তাজুল ইসলাম পলাশ, চট্টগ্রাম ব্যুরো

  ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

চট্টগ্রামে অভিযানে গা ঢাকা দিয়েছে জুয়াড়ি

রাজধানী ঢাকার পর চট্টগ্রামের পাঁচটি ক্লাবে অভিযান চালিয়েছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর মধ্যে তিনটিতে জুয়ার আসর বসত বলে র‌্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। অভিযানের পরপরই গা ঢাকা দিয়েছে জুয়াড়ি ও জড়িতরা। আটক হয়নি কেউ। প্রায় অর্ধশত ক্লাবে বন্ধ রাখা হয়েছে জুয়ার আসর।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান বলেন, অনুমোদিত এবং অনুমোদনহীন সববার ও ক্লাবে জুয়ার আসর বন্ধে অভিযান শুরু হয়েছে। এর নেপথ্যে যত বড় প্রভাবশালী থাকুক না কেন তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। চট্টগ্রামে এ ধরনের কার্যক্রম চালাতে দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, পুলিশ প্লাজাসহ নগরীর সব ধরনের জুয়ার আসর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, জুয়ার কারণে পরিবারে অশান্তি এমনকি বিবাহ বিচ্ছেদের মতো ঘটনাও ঘটছে। অনেকে জুয়া খেলাকে পেশায় পরিণত করেছে।

অনুসন্ধান বলছে, পুলিশের তালিকায় চট্টগ্রামে জুয়ার আসর মাত্র ৩২টি। কিন্তু বাস্তবে এ সংখ্যা দুই শতাধিক। সেখানে প্রতিদিন লেনদেন চলে লাখ লাখ টাকার। এসব আসরে চলে মাদকের কারবার। ক্লাবভেদে চলে পতিতার ব্যবসাও। আর এসব অপরাধে জড়িতদের বেশিরভাগই সমাজের প্রভাবশালী। অভিজাত ক্লাবগুলোতে প্রতিদিন জুয়ার বোর্ড থেকে আয় হয় লক্ষাধিক টাকা। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর জ্ঞাতসারেই চলে এসব কাজ কারবার। ক্লাব ছাড়াও বিভিন্ন এলাকায়

সন্ধ্যার পর থেকে বাসা-বাড়িতেও বসানো হয় এসব জুয়ার আসর। নামি-দামি হোটেলেও চলে জুয়া খেলা।

জুয়ার বোর্ড থেকে সাপ্তাহিক, মাসিক বা দৈনিক ভিত্তিতে টাকা তোলা হয়। এসব টাকা যায় স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকতা ও ক্লাব পরিচালনায় জড়িত কর্মকর্তাদের পকেটে। একইসঙ্গে চলে নেশাজাতীয় দ্রব্যের বেচাকেনা। নগরীতে মোহামেডান ক্লাব, আবাহনী ক্লাব, চট্টগ্রামে ফ্রেন্ডস ক্লাব, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র, অফিসার্স ক্লাব, ওয়াজি উল্লাহ ইনস্টিটিউট, অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক ক্লাব, বন্দর রিপাবলিক ক্লাব, পুলিশ প্লাজাসহ চকবাজার, আগ্রাবাদ, হালিশহর, ডবলমুরিং, জিইসি, অক্সিজেন, পাথরঘাটা, বিআরটিসি ও পাহাড়তলী এলাকায় অনুমোদিত যেসব বার এবং ক্লাবে দীর্ঘদিন ধরে বসে আসছে জুয়ার আসর।

সূত্র জানায়, হালিশহরে আবাহনী ক্লাব লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব নামে ক্লাব হলেও সেখানে কোনো ক্রীড়া সামগ্রী নেই। নগরীর এ কে খান মোড় এলাকায় একটি ভবনের তিনতলা ও চারতলায় ভাড়া করা অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক ক্লাবেও বসে জুয়ার আসর। বায়েজিদের আমিন কলোনি এলাকার আশপাশে অন্তত ৫টি স্থানে জুয়ার আসর বসে। আমিন কলোনি বেলতলা এলাকা, আমিন কলোনির মাঠ এলাকা, টেক্সটাইল জিএম বাংলো পাহাড়ের ওপর, রউফাবাদ রেলক্রসিং এলাকা, স্টারশিপ গলি, শান্তিনগর কলোনিতে জুয়ার আসর বসে বলেও স্থানীয়রা জানিয়েছে। বাকলিয়া থানা এলাকার শাহ আমানত সেতু এলাকায় রয়েছে ১২টি জুয়ার আসর। চাক্তাই চামড়ার গুদাম এলাকায় রয়েছে মমিন ও মামুনের জুয়ার আসর। কোতোয়ালি থানাধীন জলসা মার্কেটের ষষ্ঠতলায়, গোয়ালপাড়া এলাকায়, আলকরণে সিলকন হোটেল গলিতে, কাজির দেউড়ি এলাকায়, স্টেশন রোডের ফলমন্ডি এলাকায় রেলওয়ে মেন্স সেন্টার, পলোগ্রাউন্ড মেলা কমিউনিটি সেন্টার, এনায়েত বাজার বাটালি রোড, নন্দনকানন আরএফ পুলিশ প্লাজায় চলে জুয়ার আসর। ডবলমুরিং থানাধীন দেওয়ানহাট ব্রিজের নিচে, আগ্রাবাদ সাউথ ল্যান্ড সেন্টার ভবনের পঞ্চম তলায়, পান্না পাড়ায়, মনসুরাবাদ মাঠের সামনে, ভেলোয়ার দীঘির পাড়ে, ঝর্ণাপাড়া, হাজীপাড়ায়, পাঠানটুলী জুয়ার আসর বসে। এ ছাড়াও সদরঘাট রোডে হোটেল শাহজাহান, চকবাজার আলিফ প্লাজা, চান্দগাঁও আবাসিক এ ব্লকে দৃষ্টি ভবন, শমসের পাড়া জানু মিস্ত্রির বাড়ি, বহদ্দারহাট মদিনা হোটেলের পাশের বিল্ডিং, খুলশী ৪ নম্বর, মেহেদীবাগ ন্যাশনাল হাসপাতাল সংলগ্ন গলি, ডিসি রোড খালপাড়ে চলে জুয়ার আসর।

নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার মোস্তাইন হোসাইন বলেন, জুয়া এদেশে নিষিদ্ধ। ১৮৬৭ সালে প্রণীত বঙ্গীয় প্রকাশ্য জুয়া আইন বাংলাদেশে এখনো প্রযোজ্য। সেই আইন অনুযায়ী, যেকোনো ঘর, স্থান বা তাঁবু জুয়ার আসর হিসেবে ব্যবহৃত হলে তার মালিক বা রক্ষণাবেক্ষণকারী, জুয়ার ব্যবস্থাপক বা এতে কোনো সাহায্যকারী তিন মাসের কারাদন্ড বা অনূর্ধ্ব ২০০ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হতে পারেন।

এদিকে গত শনিবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ও আবাহনী ক্লাবে অভিযান চালায় র‌্যাব। আর পুলিশ অভিযান চালায় নগরীর ফ্রেন্ডস ক্লাব ও শত দল ক্লাবে।

মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া সংসদে অভিযান চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। পরে এ ক্লাব থেকে কিছু দূরে সদরঘাট এলাকার মোহামেডান ক্লাবে যায় র‌্যাবের একটি দল। ক্লাবে কার্ড ও জুয়া খেলার বিভিন্ন আলামত পান র‌্যাবের কর্মকর্তারা। খাতা ঘেঁটে ক্লাবটিতে ১৮ সেপ্টেম্বর (বুধবার) পর্যন্ত কার্ড খেলার হিসাব পাওয়া গেছে। ঢাকায় জুয়ার আসর ও অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযানের পর বন্ধ রাখা হয় ক্লাবটি।

পরে নগরীর হালিশহর এলাকার আবাহনী ক্লাবে অভিযান চালায় র‌্যাব। সেখানেও একই ধরনের আলামত মেলে। কিন্তু চলমান অভিযানের ভয়ে কয়েক দিন আগে থেকে ক্লাবটি বন্ধ রাখা হয় এবং জুয়ার বোর্ডসহ খেলার বিভিন্ন সরঞ্জাম সরিয়ে ফেলা হয়। পরে আবাহনী লিমিটেডের ব্যানার সরিয়ে বাইরে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের ব্যানার লাগানো হয়।

র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. নিজামউদ্দিন বলেন, অন্য দুটি ক্লাবের মতো এখানেও একই ধরনের আলামত মিলেছে। তবে ক্লাবটিতে কেউ ছিল না। ধারণা করছি, চলমান অভিযানের কারণে তারা জুয়া বন্ধ রেখে গা ঢাকা দিয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close