শাহ্জাহান সাজু

  ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

প্রায় ২৩ লাখ মার্কিন ডলার বিদেশে সরানো হয়েছে

আরো ৯ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার মামলা হচ্ছে

বিদেশে অর্থ পাচারের দায়ে আরো ৯ প্রতিষ্ঠানের অন্তত ২৪ ব্যক্তির বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং আইনে পৃথক মামলা করতে যাচ্ছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান প্রায় ২৩ লাখ মার্কিন ডলার বিদেশে পাচার করেছেন বলে অভিযোগ পেয়েছে সংস্থাটি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) এক যৌথসভা থেকে মামলা করার বিষয়ে অনুমোদন পেয়েছে সংস্থাটি। সভায় ১১ মামলার বিষয়ে আলোচনা হলেও ৯টি মামলার বিষয়ে অনুমোদন পায় সংস্থাটি। এখন চলছে মামলা করার চূড়ান্ত প্রস্তুতি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার নেতৃত্বে সম্প্রতি একটি বিশেষ সভা এনবিআরের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. সহিদুল ইসলাম, বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ডেপুটি গভর্নর, এনবিআরের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেলের একজন ঊর্ধ্বতন প্রতিনিধিসহ কয়েকটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় শুল্ক গোয়েন্দা ১১টি মামলার অনুমতি চাইলেও সভা থেকে ৯টি মামলা দায়েরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সভা সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠানগুলো হলো মিশওয়ার হোসিয়ারি মিলস প্রা. লিমিটেড, আসিয়ানা গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, অ্যাপারেল অপশনস প্রা. লিমিটেড, ফ্যাশন ক্রিয়েট লিমিটেড, ডি কে অ্যাপারেলস লিমিটেড, ক্যাপরী অ্যাপারেলস লিমিটেড, সাদ ফ্যাশন ওয়্যার লিমিটেড, লিলাক ফ্যাশনওয়্যার লিমিটেড ও নাব ফ্যাশন লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে এফওসির (ফ্রি অব কস্ট) ক্ষেত্রে প্রাপ্যতার চেয়ে অতিরিক্ত পরিমাণ পণ্য আমদানি ও জাল বা ভুয়া এফওসি দলিলের মাধ্যমে পণ্য আমদানি দেখিয়ে ২৩ লাখ ৪৯ হাজার ৩৪৩ দশমিক ২৩ মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচারের অভিযোগের সত্যতা মিলেছে শুল্ক গোয়েন্দার অনুসন্ধানে। যে কারণে বোর্ড সভায় মামলার অনুমতি চাওয়া হলে সভা তা অনুমোদন দেয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

জানা যায়, প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ২৩ লাখ ৪৯ হাজার ৩৪৩ দশমিক ২৩ মার্কিন ডলার মিথ্যা ঘোষণা, জাল বা ভুয়া এফওসি দালিলের মাধ্যমে পণ্য আমদানির মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে মিশওয়ার হোসিয়ারি মিলস প্রা. লিমিটেডের বিরুদ্ধে ৫ লাখ ৪২ হাজার ৮৯৫ দশমিক ৫৬ মার্কিন ডলার, আসিয়ানা

গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের বিরুদ্ধে ৬ লাখ ৬৫ হাজার ৯৪৭ দশমিক ৫৮ মার্কিন ডলার, অ্যাপারেল অপশনস প্রা. লিমিটেডের বিরুদ্ধে ৩১ হাজার ২০০ মার্কিন ডলার, ফ্যাশন ক্রিয়েট লিমিটেডের বিরুদ্ধে ৮৬ হাজার ৩১ মার্কিন ডলার, ডি কে অ্যাপারেলস লিমিটেডের বিরুদ্ধে ৩৯ হাজার ৬৬৫ ডলার, ক্যাপরী অ্যাপারেলস লিমিটেডের বিরুদ্ধে ১ লাখ ৯৩ হাজার ৯৭ দশমিক ৭৭ ডলার, সাদ ফ্যাশন ওয়্যার লিমিটেডের বিরুদ্ধে ১ লাখ ৯৯ হাজার ৫১৩ দশমিক ৮৫ ডলার, লিলাক ফ্যাশন ওয়্যার লিমিটেডের বিরুদ্ধে ৫ লাখ ৩৯ হাজার ৫৯৫ দশমিক ৬০ ডলার এবং নাব ফ্যাশন লিমিটেডের বিরুদ্ধে ৫২ হাজার ৩৯৬ দশমিক ৮৭ মার্কিন ডলার বিভিন্ন দেশে পাচারের অভিযোগ রয়েছে।

জানা যায়, এর আগে গত ৩০ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলনে এনবিআর চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া ক্রিসেন্ট গ্রুপের বিরুদ্ধে ৫ মামলার বিষয়টি জানিয়েছিলেন। তিনি তখন বলেছিলেন, ক্রিসেন্ট গ্রুপের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দেশের বাইরে টাকা পাচারের অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। ক্রিসেন্ট লেদার ৪২২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা, রিমেক্স ফুটওয়্যার ৪৮১ কোটি ২৬ লাখ টাকা ও ক্রিসেন্ট ট্যানারিজ ১৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা বিদেশে পাচার করেছে। শুল্ক গোয়েন্দার তদন্তে বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় চকবাজার থানায় পৃথক ৩টি মামলা করা হয়েছে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ৯১৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে পাচারের দায়ে মানিলন্ডারিং আইনে ক্রিসেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ কাদের ও সরকারি ব্যাংকের দুই ডিএমডিসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে পৃথক তিন মামলা করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। এ ঘটনায় ওই দিনই ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্টস ও ক্রিসেন্ট ট্যানারিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান এম এ কাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।

অন্যদিকে গত ১০ ফেব্রুয়ারি রফতানি বিলের বিপরীতে জনতা ব্যাংক থেকে ১ হাজার ৭৪৫ কোটি ৬৬ লাখ ৭৯ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ক্রিসেন্ট গ্রুপের এম এ কাদের ও এম এ আজিজসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে পৃথক পাঁচটি মামলা দায়ের করে দুদক। যেখানে ক্রিসেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ কাদের, তার ভাই জাজ মাল্টিমিডিয়ার মালিক ও রিমেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. আবদুল আজিজ, ক্রিসেন্ট গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাঁচ পরিচালক এবং ব্যাংকের ১৫ কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close