নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৮ জুলাই, ২০১৭

ক্ষমতাবানরাই দুর্নীতি করে : অর্থমন্ত্রী

‘যারা ক্ষমতাবান, তারাই দুর্নীতি করে’ বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেছেন, ‘যারা ক্ষমতাবান, তারাই দুর্নীতি করে। এ ছাড়া সবাই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। তবে আট থেকে ১০ বছরের মধ্যে সব ধরনের দুর্নীতি চলে যাবে।’ গতকাল বৃহস্পতিবার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) হটলাইন-১০৬ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী এ কথা বলেন।

পরিস্থিতি এখন এমন, যে অনেক সময় ‘বাধ্য হয়ে’ দুর্নীতিতে জড়াতে হয় বলে মন্তব্য করেন মুহিত। এর উদাহরণ দিতে গিয়ে জীবনে দুইবার ‘বখশিশ’ দেওয়ার অভিজ্ঞতাও তিনি অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন। তার কথায়, ‘আমি তখন একজন অবসরপ্রাপ্ত সাধারণ নাগরিক। ঠিক করলাম, আমার বাড়িতে ন্যাচারাল গ্যাস কানেকশন প্রয়োজন, তখন আমি তিতাস গ্যাসকে বললাম, তোমরা একদিন এসে আমার এই কানেকশনটা দিয়ে যাও। এরপর তারা আসল, আমার বাসায় কানেকশটা দিয়ে দিল। তখন কোম্পানির যে কর্মকর্তা সেখানে অবস্থান করছিলেন, যাওয়ার সময় তিনি বললেন, স্যার আমাদের কিছু বখশিশ দিতে হয়। তখন আমি ভেরি সারপ্রাইজড, কোনো দিন বখশিশ দিইনি। তখন আমি উপলব্ধি করলাম যে আমি তো এখন সাধারণ নাগরিক। তখন কিছু বখশিশ দিলাম।’

এর আগে ফিলিপিন্সে চাকরি করার সময় বাসা ভাড়া নিয়ে গ্যাস সংযোগের জন্যও বখশিশ দিতে হয়েছিল বলে জানান মুহিত। বলেন, ‘তারা এসে কাজ ঠিক-ঠাক করে দিল, তারপর তারা যাওয়ার সময় স্বাভাবিকভাবে বখশিশ চাইল, আমিও তাদেরকে কিছু দিলাম। ফিলিপিন্সে এটা খুব স্বাভাবিক কালচার, এতে আমি খুব বেশি সারপ্রাইজড হইনি।’

নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী অনুষ্ঠানে নিজেই হেসে ফেলেন। তার সঙ্গে সঙ্গে অন্যদের মধ্যেও হাসির রোল পড়ে যায়। মুহিত বলেন, ‘বাংলাদেশে দুর্নীতির সংস্কৃতি ছিল না। এটা একটা গোপনীয়তার মধ্যে ছিল। একটু শরমের সংশ্লিষ্টতা ছিল।’ নাম উল্লেখ না করে দুদকের সাবেক এক চেয়ারম্যানের প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এক সময় দুদকের এক চেয়ারম্যান দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ করবেন বলে ঘোষণা করেছিলেন। জেহাদের ভবিষ্যৎ সব সময় অন্ধকার হয়। কারণ জেহাদ একটি অন্য জিনিস। অবশ্যই ধর্ম-যুদ্ধে এসব ছিল, এখন আর নেই। জেহাদের নাম নিয়ে কোনো পরিবর্তন হয় না।’ দুদক ও তদন্তকারীদের উদ্দেশ্যে মুহিতের পরামর্শ- ‘তদন্ত করবেন ভালো কথা, তবে জিহাদি হবেন না। জেহাদি হলে তদন্তের কোয়ালিটি নষ্ট হয়ে যায়।’

সরকারি চাকরিতে বেতন কম বলে দুর্নীতি বাড়ার অভিযোগ ছিল এক সময়। এখন সেই পরিস্থিতি বদলেছে বলেই মনে করেন অর্থমন্ত্রী। বলেন, ‘সরকারি চাকরিজীবীদের আগে চিন্তা করতে হতোÑ কীভাবে দুই বেলা খাবারের ব্যবস্থা করা যায়। এখন কিন্তু বলা যেতে পারে সরকারি বেতন মানে সুন্দর জীবনযাপন।’ পরিস্থিতি বদলানোর আশার কথা শুনিয়ে মুহিত বলেন, ‘আমি আশাবাদী, আমার ধারণা, আট থেকে ১০ বছর পর আজকে যে দুর্নীতি, এই অবস্থার একটি পরিবর্তন আসবে। সাধারণ মানুষেরও অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। দুর্নীতি যে করতে হবে এই মানসিকতার পরিবর্তন হচ্ছে।’

অর্থমন্ত্রী দুর্নীতি প্রতিরোধে প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দেন। সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পে দরপত্রসহ অন্যান্য কাজে প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে দুর্নীতি কমেছে বলেও দাবি করেন।

দুদকের মিডিয়া সেন্টারে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ সময় দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে দুদকের প্রধান কার্যালয়ের তিন তলায় স্থাপিত অভিযোগ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন কমিশনের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ, কমিনার ড. নাসিরউদ্দীন আহমেদ এবং কমিশনার এ এফ এম আমিনুল ইসলাম। এ সময় দুদক চেয়ারম্যান অভিযোগ কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘অভিযোগ গ্রহণকালে কোনো অবস্থাতেই অভিযোগকারীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ বাকপটু নয়। তারা সহজ সরল ভাষায় কথা বলেন। তাই তাদের বক্তব্য অত্যন্ত ধৈর্যসহকারে শুনে রিপোর্ট করতে হবে।’ ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘হটলাইন স্থাপন করা হয়েছে জনগণের সঙ্গে কমিশনের প্রত্যক্ষ সংযোগের জন্য। আমরা দেশের জনগণকে সাহায্য করতে চাই। অভিযোগকারীর নাম, ঠিকানা বা পরিচয় কোনো অবস্থাতেই প্রকাশ করা হবে না।’ তিনি বলেন, ‘কর্মকর্তারা যদি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেন তাহলে সাধারণ মানুষ দুর্নীতির ঘটনার প্রতিকার ও প্রতিরোধের জন্য অবশ্যই দুদকের অভিযোগ কেন্দ্রের হটলাইন ১০৬ নম্বরে ফ্রি কল করবেন।’

হটলাইন-১০৬ পরিচালনার জন্য কমিশনের ৫০ জন কর্মকর্তাকে প্রযুক্তি এবং আচরণগত বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। দুদক চেয়ারম্যান জানান, হটলাইন-১০৬ পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বিটিআরসি) এর অনুমোদনসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিধি-বিধান যথাযথভাবে পরিপালন করা হয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগ জানাতে অফিস সময়ে (সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত) ১০৬ নম্বরে ফ্রি কল করা যাবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist