কবি সুফিয়া কামাল শুধু কবি নন, তিনি একাধারে ছিলেন সাহিত্যিক ও রাজনীতিবিদ। তিনি নারী আন্দোলনে উজ্জ্বল ভূমিকা রেখেছেন। তিনি সারা জীবন অতিবাহিত করেছেন সাধারণ মানুষের কল্যাণে। কাব্যপ্রতিভা ও কর্মগুণে আমাদের অন্তরে বেঁচে থাকবেন তিনি। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে কবি সুফিয়া কামালের ১৯তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ‘বাংলার সমাজ ও নারী জাগরণে কবি সুফিয়া কামাল’ শীর্ষক সেমিনারে এ কথা বলেন বক্তারা। সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ। আলোচক ছিলেন বাংলাদেশে মহিলা পরিষদের সভানেত্রী আয়েশা খানম। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, লেখক ও বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম।

আলোচনায় কবির মেয়ে অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, কবি সুফিয়া কামালের জীবনের বিস্তার যতটা বড় তা সংক্ষিপ্ত আকারে বলে শেষ করা যাবে না। তিনি কাজ করতেন জাতি, ধর্ম, বর্ণ গোত্র নির্বিশেষে সব সাধারণ মানুষের জন্য। ১৯৩৮ সালে প্রকাশিত হয় কবির সাঁঝের মায়া কাব্য গ্রন্থটি। এর ভূমিকা লিখেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এটি পড়ে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। এর মাধ্যমেই সুফিয়ার কবি খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৪৬ সালে কলকাতায় যখন হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা বাঁধে, তখন দাঙ্গাপীড়িতদের সাহায্যের ক্ষেত্রে সুফিয়া সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।

ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ১৯৫৬ সালে শিশুদের সংগঠন কচিকাঁচার মেলা প্রতিষ্ঠা করেন কবি সুফিয়া কামাল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রথম মহিলা হোস্টেলকে ‘রোকেয়া হল’ নামকরণের দাবি জানান তিনি। ১৯৬১ সালে তিনি ছায়ানটের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯৬৯ সালে মহিলা সংগ্রাম কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন, গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেন, পাকিস্তান সরকার কর্তৃক ইতিপূর্বে প্রদত্ত তমঘা-ই-ইমতিয়াজ পদক বর্জন করেন। ১৯৭০ সালে মহিলা পরিষদ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭১ সালের মার্চে অসহযোগ আন্দোলনে নারীদের মিছিলে নেতৃত্ব দেন। আন্দোলনে এই কবি সব সময়ই ছিলেন উজ্জ্বল মুখ।

সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে নারীজাগরণ এবং সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে এই সংগ্রামী নারী উজ্জ্বল ভূমিকা রেখে গেছেন। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে শরিক হয়েছেন, কার্ফিউ উপেক্ষা করে নীরব শোভাযাত্রা বের করেন তিনি। মুক্তবুদ্ধির পক্ষে এবং সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের বিপক্ষে আমৃত্যু তিনি সংগ্রাম করেছেন।

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, সাহসী এ নারী শুধু আজীবন অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছেন তা কিন্তু নয়, তিনি নারীদের দেখিয়েছেন কীভাবে নিজের অধিকার আদায় করে নিতে হয়। সুফিয়া কামালের প্রতিষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ’ নারী অধিকার আদায়ের এক অনন্য প্রতিষ্ঠান। তার কাব্যপ্রতিভা ও কর্মের গুণে তিনি আমাদের মাঝে চিরকাল বেঁচে থাকবেন।

"