নুশরাত রুমু

  ০৫ অক্টোবর, ২০১৯

শাপলা বিলে দুই বন্ধু

সেদিন ছিল শুক্রবার। ছুটির দিন। পড়াশোনার চাপ নেই। সকালের নাশতা শেষ করেছে পুলক। মাকে কাজে ব্যস্ত হতে দেখেই টুক করে বেরিয়ে গেল সে। খেলার মাঠে এসে দেখল ওর বন্ধু জিহান আগেই এসে দাঁড়িয়ে আছে। পাশাপাশি বাড়ি ওদের। দুই বন্ধুতে খুব ভাব। দুজনেই এবার পঞ্চম শ্রেণিতে উঠেছে। কিন্তু আজ ওরা মাঠে খেলার সুযোগ পেল না। এলাকার বড় ভাইয়েরা ক্রিকেট খেলছে সেখানে। মনটা খারাপ হয়ে গেল। একে অপরের দিকে তাকিয়ে ভাবছে। কী করা যায়। ছুটির দিনে খেলার মজাটা পাওয়া হলো না। বাড়ির ফিরে যাওয়ারও ইচ্ছে নেই।

পুলক সরল ছেলে, মাথায় বুদ্ধি কিছু কম। জিহান আবার বেশ চটপটে। যেকোনো কাজে বুদ্ধিতে তার জুড়ি নেই। যদিও তার বেশির ভাগ বুদ্ধি সুফল বয়ে আনে না। আজও সে সময় কাটানোর বুদ্ধি বের করে ফেলল।

চল আমরা আজিজ চাচার ছোট নৌকাটা নিয়ে বিল দেখতে যাব।

কিন্তু উনি তো নৌকা দেবেন না। আগেও দুবার মানা করেছিল।

ধুর, ওনাকে কে বলতে যাচ্ছে। উনি বাড়ি নেই।

কেন?

গতকাল বিকালে রাতু বুবুর শ্বশুরবাড়ি গেছে, আমি দেখেছি। বিকালের আগে ফিরবে না।

তাহলে দারুণ সুযোগ!

যা বলেছিস, জলদি চল।

দুজনেই আজিজ চাচার বাড়ির পাশে খালের দিকে এগিয়ে গেল। সেখানে সব সময়ই তার ডিঙি নৌকাটা বাঁধা থাকে। তিনি সেটা দিয়ে মাছ ধরেন। শাপলা তোলেন।

সাবধানে পা টেনে নৌকায় উঠল পুলক। বৈঠা হাতে নিল।

জিহান দ্রুত নৌকাটা ঠেলে নিজেও লাফিয়ে নৌকায় ওঠে বসল। চারদিকে সুর্ক চোখে তাকিয়ে বলল তাড়াতাড়ি চালা। কেউ দেখার আগে খালটা পেরোতে হবে। নৌকার এক কোণে একটা হুঁকোর কলকে রাখা। জিহান সেটা নেড়ে দেখল। নাহ্ তামাক নেই। পানের ছোট ডিব্বাটাও একেবারে খালি। কিপটেটা এক টুকরো সুপারিও রাখেনি। পুলক একটু বিরক্ত হলো, রেখে দে এসব। সামনে তাকিয়ে দেখ...

খাল পেরিয়ে নৌকা নিয়ে ওরা বিলে গিয়ে পড়ল। সকালের রোদের ঝলকানিতে বিলের পানি ঝিকমিক করছে। একটু দূরেই রাশি রাশি শাপলা ফুটে আছে। অনেক জায়গা অবধি ফুলগুল দেখা যাচ্ছে। গোলাপি, সাদা এমনকি বেগুনি শাপলাও দেখা যাচ্ছে মাঝে মাঝে। রঙের এমন বাহারে দুজনেই অবাক হয়ে গেল। যেন চোখের পলকই পড়ে না। জিহান আরেকটু ভালো করে দেখার জন্য ওঠে দাঁড়াল। তাতে ছোট ডিঙিটা বেশ দুলে উঠল। ভয় পেয়ে গেল পুলক।

আরে আরে কী করিস!

তুই একটা ভিতুর ডিম। ওদিকে আরেকটু এগিয়ে নে। এসেছি যখন কিছু শাপলা তুলি। মা দেখলে খুশি হবে।

ফুটন্ত শাপলার একেবারে কাছে গিয়ে নৌকাটা থামাল পুলক।

জিহান টেনে টেনে লাল শাপলাগুল তুলতে লাগল। পুলকও বসে রইল না। সে বেছে বেছে সাদা শাপলা তুলতে লাগল। কোন শাপলা খেতে বেশি মজা, এ নিয়ে তর্ক শুরু করল দুজনে।

হঠাৎ জিহান থেমে গেল। একটু দূরে যেন কিছু একটা নড়ে উঠল। সে বৈঠা দিয়ে দ্রুত নৌকাটা সেদিকে নিয়ে যেতে চাইল। কিন্তু পুলক বাধা দিল।

ওদিকে যাওয়ার কী দরকার?

আরে মনে হয় কেউ জাল বসিয়েছে। মাছের শব্দ।

মাছের সঙ্গে সাপও থাকতে পারে। পুলকের স্বরটা কেঁপে গেল।

শুনে জিহান হেসে ফেলল। জালের কাছে নৌকা পৌঁছাতেই মাছের দাপাদাপি বেড়ে গেল। অনেকগুলো কৈ মাছ আটকেছে জালে।

জিহানের চোখে খুশির ঝিলিক। টপাটপ সে মাছগুলো খুলে নিতে লাগল। ইয়া মোটা এক ঢোঁড়া সাপও আটকেছে জালে। সাপের নড়াচড়া দেখে পুলক ভয়ে নৌকাটা ঘোরাতে চাইল। তাড়াহুড়োতে নৌকার কোনাটা জালের ছিদ্রতে আটকে গেছে, সেটা সে বুঝতেই পারেনি। ক্রমাগত বৈঠা চালিয়ে এগোনোর চেষ্টা করছিল। জিহান উল্টোদিকে মাছ সামলাতে ব্যস্ত। সাপটা মাথা বাড়াতেই পুলক ভয়ে চিৎকার করে নৌকা থেকে পড়ে গেল। নৌকাও কাত হয়ে জালে জড়িয়ে গেল। শেষে একেবারেই উল্টে গেল। পড়ে গেল জিহানও। বকতে লাগল সে পুলককে।

কী করলি এটা? সাপটা তো আটকেই আছে, তোকে খেয়ে ফেলু নাকি, বোকা কোথাকার!

এদিকে মাছগুল সুযোগ পেয়ে পানিতে পালিয়ে গেল। জিহান নানা রকম চেষ্টা করে একটি মাছও রাখতে পারল না। ভেসে গেল শখের শাপলাগুল। ভাবল দুজনে মিলে নৌকাটা সোজা করবে। হঠাৎ খেয়াল করল আরেকটা নৌকা এদিকেই আসছে। ওরা মাছ চুরি করছিল জালের মালিক হয়তো টের পেয়েছে। নৌকা রেখে প্রাণপণ সাঁতরানো শুরু করল ওরা। ডাঙায় উঠে একেবারে শুয়ে পড়ল ক্লান্ত জিহান। পুলক হাঁপাতে হাঁপাতে বলতে লাগল...। এজন্যই গুরুজনরা বলে লোভ করা ভালো নয়। বেশি লোভের কারণেই সব বিলের জলে গেল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close