reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

শিক্ষা আইন প্রণয়ন এখন সময়ের দাবি

শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। বাক্যটি শিশুকাল থেকেই শুনছি, বলছি এবং প্রতিদ্বন্দ্বিত হতে দেখছি। কিন্তু বাস্তবতায় এর কোনো প্রতিফলন চোখে পড়ছে না। তবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার এক মহা-প্রতিযোগিতা আছে। ফলাফল নেতিবাচক। যদিও জাতির মেরুদন্ডকে মজবুত করার জন্য একটি নির্দিষ্ট মন্ত্রণালয় আছে। মেরুদন্ড পরিমার্জনের জন্য পরিমার্জিত অর্থও বরাদ্দ আছে। শুধু নেই শল্যচিকিৎসক। যিনি মেরুদন্ডের ওপর অস্ত্রোপচার করে শিক্ষাব্যবস্থাকে তার প্রকৃত অবস্থানে ফিরিয়ে আনতে পারেন। আবার অনেকের মতে, চিকিৎসক আছেন। পরিবেশ ও সাহায্যকারীর অভাব। আরো একটি পক্ষ বলছে, মূল সমস্যা গোড়ায়। পরিকল্পনায় ঘাটতি থাকার কারণে সর্বত্রই স্থবিরতা। ব্যাখ্যা যতভাবেই আসুক না কেন, মোদ্দাকথা মেরুদন্ড মেরামতের কাজ যেন কোনো কিছুতেই এগিয়ে যেতে পারছে না। জড় পদার্থের মতো স্থির হয়ে আছে। অথবা চললেও তা চলছে কচ্ছপগতিতে। এর জীবন্ত উদাহরণ শিক্ষা আইন।

জাতীয় নীতি বাস্তবায়নের জন্য যে বিষয়টি সবচেয়ে জরুরি; সেই শিক্ষা আইন প্রণয়নের কাজ ঝুলে আছে প্রায় ৯ বছর। অথচ শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের নথিতেই স্পষ্ট করেই বলা হয়েছে, শিক্ষা আইন প্রণয়নের কথা। ২০১১ সালে শিক্ষা আইনের একটি খসড়া প্রস্তুত হলেও এখন পর্যন্ত আইনের খসড়া চূড়ান্ত করতে পারেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বরং স্বার্থন্বেষী মহল ও বিশেষ গোষ্ঠীর দাপটের সামনে সব সময় আপস করেই যেন দফায় দফায় ঘষামাজা হয়েছে আইন। মাথা নত করে দুর্বল আইন প্রণয়নের পথে পথ পরিক্রমণ করেছে মন্ত্রণালয়। ঠিক এ রকম একটি পরিবেশে আবারও আইনের খসড়া চূড়ান্ত করে চতুর্থবারের মতো মন্ত্রিপরিষদে পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ বিষয়ে আজ বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বিশেষ সভা বসছে। এদিকে শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতা আর শিক্ষা আইনের সংকটে উদ্বিগ্ন জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্যসহ বিশিষ্ট নাগরিক ও শিক্ষাবিদরা। এদের মাঝে অনেকেই মনে করেন, শিক্ষা প্রশাসনের শিথিল মনোভাবের কারণে নিষিদ্ধ নোট-গাইড ও কোচিং বাণিজ্যই অন্যতম বাধা।

তবে কারো কারো মতে, বাধা এখানেই সীমাবদ্ধ নয়। বাধাটা আরো গভীরে। আমরা যদি শেকড়ে হাত দিতে না পারি, তাহলে কোনো সংস্কারই কাজে আসবে না। গাছের গোড়ায় পানি না ঢেলে পাতায় পানি ঢেলে গাছ বাঁচানো যায় না। একসময় আমাদের এই পৃথিবীর সব দেশই ছিল কৃষিভিত্তিক। তারপর কৃষিভিত্তিক সমাজ ভেঙে হলো শিল্পভিত্তিক সমাজ। শিল্পভিত্তিক সমাজ থেকে সেবা ও তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক অর্থনীতির বিকাশ। সমাজ বিকাশের ধারায় উৎপাদনশীলতা হচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। উৎপাদনশীলতার কারণে সমাজ ব্যবস্থায়ও পরিবর্তন এসেছে। প্রথমে যন্ত্র, তারপর বিদ্যুৎ এবং তারও পরে ইন্টারনেট উৎপাদন ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করেছে। এরপর উৎপাদন ব্যবস্থায় আসছে ডিজিটাল প্রযুক্তি। ডিজিটাল অর্থনীতি হচ্ছে মেধাভিত্তিক উৎপাদনশীল একটি অর্থনীতি, যার ভিত্তি হচ্ছে ডিজিটাল প্রযুক্তি। সুতরাং ডিজিটাল যুগে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকেও ঢেলে সাজাতে হবে। ডিজিটাল অর্থনীতির ওপরে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষাব্যবস্থাকে যুগোপযোগী করা আজ সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। তাই পুরো শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর জন্য শিক্ষানীতি ঘোষণা আগে সংশ্লিষ্টদের নতুন করে ভাবতে হবে। ডিজিটাল অর্থনীতির ওপর দাঁড়াতে হলে শিক্ষাব্যবস্থাকে ডিজিটাল চিন্তাচেতনায় পরিমার্জিত করতে হবে। আর শিক্ষাই মেরুদন্ড হয়ে জাতিকে তার মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close