২৪ বছর পর নিখোঁজ মেয়ের সন্ধান
২৪ বছর আগে মেয়েকে হারানোর পর তার খোঁজে হন্যে হয়ে গিয়েছিলেন পিতা ওয়াং মিংকিং। কোনো একদিন পথে মেয়ের সঙ্গে দেখা হয়ে যেতে পারে এই আশায় বেছে নিয়েছিলেন ট্যাক্সিচালকের পেশাও। তিনি স্বপ্ন দেখতেন যে, চেংডু শহরে গাড়ি চালাতে চালাতে হয়তো একদিন তিনি তার হারিয়ে যাওয়া মেয়েকেই যাত্রী হিসেবে তুলে নিয়েছেন।
কিন্তু এ বছরের শুরুর দিকে কন্যার সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়ে যায়। না, রাস্তায় গাড়ি চালানোর সূত্রে নয়, তাদের মধ্যে যোগাযোগ হয় ইন্টারনেটের কল্যাণে। অনলাইনে পিতার একটি পোস্ট দেখে মেয়েটি নিজেই তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। গতকাল মঙ্গলবার তারা আবার একত্রিত হয়েছেন। ওয়াং তার মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলেছেন- ‘বাবা তোমাকে ভালোবাসে।’
অবিশ্বাস্য এই খবরটি চীনের সংবাদ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে এই ঘটনায় আনন্দ উৎসবও করেছেন। ওয়াং এর কন্যা কিফেং হারিয়ে যায় যখন তার বয়স ছিল মাত্র তিন বছর।
ওয়াং সংবাদ মাধ্যমে জানান, তিনি এবং তার স্ত্রী লিও দেংগিং রাস্তায় ফল বিক্রি করতেন। একদিন মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে স্বামী-স্ত্রী রাস্তার পাশে একটি স্টল বসিয়ে ফল বিক্রি করছিলেন। একজন ক্রেতার কাছে ফল বিক্রি করা শেষে তিনি হঠাৎ দেখলেন যে, তাদের মেয়ে কিফেং তাদের সঙ্গে নেই। মেয়ের খোঁজে তারা তাদের শহরে ও আশপাশের এলাকায় বছরের পর বছর ঘুরে বেরিয়েছেন। পত্রপত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছেন। পোস্ট দিয়েছেন অনলাইনে। এই দম্পতি তাদের মেয়েকে খুঁজে পাবেন এই আশায় তারা কখনো চেংডু শহর ছেড়ে যাননি। তারা ভেবেছিলেন কিফেং যদি রাস্তা খুঁজে বাড়িতে ফিরে আসে। কিন্তু সেরকমটা হয়নি।
কিফেং-এর কোনো ছবি ছিল না এই পরিবারটির কাছে। সেকারণে পিতা কিফেং লিফেলটে তার অন্য মেয়ের ছবি ব্যবহার করতেন। কারণ তাদের চেহারায় মিল ছিল। তার এই অভিনব কৌশল চীনা সংবাদ মাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘হয়তো একদিন আমার মেয়ে আমার গাড়িতেই উঠবে।’
বড় হয়ে যাওয়ার পর কিফেং দেখতে কেমন তার একটা ছবি এঁকে দেন পুলিশ বিভাগের একজন শিল্পী। সেই ছবিটি ছড়িয়ে দেওয়া হয় অনলাইনে। তখন চীনেরই হাজার মাইল দূরের একটি জায়গায় কাং ইং নামের এক নারী এই ছবিটি দেখতে পান। তার সঙ্গে ছবিটির এত মিল দেখতে পেয়ে তিনি চমকে যান।
কাং ইং নামের ওই নারী তখন তার ওয়াং ও তার স্ত্রীর কাছে নিজের একটি ছবি পাঠিয়ে দেন। তিনি ওয়াং এর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তার সঙ্গে কথা বলে দেখতে পান ওয়াং এমন কিছু চিহ্নের কথা বলছেন যার সঙ্গে মিলে যায়। তারপর খুব দ্রুত ডিএনএ পরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এবার ফল হলো ইতিবাচক— ওয়াং শেষ পর্যন্ত ২৪ বছর আগে হারিয়ে ফেলা তার মেয়েকে খুঁজে পেলেন।
সোমবার তারা একটি ভয়েস ম্যাসেঞ্জার অ্যাপের মাধ্যমে কথা বলেন প্রথমবারের মতো। ‘এখন থেকে বাবা তোমার সঙ্গে। কোনো কিছু নিয়ে আর তোমাকে চিন্তা করতে হবে না। বাবা তোমাকে সাহায্য করবে,’ বলেন, ওয়াং। গতকাল মঙ্গলবার তারা সত্যিকার অর্থেই মিলিত হলেন।
‘গত ২৪ বছর ধরে আমি কি ধরনের আশা, হতাশা আর কষ্টের মধ্য দিয়ে গেছি সেটা আমি আপনাদের বলতে পারব না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমরা একে অপরকে খুঁজে পেয়েছি, বলেন ওয়াং।
পিডিএসও/তাজ