আবু আফজাল মোহা. সালেহ

  ২৪ অক্টোবর, ২০১৮

বিশ্লেষণ

ডেড অক্টোবর

অক্টোবরে দেশের উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় কর্মসংস্থান ও খাদ্যের অভাবে স্থবির হতো। বিশেষ করে কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলায় এর মাত্রা ছিল ব্যাপক। এ সময় বা এ মন্দাবস্থাকে বলা হতো ‘মঙ্গা’। অক্টোবর মাসে হতো বলে ও বিদেশিদের কাছে সহজভাষা ও সময় বোঝাতে এ অবস্থাকে ‘ডেড অক্টোবর’ নামেও ডাকা হতো। সরকারের বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি গ্রহণের ফলে এ অঞ্চলে আর মঙ্গা নেই। অক্টোবর মাসে কর্মসংস্থানের অভাবে না খেয়ে থাকত মানুষ। এ জন্য এ সময়কে ‘ডেড অক্টোবর’ নামেই চিনে বিদেশিরা। আমি গত দুই বছরে তা লক্ষ করেনি। অথবা সামান্য কিছু মঙ্গার প্রভাব থাকলেও আমার চোখ এড়িয়ে গেছে!

সুষম উন্নয়ন, ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অর্থনৈতিক অঞ্চলের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে শিল্পায়ন হয়। পরিত্যক্ত জায়গা ব্যবহার করে সরকারের সহযোগিতায় আগ্রহীরা সংশ্লিষ্ট এলাকায় শিল্পকারখানা গড়ে তুলতে পারে। ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠন করার টার্গেট করেছে সরকার। প্রতিটি জেলায় কমপক্ষে একটি করে অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের প্রতিশ্রুতি রেখেছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী। সুষম উন্নয়ন, শিল্পায়ন ও ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যই হচ্ছে এ অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠন।

অনুমোদন পেল সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল; যা বেসরকারি উদ্যোগে দেশের সর্ববৃহৎ ও উত্তরাঞ্চলের প্রথম অর্থনৈতিক অঞ্চল। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) সম্প্রতি চূড়ান্ত লাইসেন্স দিয়েছে সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল। বেজার সূত্র অনুযায়ী, যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চলের জমির পরিমাণ ১ হাজার ৩৫ দশমিক ৯৩ একর। সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল লিমিটেডের মালিকানাধীন এ অর্থনৈতিক অঞ্চলে সম্ভাব্য বিনিয়োগের খাতগুলো হলোÑ টেক্সটাইল, অ্যাপারেল ও পাটজাত দ্রব্য, ফার্মাসিউটিক্যালস, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, পাল্প ও কাগজ, সিরামিক, রাসায়নিক দ্রব্য, অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস, প্লাস্টিক, চামড়াজাত দ্রব্য জুতা, আইটি পার্ক, গ্লাস ইন্ডাস্ট্রি, ফার্নিচার, এলপিজি টার্মিনাল, ইস্পাত, প্রক্রিয়াজাত মৎস্য এবং জাহাজ শিল্প। ১১টি কো¤পানির সমন্বয়ে গঠিত এ অঞ্চল গঠিত হবে বলে প্রাথমিকভাবে বলা হচ্ছে।

অর্থনৈতিক অঞ্চলটিতে ভূমি ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন, পরিষেবা ও অন্যান্য সুবিধাদি স্থাপনের জন্য মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ধরা হয়েছে প্রায় ২০০ কোটি ডলার। এখানে পর্যায়ক্রমে পাঁচ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। আগামী ২০২৩ সালের মধ্যে উন্নয়ন কার্যক্রম শেষ হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিদ্যুৎ, পানি ও অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করা হবে এবং কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার (সিইটিপি), ডরমিটরি, পাঁচ তারকা মানের হোটেল, স্বাস্থ্যসেবা, শিশু দিবা যতœ কেন্দ্র ও বিনোদন কেন্দ্রসহ বাণিজ্যিক এলাকা গড়ে তোলা হবে। এ ছাড়া দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার জন্য কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্র বৃদ্ধির জন্য এখানে একটি অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপো স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। লালমনিরহাটের বুড়িমারী, দিনাজপুরের হিলি ও পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর পথে ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে যোগাযোগের সুব্যবস্থার কারণে সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চলে উৎপাদিত পণ্য রফতানি ও সরবরাহ সুবিধাজনক হবে। তবে বন্দরগুলোর আরো উন্নয়ন করলে যোগাযোগ সহজতর হবে। আর নীলফামারীর চিলাহাটি স্থলবন্দর চালু করলে উন্নয়ন আরো বেগমান হবে।

সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কোরীয়, জাপানি, চীনা ও থাই প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন দেশের উদ্যোক্তারা বিনিয়োগের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলে জানা যায়। বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমে অবস্থিত সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু হলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের সমন্বিত উদ্যোগে উত্তরাঞ্চলের জনগণের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি জীবনযাত্রার মান উন্নতি হবে হবে বলে আশা করা হচ্ছে। অর্থনৈতিক অঞ্চল সংশ্লিষ্ট এলাকায় বা দেশে উন্নয়নে যথেষ্ট প্রভাব ফেলে। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় এতে। আরো কিছু অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি হওয়ার দরকার। রংপুরের গঙ্গাচড়ায় এ রকম অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির প্রস্তাব সরকারের উচ্চপর্যায়ে বিবেচনাধীন আছে। তিস্তা সেতু উদ্বোধনের সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। এখন সেটা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পালা। এ অঞ্চলের জনপ্রতিনিধি, সুশীলসমাজকেই এগিয়ে আসতে হবে। তাহলেই উত্তরাঞ্চলের উন্নয়ন হবে।

কয়েক বছরে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় সেতু নির্মাণ হয়েছে। কিছু রাস্তাঘাট ও অন্যান্য ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ করতে হবে। এ অঞ্চলে রেলব্যবস্থায় আস্থা আছে মানুষের। তবে অবহেলিত। রেলে এ অঞ্চলে বিশেষ পরিকল্পনা করতে হবে। স্থলবন্দরগুলোর সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। চিলাহাটি বন্দর চালু করে সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। তাহলেই সদ্য অনুমোদিত সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাক্সিক্ষত উদ্দেশ্য পূরণ হবে।

লেখক : কবি ও কলামিস্ট

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close