নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৮ মার্চ, ২০২৪

সন্ত্রাসী হামলায় আহত ইমরানের পরিবার নিরাপত্তাহীন

টাঙ্গাইল সদরের পোড়াবাড়ী মৌজায় পৈতৃক সম্পত্তিতে থাকাবস্থায় সশস্ত্র সন্ত্রাসী হামলায় আহত হন মো. ইমরান হোসেন (৩০)। তার বাবা মো. ইউসুব তালুকদার পুলিশের সাবেক উপপরিদর্শক ছিলেন। সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তার মৃত্যুর পরই তার পরিবারের এই সম্পত্তির প্রতি কুনজর পড়ে স্থানীয় প্রভাবশালী এক রাজনীতিবিদ পরিবারের। সম্পত্তি দখল নিয়ে সন্ত্রাসী হামলার শিকার ইমরানের পরিবার এখন নিরাপত্তাহীনতায় দিনাতিপাত করছেন। এ হামলার ঘটনার কয়েকদিন পার হলেও গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত অভিযোগ নামাটি আমলে নেয়নি টাঙ্গাইল সদর থানার কর্মকর্তারা। এ কারণে পরিবারটি ভুগছে নিরাপত্তাহীনতায়।

ঘটনা সূত্রে জানা যায়, গত ৫ মার্চ এ ঘটনায় টাঙ্গাইল সদর থানায় জিডির জন্য আর্জি নিয়ে যান আহত ইমরানের পরিবার। গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত থানা কর্তৃপক্ষ সেটি আমলে নেয়নি বলে অভিযোগ এ পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়। জিডি কিংবা মামলা না হওয়ার কারণে হামলাকারীরা বুক ফুলিয়ে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সদর থানা কর্তৃপক্ষ বলছে, পোড়াবাড়ী মৌজায় পৈতৃক জমিতে অবস্থানকালে ইমরান নামে এক ব্যক্তির ওপরে হামলার ঘটনা ঘটেছে এমন একটি অভিযোগনামা আমরা পেয়েছি। কিন্তু সেখানে ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটি সঠিক না থাকায় কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। অভিযোগকারীরা বলছেন, গত ২ মার্চ সন্ত্রাসীরা ইমরানের ওপর হামলা চালায়। এতে ইমরানের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে থানায় অভিযোগ জানাতে বিলম্ব হয়। গত ৫ মার্চ থানায় একটি অভিযোগ নামা দিয়ে আসি, আজ (গতকাল) তিন দিন হলেও সেটি জিডি কিংবা মামলা হিসেবে রুজু করা হয়নি। এটা দুঃখজনক

হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় অভিযোগকারী পরিবারের পক্ষ থেকে।

স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টাঙ্গাইল সদর থানাধীন চাড়াবাড়ী বাজারের সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফার্ম (এসডিএস) সংলগ্ন পোড়াবাড়ী মৌজায় বাদীর মা ফিরোজা বেগমের ক্রয় করা ৮ শতাংশ জমি দখলের জন্য অনেক দিন ধরেই পাঁয়তারা করে আসছে জাতীয় পার্টির নেতা মোজাম্মেল হক ও তার সহযোগীরা। এই নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তার পালিত গুণ্ডা ও সন্ত্রাসী বাহিনীর দাপটে সেখানের বাসিন্দারা অতিষ্ঠ। গত ২ মার্চ পৈতৃক ওই সম্পত্তিতে অবস্থানকালে দুপুরের দিকে মোজাম্মেল হকের ছেলে মুহিত (৩০), আনু বেপারীর ছেলে হায়দার (৩২), বাবুলের ছেলে বাহার (২৭), অজ্ঞাত অমি, সবুজ ও মিজান গংরা ইমরানের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায়। অভিযোগ নামায় ইমরান উল্লেখ করেন, মোজাম্মেলের ছেলে মুহিত তার বুকে পিস্তল ঠেকিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে খুন করার হুমকি দেয়। তার ইন্ধনে মুহিতের সঙ্গীদের একজন চাপাতি দিয়ে কোপ চালিয়ে দেয়। এতে আমার ডান হাতের কব্জি ও পিঠে গুরুতর আহত হয় এবং একটি আঙুলের অংশ শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তিনি বলেন, যখন গুরুতর আহত হয়ে মাটিয়ে লুটিয়ে পড়ি। এ সময় দম্ভভরে মুহিত বলতে থাকেন, শালা বুঝতে পারছিস তো টাঙ্গাইল জেলায় আমাদের চাইতে বেশি শক্তিশালী কেউ নেই। যাওয়ার সময় আমার সঙ্গে থাকা স্যামসংায়ের একটি দামি মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে যায়, যার মূল্য ৯৫ হাজার টাকা।

অভিযোগের বিষয়ে কথা বাদীর মা ফিরোজা বেগম ও তার ছেলে ইসতিয়াকের সঙ্গে। প্রতিদিনের সংবাদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, আমার স্বামী পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর ছিলেন। তিনি বেঁচে থাকতে ক্ষমতাধর মোজাম্মেল-ও আমার কেনা এই জমির দিকে হাত বাড়াতে পারেনি।

কিছুকাল আগে স্বামী মারা যাওয়ার পর জাতীয় পার্টির ওই ভূমিদস্যু জমিটি দখলের পাঁয়তারা শুরু করে। শুধু আমার সম্পত্তি না পাশে থাকা এসডিএস প্রকল্পের জমিও জোরপূর্বক দখল করার চেষ্টা চালিয়ে আসছে। এ নিয়ে কয়েক দফা হামলার ঘটনা ঘটেছে। মোজাম্মেল একটা খারাপ ও ভয়ংকর মানুষ। এলাকায় তাকে সবাই খারাপ মানুষ হিসেবে জানে। নেপথ্যে থেকে মোজাম্মেল তার ছেলে মুহিত ও ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে হামলা চালিয়ে আমার ছেলের ওপরে। আমি থানায় গিয়েছি কিন্তু খুব বেশি সাপোর্ট পারছি না। আমি ন্যায়বিচার চাই।

অভিযোগ আমলে না নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে টাঙ্গাইল সদর থানার ওসি মো. লোকমান হোসেন প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, গত ৫ মার্চ সন্ত্রাসীদের দ্বারা আমক্রণের শিকার হওয়া এমন একটি অভিযোগ আমরা পাই। সঙ্গে সঙ্গে অভিযোগ নামায় থাকা নং ধরে খোঁজ নিয়ে নিলে সেটি রাজশালী অঞ্চলের কোনো এক ব্যক্তির কাছে চলে যায়। তাই অভিযোগ নামাটি আমলে নেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে অভিযোগ করা ব্যক্তিদের আমার সঙ্গে দেখা করার কথা থাকলেও বিকেল ৪টা পর্যন্ত কেউ যোগাযোগ করেনি। তিনি বলেন, তাদের আসতে বলেন আমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব। অন্য এক প্রসঙ্গে বলেন, ঘটনাটি তেমন কিছুই না, ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছেন কেউ কেউ বলেও জানান এই আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা। অভিযোগ কারীর ভাই ইসতিয়াক জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় সদর থানা ওসির সঙ্গে আমরা সাক্ষাৎ করেছি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close