তার কোনো বন্ধু নেই। হাতি চাইছে কারো বন্ধু হতে, যার সঙ্গে সুখ-দুঃখের গল্প করে সময় কাটানো যাবে। কিন্তু কাউকে পাচ্ছে না। তবে থেমে নেই হাতি, উঠে পড়ল বন্ধুর খোঁজে। হঠাৎ একটি গাছে বানর নজরে পড়ল। হাতি বলল, ‘বান্দর ভাইয়া! তুমি আমার বন্ধু হবে?’ বানর বলল, ‘মিয়া, আপনার শরীর আর আমার শরীর দেখুন। আমি গাছের ওপর থাকি, আপনি মাটিতে। আপনি আমার মতো গাছে উঠতে পারবেন না কখনো। আপনার সঙ্গে কিভাবে বন্ধুত্ব করি?’ হাতি বানরের কথা শুনে উদাস মনে চলে গেল সেখান থেকে। কিছুদূর এগোতেই খরগোশ নজরে পড়ল। সঙ্গে সঙ্গে খরগোশকে বলল, ‘খরগোশ ভাইয়া! তুমি আমার বন্ধু হবে?’ খরগোশ হাতির কথা শুনে হেসে বলল, ‘হাতি সাহেব, একটু নিজ শরীরের দিকে দৃষ্টি দিন আর আমার শরীর দেখুন। আমি ঘাসের ভেতরে থাকি। আপনি আমার ঘরে কখনো আসতে পারবেন না। তাহলে কিভাবে আমরা বন্ধু হবো?’ এরপর খরগোশ কালবিলম্ব না করে দ্রুত নিজ গন্তব্যের দিকে রওয়ানা হলো। আচানক বনের সব প্রাণী দৌড়ে পালাচ্ছে। হাতি তৎক্ষণাৎ পথিমধ্যে শিয়ালকে বলল, ‘কী হলো? সবাই পালাচ্ছে কেন?’ শিয়াল বলল, ‘বনের বাদশাহ সিংহ আসছে, দ্রুত পালান। অন্যথায় আপনাকেও খেয়ে ফেলবে।’ হাতি যখন সিংহ দেখল, ঠিক তখন সিংহ হরিণের ওপর আক্রমণ করছিল। হাতি দ্রুত সিংহকে বলল, ‘বনের বাদশাহ, এমন নিরীহ প্রাণীর ওপর কেন আক্রমণ করছ?’ সিংহ ক্রোধভরে হাতির দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আমাকে বাধা দেওয়ার তুমি কে? দাঁড়াও, এখন তোমাকে আক্রমণ করব।’ এই বলে সিংহ হরিণকে ছেড়ে হাতির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। হাতি শুঁড় দিয়ে সিংহকে নিচে ফেলে দিল। সঙ্গে সঙ্গে পা দিয়ে সিংহকে চাপা দিল। এতে সিংহ নড়াচড়া করা শক্তি হারিয়ে ফেলল। সিংহ ভাবল, ‘হাতি আমার চেয়ে অনেক শক্তিশালী। সুতরাং তার সঙ্গে লড়াই করা মানে নিজেকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া।’ হাতি অস্পষ্টভাবে বলল, ‘হাতি ভাই! আমাকে মাফ করে দাও। আমি তো ঠাট্টা করছিলাম। আর কখনো কোনো প্রাণীর ওপর আক্রমণ করব না। এই যে, তোমার কাছে অঙ্গীকারবদ্ধ হলাম।’ হাতি সিংহকে ছেড়ে দিল। সিংহও তাড়াতাড়ি সেখান থেকে পলায়ন করল। সব প্রাণী তখন হাতিকে ধন্যবাদ জানাল। সবাই একবাক্যে বলল, ‘হাতি, আপনি আজ থেকে আমাদের বন্ধু। কেননা, বিপদে মাঝে মাঝে বন্ধুও অনেক কাজে আসে। সুতরাং বিপদে আপনি আমাদের পাশে থাকবেন।’ হাতিও খুশি মনে তাদের সঙ্গে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিল।
"