কলকাতা প্রতিনিধি

  ০২ এপ্রিল, ২০২০

ভারতে মাওলানা সাদ কান্দলভির বিরুদ্ধে মামলা

করোনা সতর্কতা অগ্রাহ্য

দক্ষিণ দিল্লির নিজামুদ্দিন মসজিদসংলগ্ন প্রায় পুরো এলাকাটাই করোনা সংক্রমিত, কেননা ওই মসজিদের সমাবেশে যোগদানকারীদের মধ্যে কমপক্ষে ১২৮ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এরপরই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে দক্ষিণ দিল্লির ওই অঞ্চলের কাছে থাকা একটি বহুতল থেকে প্রায় ২ হাজার ১০০ জন মানুষকে সুরক্ষিত স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

এদিকে দক্ষিণ দিল্লির তাবলিগ জামাত আয়োজকদের প্রধান মাওলানা সা’দ কান্দলভি এবং আরো কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছে। ধর্মীয় জমায়েত বন্ধে সরকারের নির্দেশনা অমান্য করায় তার বিরুদ্ধে ভারতীয় মহামারি আইনে এফআইআর করেছে দিল্লি পুলিশ। করোনাভাইরাসের মহামারী চলাকালে দক্ষিণ দিল্লির নিজামুদ্দিনে এই জমায়েতের আয়োজন করা হয়েছিল। একই সঙ্গে পুলিশ একটি অডিওবার্তা বিশ্লেষণ করছে। সেখানে মাওলানা সাদকে জমায়েতে অংশ নেওয়াদের করোনাভাইরাসে আতঙ্কিত না হতে এবং একে ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলতে শোনা গেছেÑ এমনটা অভিযোগ।

এখন ঘটনা হলোÑ দক্ষিণ দিল্লির নিজামুদ্দিন মসজিদে ১ থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত আয়োজিত ওই ধর্মীয় সমাবেশে যোগ দেওয়ার পর করোনা আক্রান্ত হয়ে ইতোমধ্যেই সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবারই মার্কাজ নিজামুদ্দিন সিল করে দেওয়া হয়েছে এবং সেখানে থাকা অসংখ্য মানুষকে বের করে শহরের বিভিন্ন জায়গায় কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। মসজিদ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করা হয়েছে। যেসব রাজ্যের মানুষ ওই জমায়েতে যোগ দিয়েছিলেন, তাদের খোঁজ করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত যাদের সন্ধান মিলেছে, তাদের মধ্যে আক্রান্ত ১২৮ জন। এদিকে এক বিবৃতিতে দিল্লির পশ্চিম নিজামুদ্দিনে তবলিগ-ই-জামাতের, মার্কাজ কর্তৃপক্ষ আত্মপক্ষ সমর্থন করে জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২২ মার্চ জনতা কারফিউ ঘোষণা করার পর এ অনুষ্ঠানটি বাতিল করা হয়। কিন্তু ততক্ষণে ওই মসজিদ চত্বরে প্রচুর মানুষের জমায়েত ছিল। তারা ওই কারফিউয়ের কারণে আটকা পড়ে। তাদের আর অন্য কোথাও যাওয়ার জায়গা ছিল না। আর এরপরই শুরু হয়ে যায় দেশজুড়ে লকডাউন। তাই বাধ্য হয়েই মসজিদসংলগ্ন এলাকাতেই গা-ঘেঁষাঘেঁষি করে থাকতে বাধ্য হন ওই মানুষজন।

তাবলিগ-ই-জামাত আসলে একটি ইসলামি মিশনারি আন্দোলন, যা ১৯২৬ সাল থেকে শুরু হয়েছিল। ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে মালয়েশিয়া ও পাকিস্তানেও একই ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, সেখান থেকেই ওই ভাইরাস এ দেশে এসেছে বলে মনে করা হচ্ছে, এর মধ্যেই ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কড়া নির্দেশ, ৮-১০ মার্চ দুদিনের সমাবেশে দিল্লির ওই মসজিদে যেসব তাবলিগ-ই সদস্য যোগ দিয়েছিলেন, তাদের খুঁজে বের করতে হবে। এখনো পর্যন্ত ওই জনসমাবেশে অংশ নেওয়ার পর তামিলনাড়–তে ৫০ জন, দিল্লিতে ২৪, তেলেঙ্গানায় ২১, অন্ধ্রপ্রদেশে ২১, আন্দামানে ১০ জন এবং অসম এবং জম্মু ও কাশ্মীরে একজন করে মুসলিমের শরীরে করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছে। এই সমাবেশে যোগ দেওয়া মোট ৮২২ জন বিদেশি বিভিন্ন রাজ্যেও ঘুরে বেড়িয়েছিলেন। এবার তাদের বিবরণও বিভিন্ন রাজ্যের পুলিশপ্রধানদের জানানো হয়েছে বলে খবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে। অন্যদিকে, তাবলিগি জামাতের ভবন বা মরকজ থেকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা সামনে আসায় সামগ্রিকভাবেই প্রশ্নের মুখে সরকার। আরো আগেই সরকারি তৎপরতা শুরু হয়নি কেন, সে প্রশ্নই তুলছেন বিরোধীরা। কংগ্রেস নেতাদের যুক্তি, তারা এ নিয়ে রাজনীতি করতে চান না। কিন্তু রাহুল গান্ধী ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকেই করোনা নিয়ে সরকারকে সাবধান করেছিলেন। কিন্তু কেন্দ্র কোনো তৎপরতা দেখায়নি। ১৩-১৫ মার্চ সমাবেশ ছিল তাবলিগির, ২২ মার্চ বিদেশি বিমান আসা বন্ধ করে কেন্দ্র সরকার। তার আগে ১১ মার্চ বিশেষ কিছু ক্ষেত্র বাদ দিলে সব ভিসা স্থগিত রাখা হয়েছিল।

চিন, ইতালি, ইরান, দক্ষিণ কোরিয়া, ফ্রান্স, স্পেন বা জার্মানির মতো দেশগুলো থেকে আসা ভারতীয় বা বিদেশিদের ১১ দিন গৃহবন্দি থাকার নির্দেশও জারি হয়েছিল। কিন্তু সেই নির্দেশ যে প্রথমদিকে রাজ্যস্তরে ঠিকমতো কার্যকর হয়নি, তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্তারাও মানছেন। সে কারণেই বিদেশি ধর্মপ্রচারকরা আসতে পেরেছেন। এখন তারা বলছে, ভবিষ্যতে আর কোনো তাবলিগি প্রচারককে ট্যুরিস্ট ভিসা দেওয়া হবে না। স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় ভাল্লা এও জানিয়েছেন, যারা ইতোমধ্যেই পর্যটক ভিসায় এসে এ দেশের ধর্মপ্রচার করছেন, তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যারা নিয়ম ভেঙেছেন, তাদের কালো তালিকাভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র সরকার।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close