সম্পাদকীয়

  ১৩ মার্চ, ২০২০

বস্তির অগ্নিকাণ্ড রোধে চাই ইতিবাচক সিদ্ধান্ত

রাজধানীর মিরপুরের রূপনগর আবাসিক এলাকার ঝিলপাড় বস্তির কয়েকশ ঘর আগুনে পুড়েছে। গত বুধবার সকাল ৯টার দিকে অগ্নিকান্ডের শুরু। বস্তিতে ১০ হাজার ঘরে ৪০ হাজার কক্ষ ছিল। এর আগে রূপনগরে চলতি বছরের জানুয়ারি এবং গত আগস্টে দুই দফায় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এতে বস্তির দরিদ্র জনগোষ্ঠী ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এবারের ক্ষয়ক্ষতিও কম নয়।

পরিমাণ এখনো জানা না গেলেও এ কথা সত্য যে, যাদের ঘর পুড়েছে তারা সর্বস্ব হারিয়েছে। আগুন লাগার কারণ অনুসন্ধানে তৈরি হয়েছে তদন্ত কমিটি। ক্ষতি ও ক্ষতিগ্রস্তদের দেখতে এসে স্থানীয় সংসদ সদস্য ইলিয়াস মোল্লা বলেছেন, অধিকাংশ ঘরই আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বস্তিবাসীদের পুনর্বাসন না হওয়া পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করে তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হবে। এজন্য যত আশ্রয় কেন্দ্রের প্রয়োজন হবে, তা গড়ে তোলা হবে। এ ছাড়া তাদের স্থিতি না আসা পর্যন্ত যত খাবার লাগবে তারও ব্যবস্থা করা হবে।

এদিকে অভিযোগ উঠেছে, তিন মাস আগে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ফ্ল্যাট প্রকল্পের ব্যানারে টানানো এবং গত বছরের ১৬ আগস্ট ওই বস্তির পাশে চলন্তিকা বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের পরই বস্তিবাসীর ধারণা জন্মায়, যেকোনো সময় রূপনগর বস্তিতেও আগুন লাগতে পারে। তাদের এই কানাঘুষা আজ অভিযোগ আকারে উঠে এসেছে। তাদের বর্তমান ধারণা জায়গাটি খালি করতেই এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে।

বস্তিবাসীর একজন বলেছেন, রূপনগর থানা পুলিশের নেতৃত্বে তিন মাস আগে ওই বস্তিতে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞার দুটি ব্যানার টানিয়ে দেয় জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। এরপর তাদের বস্তিতে ছোট পরিসরে একবার আগুন লাগে। তখন তারা সেই অগ্নিকান্ডের ঘটনাকে তেমন একটা আমলে নেয়নি। কিন্তু চলন্তিকা বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের পর তারা নিশ্চিত হয়েছিলেন যে, তাদের বস্তিতেও অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটবে। অল্প দিনের মাথাতেই তাদের সন্দেহ বাস্তবে রূপ নিল।

ঘটনার পর বস্তি পরিদর্শন করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন, এ জায়গার মালিকের সঙ্গে দ্রুত আলাপ করা হবে। পুরো জায়গার ম্যাপ প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী কয়েকবার বলেছেন এবং তিনিও বিশ্বাস করেন, এর একটা স্থায়ী সমাধান অবশ্যই আসবে। আমরাও বিশ্বাস করতে চাই এর একটা স্থায়ী সমাধান হোক। বারবার বস্তিতে আগুন লাগবে আর দরিদ্র মানুষ তাদের সর্বস্ব হারাবে, এটা মেনে নেওয়া যায় না। প্রতিবারই অগ্নিকান্ডের পর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু কমিটির পক্ষ থেকে তেমন কোনো ইতিবাচক রিপোর্ট আমাদের নজরে আসেনি।

আমরা আশা করতেই পারি, রুটিনমাফিক ফি বছর এ দুর্যোগ আর নেমে আসবে না। ক্ষতিগ্রস্ত হবে না দীনহীন খেটে খাওয়া মানুষের অস্তিত্ব। তাদের মাথার ওপর আকাশের পরিবর্তে স্থান পাবে আশঙ্কামুক্ত একটি ছাদ।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সম্পাদকীয়,বস্তি,অগ্নিকাণ্ড
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close