শফিকুল ইসলাম শফিক

  ২৭ অক্টোবর, ২০১৮

অঙ্কনের নতুন স্যার

শহরের ছেলে অঙ্কন। পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। একমাত্র আদরের ছেলে। কিন্তু ছেলেটা একটু বেশি চঞ্চল। কেউ কেউ বাচাল বলে। স্কুলেও সহপাঠীদের সঙ্গে হৈ-হুল্লোড়ে মত্ত থাকে। ক্লাসে তার মন টেকে না। না ঠেললে কোনোদিন স্কুলে যেতে চায় না। ফিরে এলেই যেন বাঁচে। ভালোভাবে পড়াশোনা করে না। মা-বাবার কাছে প্রতিদিন অনেক বকুনি খেতে হয়। ছেলেটা সমাপনী পরীক্ষায় পাস করবে নাকি ফেল করবে? এ নিয়ে মা-বাবা বেশ দুশ্চিন্তায় ভোগেন। পড়াশোনা ছাড়া জীবনে কে বড় হয়? আজ অবধি ছেলেটি যেন কিছুই বোঝে না।

মা-বাবা তাকে বছরের শুরু থেকেই প্রাইভেট দিলেন। বাড়ি এসে পড়ান। স্যারটা বদ মেজাজি ছিলেন। এত ছোট্ট ছেলেকে কীভাবে পড়াতে হয়, সেদিকে তার খেয়াল থাকে না। পড়াতে এলেই অঙ্কনকে লিখতে দিয়ে মোবাইলে শুধু ফেসবুক চালান। পড়া মুখস্থ না হলে অঙ্কনকে প্রায়ই মরধর করেন। অঙ্কনের মা কাজের চাপে ব্যস্ত থাকেন। ছেলেকে তেমন সময়ও দিতে পারেন না। বিষয়টি তিনি কোনোদিন লক্ষ্য করতে পারেননি। স্যারের ভয়ে অঙ্কন কোনোদিন বাসার কাউকে বলারও সাহস পায় না।

একদিন অঙ্কনের মা গোসলের সময় খেয়াল করেন। নিমিষেই আঁতকে ওঠেন। ছেলেটির দুই রানের ওপর কালো কালো দাগ হয়ে গেছে। তার মা হতভম্ব হন। ছেলেটি আর চুপ থাকতে পারল না। ভয়ে ভয়ে বলে, ‘পড়া না পারলে স্যার কাঠের লম্বা স্কেল দিয়ে জোরেশোরে মারেন। চড়-থাপ্পড় মারেন। মাথার চুলও টানেন। স্যারের ভয়ে কিছুই বলতে পারি না। কাঁদতেও পারি না। তুমি যদি শুনতে পাও!’ কথাগুলো শুনে অঙ্কনের মা আর স্থির থাকতে পারলেন না। স্যারকে শিগগিরই ফোনে ডাকলেন।

স্যার কিছুক্ষণ পর বাসায় এলেন। অঙ্কনের বাবাও স্যারের পাশে। বললেন, ‘আপনি এভাবে কেন তাকে মারলেন? তার এত অপরাধ বুঝলাম। তাকে হয়তো মারতেই পারেন। আপনি আমাদের কেন একবার জানালেন না? আপনাকে আর পড়াতে হবে না। আমার ছেলে পাস করুক আর ফেল করুক। তাতে কিচ্ছু যায় আসে না। তাই বলে ছেলেকে তো আর মেরে ফেলতে পারি না। আপনার যথেষ্ট সুনাম ছিল। এতদিন অনেক সম্মান দেখিয়েছি। কখনো ভাবিনি যে, আপনি আমার ছেলেটাকে থানার আসামির মতো মারবেন। এমনকি যা খুশি, তা-ই করবেন। যা¹ে সে সব কথা। বেশ হয়েছে।’ স্যার লা জাওয়াব। কিছুই বলতে পারলেন না। নীরবে সবই হজম করলেন। অবশেষে বিদায় নিয়ে চলে গেলেন।

কিছুদিন পর অঙ্কনের মা নতুন একজন স্যারের খোঁজ পেলেন। এলাকায় তারও যথেষ্ট সম্মান ও খ্যাতি আছে। একদিন ছেলেটির প্রাইভেটের কথা পাকাপাকি করলেন। স্যার অঙ্কনকে নিয়মিত পড়ান। বন্ধুসুলভ আচরণ করেন। অঙ্কন স্যারকে পেয়ে যেন সোনায় সোহাগা। সে এখন খুব ভালো পড়ে। নিয়মিত স্কুলে যায়। আগের মতো আর কারো সঙ্গে দুষ্টুমি করে না। স্কুল বা বাড়ির সবার কাছেই স্যারের খুব প্রশংসা করে। স্যার তাকে নিয়ে গর্ব করেন। ভাবেন, একদিন এই ছেলেটিই মা-বাবার মুখ উজ্জ্বল করবে!

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close