হিমেল আহমেদ

  ২০ অক্টোবর, ২০১৮

মিতু ও টুনটুনি

বিকেলবেলা উঠানে খেলতে গিয়ে একটি টুনটুনি পাখির বাচ্চা আছড়ে পড়ল মাটিতে। প্রথমত ভয় পেল মিতু। তারপর ভয় কমিয়ে সামনে এগোতে দেখে একটি পাখির ছানা। হয়তো কেবল উড়তে শিখেছে। ডানা দিয়ে একটু রক্ত দেখা গেল। টুনটুনিকে আস্তে করে হাতে তুলে দেখে, হ্যাঁ সত্যিই রক্ত পড়ছে। আর আহত পাখিটি কাতরাচ্ছে। খুব মায়া হলো মিতুর। দাদিকে চিৎকার দিতেই দাদি দৌড়ে এলেন। কী হয়েছে কী হয়েছে! দাদির মুখে তখন দুশ্চিন্তার ছাপ। মিতু বলে উঠল আমার কিছু হয়নি। এই দেখ, এই পাখিটা। আমরা তো খেলছিলাম। তারপর ধপাস করে আকাশ থেকে এই পাখির ছানা উঠোনে এসে পড়ল। দাদি বললেন, আহারে এ তো টুনটুনির বাচ্চা। এইটুকু বাচ্চা পাখিকেও মানুষ ছাড়ে না! কী যুগ জামানা এলো! মানুষ কী করল আবার? মিতু জিজ্ঞেস করল। দাদি বললেন, হ্যাঁ মানুষ তো সব অকর্মের মূলে! এইটুকু ছানাকেও শিকার করতে নিশানা বানিয়েছে। তুই দাঁড়া! আমি ব্যান্ডেজ করে দেই। এই বলে দাদি রুমে গিয়ে সেভলন, ক্রিম আর ব্যান্ডেজ করার কাপড় নিয়ে এলেন। মিতু বলল, দাদি তুমি কি এই পাখিকে ব্যান্ডেজ করে দিবা? দাদি বললেন হ্যা। এরা পাখি হলেও তো জীব। আর জীবের প্রতি দয়া মহৎ গুণ। মানুষ তা-ও কষ্ট পেলে, আঘাত পেলে বলতে পারে কিন্তু পশুপাখি তো বলতে পারে না। এদেরও তো কষ্ট হয়। তুই একবার হোঁচট খেয়ে পড়ে গিয়ে পায়ে আঘাত পেয়েছিলি। তখন খুব কষ্ট হয়েছিল তোর। ঠিক তেমনি পশুপাখিরাও আঘাত পেলে কষ্ট পায়, বুঝলি? দাদি কথাগুলো বলতে বলতে খুব আলতোভাবে পাখিটির ডানা ব্যান্ডেজ করে দিলেন। মিতু বলল দাদি এখন এই পাখিটার কী করবা? পাখিটা এখন কি উড়তে পারবে? দাদি বললেন, এখন তো উড়তে পারবে না। তবে কয়েক দিনের মধ্যে ক্ষত শুকিয়ে গেলে ঠিকই উড়বে। চল পাখিটা কোথাও রেখে আসি। কোথায় রাখবা টুনটুনিকে? আবার অই শিকারি যদি দেখে ফেলে? দাদিকে জিজ্ঞাস করল মিতু। তার চেয়ে ভালো পাখিটা আমাকে দাও। আমি পালব। দাদি বললেন, পাখি পালবি? কিন্তু খাঁচা কই? খাবার কই? মিতু বিমর্ষ মুখে দাদির দিকে তাকিয়ে রইল। দাদি একটু হেসে বললেন, কী হল, মুখ গোমরা করে থাকিস না! আমি তোর বাপকে বলে দিচ্ছি, বাজার থেকে খাঁচা আর পাখির খাবার নিয়ে আসবে। মিতুর মা সব শুনছিলেন। তিনি একটা মোটা কাগজের বাক্স এনে দিয়ে বললেন, এই নে এই বাক্স। আপাতাত, এই বাক্সে রাখ পাখিটা। তোর আব্বুকে আমি ফোন করব দিচ্ছি খাঁচা নিয়ে আসবে। খুশিতে আত্মহারা হয়ে পড়ল মিতু। স্কুল বন্ধ আছে কয়েক দিন তাই সারাদিন পাখির পিছনেই কেটে যাচ্ছে মিতুর। আম্মু-আব্বু ও দাদি এই তিনজনকে অনেক ভালোবাসে মিতু। মিতুর বাবা চাকরি করেন। মা টিচার্স ট্রেনিংয়ের জন্য এক সপ্তাহ বাসা থেকে দূরে যাবেন; যা শুনে মিতুর মন বড্ড খারাপ হয়ে গেল। সন্ধ্যায় বাবা পাখির থাকার জন্য খাঁচা ও খাবার নিয়ে এলেন। মিতু খাঁচাসহ পাখিটি বারান্দার এক কোণায় ঝুলিয়ে দিল। মা টিচার্স ট্রেনিংয়ে যাওয়ায় খুব কেঁদেছে মিতু। কখনো মা ছাড়া ঘুমায়নি সে। তাই পাখি দেখাশোনায় সময় কাটতে লাগল তোর। একদিন ভোরবেলা ছানা পাখির চেঁচামেচি শোনা গেল। মিতুর ঘুম ভাঙতেই সে দাদিকে ডেকে তুলল। বারান্দায় এসে দেখে অন্য একটি টুনটুনি পাখি খাঁচার আশপাশ উড়ছে আর খাঁচায় টোকা মারছে। আর খাঁচার ভেতরে থাকা ছানাটি ছটফট করছে। মিতু দৌড়ে আসতেই পাখিটি উড়ে পালায় গেল। অস্থির হয়ে মিতু বলতে লাগল টুনটুনির কিছু হয়নি তো? অই পাখিটা নিশ্চয় শিকার করতে এসেছিল। দাদি লক্ষ করলেন অই পাখিটাও তো টুনটুনি ছিল। পরদিন একই ঘটনা ঘটল। দাদি অনেক চিন্তাভাবনা করে বুঝলেন আসলে বড় পাখিটা মা পাখি। যে যার সন্তান খাঁচায় বন্দি টুনটুনি পাখিকে মুক্ত করার চেষ্টা করছে। তাই দাদি মিতু কে বললেন পাখিটাকে ছেড়ে দিতে। মিতু কিছুতেই পাখিকে ছাড়বে না। এই কয়দিনে মায়া হয়ে গিয়েছে তার। পাখিকে ছাড়ার কথা শুনতে কেঁদে উঠল সে। দাদি বুঝিয়ে বললেন মিতুকে। তোর যে রকম মাকে ছাড়া থাকতে কষ্ট হয়। ঠিক তেমনি পাখিদেরও। প্রতিদিন সকালে মা পাখিটা আসছে খাঁচাবন্দি তার সন্তানকে মুক্ত করতে। তোকে যদি কেউ বন্দি করে তাহলে কেমন লাগবে বল? পাখিরা স্বাধীনভাবে উড়তে ভালোবাসে খাঁচায় বন্দি হয়ে থাকতে নয়। তাই বলি পাখিটাকে ছেড়ে দে। উড়িয়ে দে আকাশে। এসব কথা শুনে মিতু খাঁচা খুলে টুনটুনির ছানাকে উড়িয়ে দিল। টুনটুনির ছানা উড়ে গিয়ে উঠানের বড় গাছে গিয়ে বসল। মিতু লক্ষ করল গাছের ডালে আরেকটি টুনটুনি পাখি আগে থেকেই বসে ছিল। ইতোমধ্যে মা চলে এলেন ট্রেনিং শেষে। মাকে জড়িয়ে ধরে মিতু কাঁদতে লাগল। কখনো আমাকে ছেড়ে যাবে না; মাকে এ কথা বলতে লাগল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close