শফিকুল ইসলাম শফিক

  ২৩ জুন, ২০১৮

ঈদের গাড়ি

ঈদুল ফিতরের দিন খুব সকালে রিফাতের ঘুম ভেঙে যায়। সে আর বিছানায় থাকতে চায় না। বাবার সঙ্গে ঈদগাহ যাওয়ার বায়না ধরে সে। বয়স সাড়ে তিন বছর। এখনো স্কুলে যাওয়ার বয়স হয়নি। তার কাকা তাকে ঈদের পাঞ্জাবি-পাজামা উপহার দিয়েছেন। বাবার সঙ্গে গোসল করে সেও নতুন পাঞ্জাবি-পাজামা পরেছে। রিফাতের মা আজ কোরমা, পোলাও, ফিরনি, পায়েস অনেক কিছু রেঁধেছেন। রিফাত আজ অন্যদিনের মতো খাচ্ছে না। খাওয়া-দাওয়ার পর তার মা তাকে আতর-সুরমা লাগিয়ে দিলেন। বাপ-দাদার সঙ্গে ঈদগাহে নামাজ পড়তে যায়। আজ সে ভীষণ খুশি।

রিফাত ছোটবেলা থেকেই খুব চঞ্চল। সবার সঙ্গে খুব পাকা পাকা কথা বলে। এক মুহূর্তও চুপ থাকে না। বাবা এ কারণে তাকে ঈদগাহে নিয়ে যেতে চাইলেন না। ভাবলেন, নামাজের সময় কাউকে বিরক্ত করতে পারে। এমনকি শুক্রবারে বাবা তাকে মসজিদেও নিয়ে যান না। লুকিয়ে লুকিয়ে মসজিদে যেতে হয়। রিফাত বাবার ডান দিকে দাঁড়াল। আর দাদা সামনের কাতারে দাঁড়ালেন। ইমাম সাহেব যথাসময়ে ঈদের নামাজ আরম্ভ করলেন। সত্যিই রিফাতকে আজ একটু ব্যতিক্রম দেখাচ্ছে। রিফাত বাবার সঙ্গে নামাজ পড়ল। আজ নামাজের সময় কাউকে কোনো বিরক্ত করল না। নামাজ শেষে রিফাত দাদার কানে কানে ফিসফিস শব্দ করতে লাগল। বলল, ‘দাদা, এক্ষুনি গাড়ি কিনে দাও। এক্ষুনি গাড়ি কিনে দাও।’ গতকাল বোরহানের বাবা তাকে একটি খেলনা গাড়ি কিনে দিয়েছেন। রিফাত বিকেল বেলা খেলতে গিয়ে সেই গাড়ি দেখেছে। বাড়ি ফিরে দাদাকে বলল, ‘দাদা, আমাকে বোরহানের গাড়ি কেড়ে এনে দাও।’ রিফাত বারবার একই কথা বলতে লাগল। দাদা বললেন, ‘কাল তো ঈদের দিন। ঈদের নামাজের পর কিনে দেব।’ দাদার কথায় রিফাতের কান্না থেমে যায়।

দাদা খুব আশ্চর্য ব্যাপার লক্ষ করলেন। ছেলেমেয়ের হাতে হাতে অনেক খাওয়ার জিনিস। দাদা হাট থেকে বাড়ি এলেই রিফাত জিনিস চায়। দাদা খালি হাতে কখনো বাড়ি আসেন না। আজ রিফাতের খাওয়ার জিনিসের প্রতি কোনো টান নেই। একই কথা গাড়ি চাই, গাড়ি চাই। দাদা তাকে একটি দোকান থেকে খেলনা গাড়ি কিনে দিলেন। এরপর জিলাপিও কিনে তাকে বাড়ি নিয়ে এলেন। বাড়ি ফিরে রিফাত মনের আনন্দে গাড়ি নিয়ে খেলছে। আজ তার সবচেয়ে হাসিখুশি ভরা দিন। দাদিকে বলল, ‘দাদি,

এটা আমার সুন্দর গাড়ি। গাড়িতে চড়ে নানির

বাড়ি যাব। বাড়ির সবাইকে নিয়ে যাব।’ দাদি রিফাতকে কোলে জড়িয়ে নিলেন। তার গালে-মুখে আদর করে চুমু দিলেন। রিফাতের ঈদের গাড়ি দেখে সবারই প্রাণ জুড়িয়ে যায়। তার খেলাধুলা শেষে হাতে গাড়ি নিয়েই দুপুরের খাবার খাচ্ছে। সারা বিকেলে খেলাঘরে কেটে যায়। রাতের বেলা খেয়ে দেয়ে গাড়িটি হাতে নিয়েই ঘুমিয়ে পড়ল। সকাল বেলা মা তাকে ডাকলেন। খোকন সোনা, ‘জলদি ওঠো।

সকাল হয়ে গেছে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist