আবদুস সালাম

  ১৭ নভেম্বর, ২০১৮

রাক্ষসের মৃত্যু

খণ্ডবিহার নামে একটি রাজ্য ছিল। সেই রাজ্যের পাশে ছিল গহিন একটা জঙ্গল। সেই জঙ্গলের আশপাশে বেশ কিছু গ্রাম ছিল। ওই জঙ্গলে একটা ভয়ংকর রাক্ষস বাস করত। রাক্ষসটি রাতেরবেলায় খাবারের সন্ধানে বের হতো। খাবারের খোঁজে সে মাঝে মাঝে গ্রামের মধ্যে ঢুকে পড়ত। গ্রামে এসে রাক্ষসটি খেতের ফসল নষ্ট করত, পশুপাখি ধরে খেয়ে ফেলত এবং লোকজনকে ভয় দেখাত। এভাবে রাক্ষসের অত্যাচার দিন দিন বাড়তেই থাকে। গ্রামবাসী রাক্ষসের অত্যাচারে ছিল অতিষ্ঠ। একদিন হঠাৎ শোনা গেল গ্রাম থেকে ছোট্ট একটি শিশু হারিয়ে গেছে। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তাকে কোথাও পাওয়া যায়নি। কিছুদিন যেতে না যেতেই আবার একটি বাচ্চা হারিয়ে গেল। তাকেও পাওয়া গেল না। এভাবে একের পর এক বাচ্চা গ্রাম থেকে হারিয়ে গেল। ফলে গ্রামবাসী আরো দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল। তারা এর থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য উপায় খুঁজতে থাকল। বাচ্চা চুরি কীভাবে ঠেকানো যায় এ বিষয়ে আলোচনা করার জন্য গ্রামবাসী এক দিন সভার আয়োজন করল। সেই সভায় তারা মতামত পেশ করল, রহমতপুর নামে একটি গ্রাম আছে সেখানে একজন বুজুর্গ দরবেশ বাস করে। তার সঙ্গে আলোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নেবে এ বিষয়ে কী করা যায়।

গ্রামের গণ্যমান্য কয়েকজন লোক নির্দিষ্ট দিনে বুজুর্গ দরবেশের সঙ্গে দেখা করল। তারা দরবেশকে সব সমস্যার কথা জানাল। দরবেশ তাদের কাছে জিজ্ঞাসা করল, ‘তোমরা এ বিষয়ে কাউকে সন্দেহ করো কি না?’ গ্রামবাসী বলল, ‘আমরা কোনো মানুষকে সন্দেহ করি না। তবে বেশ কিছুদিন ধরে গ্রামগুলোয় একটি রাক্ষসের অত্যাচার লক্ষ করা যাচ্ছে। আমাদের মনে হয় রাক্ষসটি পাশের জঙ্গলেই থাকে। ইতোমধ্যে দুষ্টু রাক্ষসটি আমাদের যথেষ্ট ক্ষতি করেছে।’ তারা রাক্ষসের ক্ষয়ক্ষতির কথা দরবেশের কাছে বর্ণনা করল। কথাগুলো শুনে দরবেশ বলল, ‘তোমরা আগামীকাল আমার সঙ্গে দেখা করবে। দেখি তোমাদের জন্য কী করা যায়।’ এরপর গ্রামবাসী দরবেশের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আপন আপন গ্রামে ফিরে গেল। বুজুর্গ দরবেশের ছিল একটি জাদুর আয়না। দরবেশ ওই আয়নাটি বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করত। সে ওটা দিয়ে দূরদূরান্তের অনেক কিছু দেখতে পেত। গ্রামবাসী ফিরে গেলে দরবেশ তার আয়নাটা বের করল। সে এটার সাহায্যে দেখল, জঙ্গলের গভীরে একটি ছোট্ট ঘর রয়েছে। আর সেই ঘরের মধ্যে বেশ কয়েকটি বাচ্চা শুয়ে আছে। দরবেশ বুঝতে পারল ওই বাচ্চাগুলোকে আটকে রাখা হয়েছে। ঘরের পাশেই রয়েছে একটা গুহা। সেই গুহায় একটি রাক্ষস ঘুমাচ্ছে। সে দিনেরবেলায় দেখতে পায় না। গুহার মধ্যে ঘুমিয়ে থাকে আর রাত হলে জঙ্গল থেকে বের হয় খাবারের সন্ধানে। দরবেশ জানত যে রাক্ষসের প্রধান শত্রু হলো আগুন। আগুনের ধোঁয়া রাক্ষসের গায়ে স্পর্শ করলে সে মারা যায়। রাক্ষসটিকে কীভাবে জব্দ করতে হবে মনে মনে তার একটা পরিকল্পনাও করে ফেলল। পরের দিন গ্রামবাসী যখন তার সঙ্গে দেখা করতে এলো, দরবেশ তাদের সব ঘটনা খুলে বলল। দরবেশ তাদের বলল, ‘আমি বাচ্চাগুলোকে উদ্ধারের ব্যবস্থা করব এবং রাক্ষসটিকে একটি উচিত শিক্ষা দেব। আমি আগামীকাল সকালেই জঙ্গলের মধ্যে প্রবেশ করব। তোমাদের মধ্যে কয়েকজন আমার সঙ্গে থাকলেই চলবে। আর হ্যাঁ, জঙ্গলে যাওয়ার সময় তোমাদের সঙ্গে কিছু শুকনা কাঠ, ম্যাচ আর হাতুড়ি রাখবে।’ বন্দি বাচ্চাদের উদ্ধার করা এবং রাক্ষসকে শায়েস্তা করার অভিযানটি ছিল খুবই ভয়ংকর! চার-পাঁচজন ছাড়া কেউই দরবেশের সঙ্গে যেতে রাজি হলো না। যাদের ছেলেমেয়ে হারিয়েছে কেবল তারাই দরবেশের সথেঙ্গ যেতে রাজি হলো। পরের দিন দরবেশ চার-পাঁচজনকে সঙ্গে নিয়ে খুব সকালে জঙ্গলের মধ্যে প্রবেশ করল। দরবেশের কথামতো গ্রামবাসী তাদের সঙ্গে শুকনা কাঠ, ম্যাচ আর হাতুড়ি রেখে দিল। আর দরবেশ সঙ্গে নিল জাদুর আয়না। সে জাদুর আয়নায় দেখে নিল রাক্ষসের গুহার সঠিক অবস্থান। তারপর তারা ধীরে ধীরে সেদিকে এগিয়ে গেল। জঙ্গলটি এতটাই গভীর ছিল যে দিনেরবেলায়ও ঠিকমতো দেখা যাচ্ছিল না। অবশেষে তারা গুহার কাছে গিয়ে পৌঁছাল। তারা যখন পৌঁছাল, তখন রাক্ষসটি নাক ডেকে ঘুমাচ্ছিল। দরবেশ আর দেরি না করে রাক্ষসকে জাদু করল যাতে সে গুহা থেকে বের হতে না পারে। এরপর সে গুহার মুখে শুকনা কিছু কাঠ জ্বালিয়ে দিল। আগুনের ধোঁয়া রাক্ষসের নাকে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে রাক্ষসের ঘুম ভেঙে গেল। সে খুব চেষ্টা করল কিন্তু গুহা থেকে বের হতে পারল না। গুহার ভেতরেই সে ভয়ংকরভাবে চিৎকার করতে থাকল। তার চিৎকার শুনে গ্রামবাসী ভয় পেয়ে গেল। দরবেশ তাদের অভয় দিল। আগুনের তাপ আর ধোঁয়ায় রাক্ষসটি জ্ঞান হারিয়ে ফেলল। কিছুক্ষণ পরই তার মৃত্যু হলো। রাক্ষসের গুহার পাশেই ছিল ছোট্ট একটি ঘর। সেই ঘরেই হারিয়ে যাওয়া শিশুগুলো বন্দি ছিল। ঘরটির দরজায় বড় একটি তালা লাগানো ছিল। গ্রামবাসী হাতুড়ি দিয়ে তালাটি ভেঙে ফেলল। তালা ভেঙে তারা ঘরের মধ্যে ঢুকে শিশুগুলোকে উদ্ধার করল। প্রত্যেকটি শিশুই তখন সুস্থ ছিল। দরবেশ তার জাদুর আয়না দিয়ে জঙ্গলের চারপাশে একবার দেখে নিল। সে দেখল, শুধু এই জঙ্গলে নয়, এর আশপাশেও আর রাক্ষসের অস্তিত্ব নেই। এরপর তারা সবাই ওই স্থানটি ত্যাগ করে গ্রামে ফিরে এলো।

বাচ্চাগুলোকে জীবিত অবস্থায় ফিরে পেয়ে তাদের বাবা-মা এবং সব গ্রামবাসী যারপরনাই খুশি হলো। তারা দরবেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল। তারা জেনে আরো খুশি হলো, সেই ভয়ংকর রাক্ষসটি আর বেঁচে নেই। এরপর থেকে গ্রামে আর কখনো রাক্ষসের উৎপাত দেখা যায়নি। ফলে সবাই সুখে-শান্তিতে দিনাতিপাত করতে থাকে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close