রাজবাড়ী প্রতিনিধি

  ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

রাজবাড়ীতে ৪ নারী খুন

নেপথ্যে পরকীয়া ও ম্যাগনেট ব্যবসার টাকা ভাগাভাগি

রাজবাড়ী সদর উপজেলায় ১৪ দিনের ব্যবধানে শিশুসহ ৪ নারীকে গলাকেটে হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ। এতে জানা গেছে, এই খুনগুলোর নেপথ্যে রয়েছে পরকীয়া, ম্যাগনেট ব্যবসার টাকা ভাগাভাগির বিরোধ ও পারিবারিক কলহ। এই চার হত্যার বিষয়ে গতকাল রোববার সংবাদ সম্মেলন করেছেন রাজবাড়ী পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি। তিনি জানিয়েছেন এ কথা।

পুলিশ জানায়, ১৬ আগস্ট রাতে ঘটে যাওয়া আলিপুর ইউনিয়নের বারেবাকপুর গ্রামে মধ্যবয়সী নারী হাজেরা বেগম হত্যার ঘটনায় পুত্রবধূসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন গ্রেফতার হওয়া পুত্রবধূ। সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার বলেন, আগস্ট মাসে রাজবাড়ী সদর উপজেলার পাশাপাশি তিনটি ইউনিয়ন (মুলঘর, বানীবহ ও আলীপুর) ১৪ দিনের ব্যবধানে তিন নারী ও এক শিশুকে গলাকেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এরপর থেকে ওইসব এলাকায় নানা ধরনের গুজব ছড়িয়ে পড়ে। অবশেষে আমরা হত্যাগুলোর রহস্য উদ্ঘাটন করতে পেরেছি।

তিনি বলেন, গত ১৬ আগস্ট রাতে সদর উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের বারেবাকপুর গ্রামে হাজেরা বেগম (৫০) নামের এক নারীকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের স্বামী তমিজউদ্দিন বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামি করে রাজবাড়ী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এক মাস ধরে এই হত্যা মামলা তদন্ত শুরু করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। অবশেষে তদন্তে আমরা জানতে পারি ওই গৃহবধূর ছেলে হাফিজুল প্রবাসে থাকেন। হাফিজুলের স্ত্রী স্বপ্না বেগমকে (২৫) অনেক ভালোবাসতেন শাশুড়ি হাজেরা বেগম। এ কারণে হাজেরা মাঝেমধ্যেই ছেলের বউয়ের কাছে ঘুমাতেন। কিন্তু, স্বপ্নার পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল পাশের কমড়পাড়া গ্রামের সোহেল মিয়া নামের এক যুবকের সঙ্গে। ঘটনার রাতে সোহেল তার সহযোগী কবির হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে স্বপ্নার সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত হতে আসে। এ সময় স্বপ্না ও তার চার বছর বয়সী ছেলে সানী এবং শাশুড়ি হাজেরা এক সঙ্গে শুয়ে ছিলেন। হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলে ছেলে বউয়ের অনৈতিক কর্মকান্ড দেখে ফেলেন হাজেরা। আর এতেই সোহেল, কবির ও স্বপ্না মিলে গলাকেটে হাজেরাকে হত্যা করে। শুধু তাই নয়, কেউ যাতে স্বপ্নাকে সন্দেহ করতে না পারে এ জন্য সোহেল স্বপ্নার দুই হাত ও পিঠে কোপ দিয়ে জখম করে।

পুলিশ সুপার বলেন, হত্যাকান্ডের পর দিন সকালে হাজেরার মরদেহ উদ্ধারের পাশাপাশি তার ছেলের বউ স্বপ্নাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়। ওই সময় মিথ্যা নাটক সাজিয়ে স্বপ্না জানান, ওই দিন রাতে খাবার খেয়ে তিনি তার ছেলে ও শাশুড়িসহ একই ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। রাত সাড়ে ১১টার দিকে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলে তিনি দেখতে পান ঘরের আলো নেভানো এবং তার শাশুড়ির শরীরে রক্ত। এ সময় তিনি চিৎকার দিলে শ্বশুরসহ অন্যরা ছুটে এসে দেখেন হাজেরা বেগমের গলাকাটা লাশটি খাটের ওপর পড়ে আছে। কিন্তু, গত ৭ সেপ্টেম্বর হত্যার মূল হোতা সোহেল ও তার সহযোগী কবিরকে গ্রেফতার এবং হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধার করা হয়। পরে শনিবার নিজের শাশুড়িকে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন স্বপ্না।

এর আগে ৭ আগস্ট রাতে সদর উপজেলার বানীবহ ইউনিয়নের আটদাপুনিয়া গ্রামে নিজ বসত ঘরে দুই সন্তানের জননী গৃহবধূ আদুরী আক্তার লিমাকে (২৫) গলাকেটে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার পর দিন গত ৮ আগস্ট নিহতের স্বামী রড মিস্ত্রি মিজানুর রহমান বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামি করে রাজবাড়ী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ হত্যার বিষয়ে পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি বলেন, পিলার থেকে ম্যাগনেট সংগ্রহ চক্রের সদস্য ছিলেন আদুরী বেগম। তার আপন দুই দেবর এবং এক ফুফাতো দেবরও এই চক্রের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এই ম্যাগনেট ব্যবসার টাকা ভাগাভাগি নিয়ে বিরোধের কারণেই তিন দেবর মিলে গলাকেটে হত্যা করে আদুরীকে। আদুরীর তিন দেবর জেল হাজতে রয়েছেন। তারা পুলিশের কাছে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন।

গত ২ আগস্ট রাতে সদর উপজেলার মূলঘর ইউনিয়নের পশ্চিম মূলঘর গ্রামে দাদি শাহিদা বেগম (৪৫) ও তার নাতনী লামিয়াকে (৭) গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। জোড়া হত্যাকান্ডের ঘটনায় ৩ আগস্ট নিহত শিশু লামিয়ার বাবা গার্মেন্টেকর্মী শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে রাজবাড়ী সদর থানায় অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করেন। এ জোড়া হত্যাকান্ডের বিষয়ে পুলিশ সুপার বলেন, দাদি-নাতনি হত্যার ঘটনায় আসামি গ্রেফতার রয়েছে। এ হত্যার রহস্য ইতোমধ্যে উদ্ঘাটন করেছি। পরে জানাতে পারব।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাকিব খান, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (পাংশা সার্কেল) মো. ফজলুল করিম, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. কামাল হোসেন ভূইয়া ও পরিদর্শক মো. জিয়ারুল ইসলাম প্রমুখ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close