মকবুল হামিদ

  ১০ মার্চ, ২০১৮

শৈশবের স্মৃতি

অনেক বছর হয়ে গেল গ্রামের বাড়িতে যাওয়া হয়নি। শৈশবের কত স্মৃতিবিজড়িত স্থান এখনো আমার মনটা কেড়ে নেয়। বিশেষ করে সেই নদীটা, যার মধ্যে সব সময় ডানপিঠে ছেলেদের সঙ্গে সাঁতার কাটতাম, মাছ ধরতাম, নৌকাবাইচ খেলতাম। মন খারাপ থাকলে নদীর পাড়ে বসে থাকতাম। সুমধুর কুলুকুলু ধ্বনি শুনে মনটা ভালো হয়ে যেত। আবার সেই বটগাছের কথা আজও ভুলতে পারিনি। দিনের পর দিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা সেখানে কাটিয়ে দিতাম। স্কুলের যাওয়ার কথা বলে দুষ্ট বন্ধুদের সঙ্গে বটগাছের ওপরে বসে থাকতাম। পাখিদের সঙ্গে খেলা করতাম। আজও কানে ভেসে বেড়ায় পল্লীর আঁকাবাঁকা মেঠোপথ দিয়ে যাওয়া কিশোরির আলতা রাঙা পায়ের নূপুরের শব্দ। আজও শুনতে পাই বাংলা মায়ের সেই সুমধুর শাসন করা ডাক ‘কই গেলি খোকা ভাত খেতে আয়’। ভাবছি ভার্সিটির পরীক্ষা শেষ করেই গ্রামে চলে যাব। সেখানে শৈশবকালের স্থানগুলোয় নিজেকে হারিয়ে ফেলব। প্রায় ১০ বছর হয়ে গেল মায়ের মিষ্টি মুখের হাসিটুকু, শাসন করা বা আদর করা ডাক শুনিনি।

এখনো বুঝি মা ডাকতেছে, ‘তুই কই গেলি খোকা? আগামীকাল পরীক্ষার শেষ হওয়ার পর এক মাস বন্ধ পাব। ভাবছি কোথায়ও না গিয়ে নিজ পল্লীতে ফিরে যাব। শৈশবকালের বন্ধুদের মধ্যে আনন্দটুকু শেয়ার করে নেব। পরের দিন পরীক্ষা শেষ করে সোজা বাসা এসে খাওয়া দাওয়া করে ব্যাগ গুছিয়ে গ্রামের উদ্দেশে ট্রেনে করে রওনা দিলাম। ট্রেনে ওঠে দেখি আমার পাশে বসা সেই বন্ধুটি যার সঙ্গে শৈশবের বেশির ভাগ সময় কাটিয়েছি। সে তো আমাকে দেখেই বুকে জরিয়ে নিল। তাকেও আমি বুকে জরিয়ে নিলাম। দুজনেই পাশাপাশি বসলাম। খোঁজখবর নেওয়ার পর বললাম বাড়িতে গিয়ে বিকেলবেলায় সেই নদীটির পাশে যাব, যাকে না দেখলে এক মুহূর্তেও আমরা থাকতে পারতাম না। সে বলল তারপর বটগাছে উঠব। সেই বটগাছ, যার কালো বিশ্রাম না নিলে আমাদের ক্লান্তি দূর হতো না। কথা বলতে বলতে স্টেশন এসো পড়ল। আমাদের দুজনের বাড়ি একই পল্লীতে। পাশাপাশি বাড়ি। পল্লীর আঁকাবাঁকা পথ দিয়ে হাঁটতেছি। শৈশবের কথা মনে পড়ে গেল। এই পথে কত হেঁটেছিলাম, গরুর কিংবা ঘোড়ার গাড়িতে উঠেছিলাম। ভাটিয়ালি গানও কত গেয়েছি। এই পথে কত দৌড়াদৌড়ি করেছি, কত পালকির পেছনে হেঁটেছিলাম। এসব এখনো চোখের সামনে ভাসতেছে। আরেকটু এগিয়ে দেখি সেই বটগাছটিকে। এখনো তার কোল যে আমাদের ডাকতেছে। ওপরে তাকিয়ে দেখি বুলবুলি পাখিরা আমাদের দেখে আনন্দে কিচিরমিচির শুরু করে দিল। দুজনে দৌড়ে গিয়ে বটগাছের নিচে ব্যাগ রেখে বটগাছে উঠে গেলাম। উঠে বটের ডালপালাকে জরিয়ে ধরে নিজেদের শৈশবের মনের কথা বলতে শুরু করলাম। কান পেতে শুনি সে কি যেন বলতে চায়। যেন বলতে চায় এত দিন আমি তোমাদের অপেক্ষায় ছিলাম। কিছুক্ষণ থাকার পর আবার রওনা করলাম। এবার চোখে পড়ল সেই নদীটিকে, যাকে খুব মিস করেছিলাম। যার কুলুকুলু ধ্বনি শোনার জন্য শহর ছেড়ে এতটুকু আসা। যার গর্ভে শৈশবের সময়টুকু পার করেছি। মন খারাপের ডাক্তার ছিল যে নদীটি। নদীর জলের দিকে নজর পড়া মাত্রই শৈশবের একটা স্মৃতিবিজড়িত ঘটনা মনে পড়ে গেল। সেদিন ছিল স্কুল ছুটির দিন।

বন্ধুদের নিয়ে মাছ ধরতে নদীতে আসলাম। গামছা দিয়ে মাছ ধরার জন্য পানিতে নামলাম। আমরা সবাই অনেক্ষণ ধরে চেষ্টা করলাম কিন্তু কেউ কোনো মাছ পেলাম না। প্রায় দু-তিন ঘণ্টা পার হয়ে গেল। আমরা সবাই কিছুক্ষণ পাড়ে বসে রইলাম।

আমি নদীকে উদ্দেশ্য করে বললাম, হে নদী, আমরা কতক্ষণ ধরে মাছ ধরার জন্য চেষ্টা করতেছি; কিন্তু মাছও পেলাম না। আমরা জানি তোমার গর্ভে অনেক মাছ আছে। একটা মাছ পেলে অনেক খুশি হতাম। কিছুক্ষণ পর পানির দিকে চেয়ে দেখি পানিতে ঢেউ আসতেছে। যেন সে হাসতেছে আর বলতেছে তোমরা আমার গর্ভে এখন নামো, ভালো মাছ পাবে। তৎক্ষণাৎ আমরা বন্ধুরা মিলে গামছা নিয়ে মাছ ধরতে পানিতে নিয়ে নেমে গেলাম। আমরা অনেকগুলো মাছ পেলাম। মাছ নিয়ে নিজেরা মিলে পিকনিক করেছি। তার পরে দুজনে দুদিকে চলে গেলাম। বাড়িতে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে মা আমাকে দেখা মাত্রই দৌড়ে এসে বুকে টেনে নিলেন। মায়ের আদর সত্যিই অবর্ণনীয়। তারপর কিছুক্ষণ বিশ্রাম করে মায়ের হাতে ভাতে খেলাম। বারবার অতীতের স্মৃতিবিজড়িত ঘটনাগুলো চোখের সামনে ভেসে বেড়ায়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist