নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৬ আগস্ট, ২০১৯

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে চলতে হবে নিজের আয়ে : অর্থমন্ত্রী

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক, সোনালী, রূপালী, জনতা ও অগ্রণী ব্যাংককে সরকারের পক্ষ থেকে নতুন করে আর কোনো মূলধন দেওয়া হবে না। তাদের মুনাফা করেই বেতন নিতে হবে। নিজের আয়ে চলতে হবে। আর মুনাফার সর্বনিম্ন হার হতে হবে ১৫ শতাংশ। এ জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে নতুন নিয়োগ পাওয়া ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) তাদের কর্মপরিকল্পনা আগামী রোববার অর্থ মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। আগে প্রতি অর্থবছরে ঘাটতি পূরণের জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত এ চার ব্যাংককে অর্থ দিত সরকার।

গতকাল রোববার শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অর্থমন্ত্রী ওই চার ব্যাংকের চেয়ারম্যান, এমডি ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠকে এই বার্তা দেন। বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বৈঠকে তাদের বলে দেওয়া হয়েছে, এখন থেকে সরকারি ব্যাংকগুলোতে আর কোনো ধরনের রি-ফিন্যান্সিং করা হবে না। তাদের নিজেদেরই আয় করতে হবে এবং সরকারকে ট্যাক্সও দিতে হবে।

এই ব্যাংকগুলোকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে কর্মপরিকল্পনা তৈরির পরামর্শ দিয়েছেন জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, তাদের বলে দেওয়া হয়েছে, এ বিষয়ে একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে। ওই কর্মপরিকল্পনার ওপর আগামী রোববার আবার তাদের নিয়ে বৈঠকে বসা হবে। আগামী বৈঠকে আরো বিস্তারিত আলোচনা হবে। তবে অর্থ না দিলেও পরামর্শ দেওয়াসহ অন্যান্য সহযোগিতা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি ব্যাংক বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ২৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের যে সম্পদ আছে, তার সুষ্ঠু ব্যবহার করে অন্তত ১৫ শতাংশ লাভ করুক, এটা চায় সরকার। এ চার ব্যাংককে অর্থ আয় করতে হবে। এ দেশের মানুষকে দেখাশোনা করেই তাদের বেতন নিতে হবে। তিনি জানান, চলতি অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংকগুলোর জন্য কোনো বরাদ্দ নেই।

এই ব্যাংকগুলোর শীর্ষ পর্যায়ে নতুন নিয়োগের বিষয়ে মুস্তফা কামাল বলেন, নতুন টপ ম্যানেজমেন্ট সুস্পষ্টভাবে পারদর্শী। তারা সবাই যদি অভিজ্ঞতার আলোকে ও দেশের চাহিদার নিরীখে এবং আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে ব্যাংক পরিচালনা করেন, তাহলে অসাধারণ কিছু প্রত্যাশা করা যায়।

ব্যাংকগুলোর মন্দ ঋণ (এনপিএল) কমানোর প্রতিশ্রুতির বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, মন্দ ঋণ এখনো কমাতে পারিনি। কারণ আমরা এক্সিটপ্ল্যান বাস্তবায়ন করতে পারিনি। তবে শিগগির এটির সুরাহা হবে বলে আমার বিশ্বাস।

প্রসঙ্গত, গত ২১ মে হাইকোর্টে ঋণখেলাপিদের বিশেষ সুবিধার ওপর স্থিতাবস্থা দেয়। যদিও পরে আবার নতুন ঋণ না নেওয়ার শর্তে স্থিতাবস্থা তুলে নেয়।

বিশ্বের সাম্প্রতিক প্রবণতা দেখে মন্দার শঙ্কা জানিয়ে তাতে বাংলাদেশের রফতানি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কাও প্রকাশ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, মন্দা তৈরি হলে বিলাসী পণ্যের বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কিন্তু আমরা বেশির ভাগই মৌলিক পণ্য রফতানি করে থাকি। তাই আমাদের রফতানি কমার সম্ভাবনা নেই। একইভাবে আমাদের পুঁজিবাজারও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ আমাদের পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ তেমন নেই।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে কার্যরত অর্ধ শতাধিক ব্যাংকের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক রয়েছে পাঁচটি। তার মধ্যে সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী বাদে রয়েছে বেসিক ব্যাংক। খেলাপি ঋণসহ নানা কারণে মূলধন ঘাটতি হওয়ায় তা পূরণে রাষ্ট্রায়ত্ত এই বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো প্রতি বছরই সরকারের কাছে মূলধন ঘাটতি পূরণে অর্থ চায় এবং সরকারও তাদের চাহিদা মিটিয়ে আসছে।

অর্থ বিভাগের এক তথ্য অনুযায়ী, ২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছর পর্যন্ত মূলধন পুনর্ভরণ, সুদ ও ভর্তুকিসহ নানা উপায়ে সরকার এই ব্যাংকগুলোকে ১২ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা দিয়েছে। তবে চলতি অর্থবছরের বাজেটে মূল ধন ঘাটতি পূরণে ব্যাংকগুলোর জন্য কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close