জিন্নাতুল ইসলাম জিন্না, লালমনিরহাট

  ১৪ এপ্রিল, ২০১৯

দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা

হাসপাতাল আছে রোগীদের ভাগ্যে চিকিৎসা মিলছে না

লালমনিরহাটের দহগ্রামে ১০ শয্যার হাসপাতালে সপ্তাহের এক দুই দিন বাদে তালা ঝুলানো থাকে। দেশের বহুল আলোচিত সাবেক ছিটমহল দহগ্রাম-আঙ্গরপোতাবাসীর জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপহার হিসেবে হাসপাতালটি উদ্বোধন করেন। এই হাসপাতাল এখন প্রায়ই বন্ধ থাকে। ডাক্তার ও নার্সের দেখা মেলে না। হাসপাতালটির এই নাজুক পরিস্থিতির কথা স্বীকার করেছেন জেলার সিভিল সার্জন। এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন হাসপাতালটি কাজগপত্রে আছে, কিন্তু তারা চিকিৎসা পান না। জানা গেছে, ইন্দিরা-মুজিব চুক্তির মাধ্যমে বেরুবাড়ির বিনিময়ে দহগ্রাম আঙ্গরপোতা তিনবিঘার মালিকানা পায় বাংলাদেশ। ২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দহগ্রাম সফরে গিয়ে উপহারস্বরূপ দীর্ঘ বঞ্চিত দহগ্রামবাসীর স্বাস্থ্যসেবার জন্য ১০ শয্যাবিশিষ্ট দহগ্রাম হাসপাতাল উদ্বোধন করেন। সেই থেকে সরকারি কাগজ কলমে সেবা দেওয়া হলেও বাস্তবে এ হাসপাতালে ঝুলে আছে তালা। উদ্বোধনের মাত্র আট বছরের মাথায় ভেঙে পড়েছে হাসপাতালটির চিকিৎসাসেবা। সরকারিভাবে হাসপাতালে জনবল নিয়োগ থাকলেও কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী চোখে পড়ে না, হাসপাতালের মূল ফটকে ঝুলে থাকছে তালা। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হচ্ছে হাসপাতালের যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র ও ভবনগুলো। চামচিকা বাদুরসহ বিভিন্ন প্রাণির বসবাসস্থলে পরিণত হয়েছে এ হাসপাতাল। চিকিৎসক ও নার্সদের বসবাসের জন্য করা আটটি কোয়ার্টার, রোগী পরিবহনের একটি অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার না করায় অচল হয়ে আছে। পুরো হাসপাতালজুড়ে একমাত্র ওয়ার্ডবয় মিজানুর রহমান পরিবার-পরিজন নিয়ে চিকিৎসকের একটি কোয়ার্টারে থাকেন। রোগীদের থাকার বেডগুলো নিজের কোয়াটারে নিয়ে খাট হিসেবে ব্যবহার করছেন এ ওয়ার্ডবয়। স্থানীয়রা জানান, অন্তঃবিভাগ ও বহির্বিভাগে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার কথা থাকলেও কোনো কারণ বা ঘোষণা ছাড়াই কয়েক বছর ধরে অন্তঃবিভাগ বন্ধ রয়েছে। বহির্বিভাগে চিকিৎসা দিতে মাঝে মধ্যে কিছু প্যারাসিটামল ট্যাবলেট নিয়ে দুই ঘণ্টার জন্য হাসপাতাল খুলে বসেন দুই-একজন ওয়ার্ডবয় ও নার্স। কখনো চিকিৎসক আসেন। তবে নিয়মিত নন। বিশেষ করে দুপুর ১২টার পর পুরো হাসপাতালে ঝুলে তালা। দুপুরের পর থেকে পরদিন সকাল ১০টা পর্যন্ত কারো কোনো সমস্যা হলে প্রাথমিক চিকিৎসা নিতেও ছুটতে হবে পাটগ্রাম হাসপাতালে।

লালমনিরহাট সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারি তথ্য মতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের দিন থেকে দহগ্রাম হাসপাতালে অন্তঃ ও বহির্বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ হাসপাতালে মেডিকেল অফিসারের চারটি পদই পূর্ণ থাকলেও দুজন চিকিৎসক দীর্ঘ ৮ থেকে ৯ বছর ধরে অলিখিত ছুটিতে রয়েছেন। ডা. নাজমুল ইসলাম ও ডা. আহমেদ মোস্তফা নামে এ দুই চিকিৎসক খাতা কলমে এ হাসপাতালে নিয়োগপ্রাপ্ত হলেও বাস্তবে তাদের কোনো সন্ধান নেই খোদ সিভিল সার্জনের কাছেও। বাকি দুজন বেতন-ভাতা তুললেও বাস্তবে কর্মস্থলে নেই। উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার দুটি পদের একজন কর্মরত থাকলেও বাস্তবে তিনিও অনুপস্থিত। নার্সের চারটি পদের চারজনই এ হাসপাতালের সেবারত দেখিয়ে বেতন-ভাতা উত্তোলন করলেও বাস্তবে তারা একজনও নেই হাসপাতালে। তবে ১০ শয্যার হিসাব অনুযায়ী সরকারি ওষুধপত্রসহ যাবতীয় সরঞ্জাম নিয়মিতভাবে সরবরাহ করা হয় এ হাসপাতালে।

দহগ্রামের গৃহবধূ এস্মোতারা বেগম জানান, হাতের কাছে দহগ্রাম হাসপাতাল থাকলেও মা ও শিশু স্বাস্থ্যসেবাসহ যে কোনো সমস্যা হলে পাটগ্রাম হাসপাতালে যেতে হয়। এটা শুধু নামের মাত্র হাসপাতাল। মাঝে মাঝে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চিকিৎসক এসে সব রোগের একই ওষুধ দিয়ে চলে যান। এরপর মরতে বসলেও প্রাথমিক চিকিৎসা জোটে না দহগ্রামবাসীর কপালে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারটি পুনরায় সচল করতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

আঙ্গুরপোতা গ্রামের কলেজছাত্রী মারুফা আক্তার জানান, দহগ্রামবাসী দীর্ঘদিন নাগরিক সুবিধাবঞ্চিত বন্দিজীবন কাটিয়েছেন। মূল ভুখন্ডের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে উপহারস্বরূপ এ হাসপাতালটি দিয়েছেন দহগ্রামবাসীকে। কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও উদাসীনতায় মুখ থুবড়ে পড়েছে এ হাসপাতালটি। নাগরিক অধিকার স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে দ্রুত এ হাসপাতালে সেবার মান বৃদ্ধি করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

লালমনিরহাট সিভিল সার্জন ডা. কাশেম আলী জানান, বিনাছুটিতে আট থেকে ৯ বছর অনুপস্থিত থাকা দহগ্রাম হাসপাতালের দুই চিকিৎসকের বিষয়ে একাধিকবার মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে। বাকি জনবল হাসপাতালে কর্মরত রয়েছেন এবং সরকারিভাবে তাদের জন্য ওষুধপত্রসহ যাবতীয় সরঞ্জাম সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে। তবে হাসপাতালে তালা ঝুলে থাকার বিষয়টি তার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে খুব দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close